বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷

সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷

আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷

সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷

ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷

আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷

আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷

ভালো চাকরি বলতে যেসব পেশাকে বোঝায়, তেমন চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ে কেনিয়ার অনেক শিক্ষিত তরুণ এখন কৃষিকাজ ও পশুপালনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ এই যেমন ছবির বাম দিকের তরুণটির নাম ফ্রান্সিস কিমানি৷ ৩০ বছরের এই তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরি না পেয়ে এখন একটি খামার পরিচালনা করছেন৷ খামারে একশোর বেশি গরু ও প্রায় ২০০ ভেড়া ও ছাগল রয়েছে৷

খামার থেকে কিমানির আয় প্রতিমাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা৷ চাকরি করলে বেতন হিসেবে এই পরিমাণ অর্থ পাওয়া সম্ভব ছিল না৷

৩০ বছরের মেরি গিতাউ পড়াশোনা শেষে চাকরি পাচ্ছিলেন না৷ শেষে তিনিও কৃষিকাজ শুরু করে দেন৷ ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, টমেটো চাষের পাশাপাশি গিতাউ মুরগি, শুকর ও খরগোশ লালন-পালন করেন৷

অ্যাকুয়াপোনিক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে একসঙ্গে স্ট