জেমস বন্ড-এর একটি ছবিতে বরফের তৈরি একটি বিশাল অট্টালিকা দেখা গিয়েছিল৷ তবে শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবেও বরফ ও তুষার দিয়ে তৈরি হোটেলে রাত কাটানো সম্ভব৷ সুইডেনের এমন একটি হোটেল অসংখ্য পর্যটক আকর্ষণ করে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
সুইডেনে সুমেরু বৃত্তের ২০০ কিলোমিটার উত্তরে শীতকালের দৃশ্য৷ জমে যাওয়া টর্নে নদীর উপর দিয়ে নিজের গ্রাম ইয়ুকাসইয়েরভি-র দিকে হেঁটে চলেছেন আনা ও্যলুন্ড৷ বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম ‘আইস হোটেল'-টি এখানেই অবস্থিত৷
ফটোগ্রাফার হিসেবে এই গ্রামের সঙ্গে আনার একটা বিশেষ সম্পর্কে রয়েছে৷ অনেক বছর ধরে তিনি এখানে সৃজনশীল কাজে অন্যদের সাহায্য করেছেন, নিজেও শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন৷ ২০১৩ সালে তিনি এই হোটেলের ছবির একটি সংকলন প্রকাশ করেন৷ আনা বলেন, ‘‘একদিকে এখানকার মানুষের খোলামেলা মন, তাদের উষ্ণতা – অন্যদিকে তুষার ও বরফভরা পরিবেশ আমার জন্য জাদু সৃষ্টি করে৷ আমি তাই এ বিষয়ে একটি বই তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ বাকি বিশ্বকে এই জায়গাটি সম্পর্কে আমার অনুভূতি দেখাতে চেয়েছিলাম৷''
হোটেলের ৬০টি বরফ কামরার প্রত্যেকটি আলাদা করে ডিজাইন করেছেন শিল্পীরা৷ লাইট-ডিজাইনার-রাও হাত লাগিয়েছেন৷ বিছানার তোশক ও হরিণের চামড়া কম্বল ছাড়া বাকি সব কিছুই বরফ দিয়ে তৈরি৷
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হোটেলটি চালু থাকে৷ প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ অতিথি সেখানে রাত কাটান৷ কেউ বলেন, ‘‘অসাধারণ স্থাপত্য! ঠান্ডা সত্ত্বেও সুন্দর৷ আমার বেশ ভালো লাগে৷'' তাইওয়ানের পর্যটক দলের এক সদস্য বললেন, ‘‘সত্যি ‘কুল'৷ অসাধারণ৷ এটার আমাদের প্রথম বার৷ জানেন তো, তাইওয়ানে তুষার নেই৷ তাই আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর৷''
প্রায় ১০০ জন কর্মী প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নতুন করে ‘আইস হোটেল' তৈরি করেন৷ তার জন্য প্রায় ৫,০০০ টন তুষার ও বরফ লাগে৷
প্রতি মরসুমে গোটা বিশ্ব থেকে ১০০-রও বেশি ডিজাইনের প্রস্তাব আসে৷ প্রত্যেকেই একটি করে ঘরের ডিজাইন করতে চান৷ ২০১২ সালে আনা-ও এমন সুযোগ পেয়েছিলেন৷ আনা বলেন, ‘‘এটা সত্যি হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ৷ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নয়, সাধারণত ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাটতে হয়৷ অর্থাৎ দিনের পর দিন প্রায় একটানা কাজ করে নির্দিষ্ট ঘরের কাজ শেষ করলে শিল্পী হিসেবেও দায়িত্ব শেষ হবে৷''
১৯৮৯ সালে ‘আইস হোটেল'-এর কাহিনি শুরু হয়৷ বরফ-শিল্পীদের এক ওয়ার্কশপ-এ একটি ইগলু তৈরি করা হয়, যা বার বা পানশালা হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছিল৷ সারা রাত পার্টির পর কয়েকজন অতিথি তার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ তারপর সাফল্যের কাহিনি শুরু হয়৷
জার্মানির কয়েকটি অভিজাত হোটেল
জার্মানিতে এমন অনেক হোটেল আছে যেগুলোর ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ৷ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিরা সেসব জায়গায় অতিথি হিসেবে ছিলেন৷ এমনই কয়েকটি হোটেলের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Hotel Adlon
আডলন, বার্লিন
জার্মানির বিখ্যাত হোটেলের একটি আডলন৷ বার্লিনের ঐতিহাসিক ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের কাছে অবস্থিত হোটেলটি ১৯০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল৷ এরপর ১৯৯৭ সালে হোটেলটি পুনরায় চালু হয়৷ ২০০২ সালে মাইকেল জ্যাকসন এই হোটেলে উঠেছিলেন৷
ছবি: Hotel Adlon
ফিয়ার ইয়ারেসসাইটেন, হামবুর্গ
হোটেল ঘেঁষে আশেপাশে অন্যান্য ভবন থাকায় হয়তো মনে হতে পারে, এটি তেমন অভিজাত কোনো হোটেল নয়৷ কিন্তু ভেতরে গেলে স্পা আর জিম করার যে স্থান সেটি বেশি জাঁকজমকপূর্ণ৷ হোটেল রুম থেকে শহরের যে দৃশ্য দেখা যায় সেটাও বেশ চমৎকার৷
ছবি: Fairmont Hotel Vier Jahreszeiten
এলিফান্ট, ভাইমার
ভাইমার শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এলিফান্ট বা এলিফেন্ট হোটেলের স্থাপনকাল ১৬৯৬ সাল৷ শুরুটা ছোট করে হলেও পরবর্তীতে এটি অভিজাত হোটেলে পরিণত হয়৷ ইয়োহান ভল্ফগাঙ ফন গ্যোটে আর ফ্রিডরিশ শিলার এই হোটেলের নিয়মিত অতিথি ছিলেন৷ তবে হোটেলের নাম কেন ‘এলিফেন্ট’ সেটা এখন আর কেউ বলতে পারেন না৷
ছবি: Hotel Elephant
টাশেনব্যার্গপালাইস, ড্রেসডেন
১৮ শতকে জার্মানির সাক্সোনি রাজ্যের ইলেক্টর আউগুস্টুস দ্বিতীয় দ্য স্ট্রং-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক নারীর বাসস্থান হিসেবে এই ভবনটি নির্মিত হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হওয়া হোটেলটি ১৯৯৫ সালে পুনরায় চালু হয়৷
ছবি: Taschenbergpalais
গ্র্যান্ডহোটেল পেটার্সব্যার্গ, বন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৎকালীন জার্মানির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণে গঠিত ‘অ্যালাইড হাই কমিশন’-এর কার্যালয় হিসেবে এই হোটেলটি ব্যবহৃত হয়েছিল৷ এখনও সরকারি কর্মকর্তাদের অতিথিশালা হিসেবে হোটেলটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ মাঝেমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় হোটেলটিতে৷
ছবি: Grandhotel Petersberg
শ্লস বেনসব্যার্গ, ব্যার্গিশ গ্লাডবাখ
বারোক সময়কালের দেয়ালচিত্র আর প্রতিমূর্তির দেখা পাওয়া যায় এই হোটেলে৷ ১৭০৩ সালে নির্মিত ভবনটি শুরুতে ছিল সামরিক হাসপাতাল ও ব্যারাক৷ পরে এটিকে হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়৷
ছবি: Schloss Bensberg
ব্রাইডেনবাখার হোফ, ড্যুসেলডর্ফ
২০০ বছরের পুরনো এই হোটেলে রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার থেকে শুরু করে বাভারিয়ার ডিউক মাক্সিমিলিয়ান ইয়োজেফ অতিথি হিসেবে থেকেছেন৷ এখনও হোটেলটিতে রাজাদের থাকার জন্য স্যুট রয়েছে৷
ছবি: Breidenbacher Hof
ব্রেনার্স পার্ক-হোটেল, বাডেন-বাডেন
অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে থাকতে চাইলে যেতে হবে এই হোটেলে৷ ১৮৩৪ সালে নির্মিত হোটেলটি বর্তমানে স্পা-র জন্য বিখ্যাত৷
ছবি: Brenners Park-Hotel & Spa
কলম্বি, ফ্রাইবুর্গ
অভিজাত কলম্বি পরিবারের নামে এই হোটেলের রুম থেকে পুরনো ফ্রাইবুর্গ শহর দেখা যায়৷ আর লবি ও সিড়িতে আছে ওয়াইনের এক বিশাল সংগ্রহ৷ কতটা বিশাল জানেন? প্রায় ৩০ হাজার বোতল ওয়াইন আছে সেখানে৷
ছবি: Hotel Colombi
বায়ারিশার হোফ, মিউনিখ
১৮৪১ সালে বাভারিয়ার প্রথম লুডভিশ রাজকীয় অতিথিশালা হিসেবে এই ভবন নির্মাণ করেছিলেন৷ বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হোটেল যেখানে ৩৪০টি অভিজাত রুম রয়েছে৷ আর আছে ৬৫টি স্যুট৷
ছবি: Bayerischer Hof
10 ছবি1 | 10
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই এই উদ্যোগের নকল করছে৷ যেমন নরওয়ের উত্তরে ‘সোরিসনিভা ইগলু হোটেল' চলতি মরসুমে এই নিয়ে ১৭ বার তৈরি করা হলো৷ এর থেকে আরও কিছুকাল আগে তৈরি হয়েছিল ফিনল্যান্ডের ‘লাইনিয়ো স্নো ভিলেজ'৷ সেখানে বরফের তৈরি একটি রেস্তোরাঁও রয়েছে৷
শুধু সুমেরু অঞ্চলে নয়, আল্পস ও পিরেনিস পর্বতেও এমন শীতল হোটেল রয়েছে৷ যেমন অ্যান্ডোরা-র ‘গ্রান্ডভালিরা স্নো হোটেল' অতিথিদের জন্য বরফের মধ্যে হোয়ার্লপুল-এর ব্যবস্থা করেছে৷
তবে প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও ইয়ুকাসইয়েরভি-র আইস হোটেল এখনো সবচেয়ে বেশি দর্শক আকর্ষণ করে চলেছে৷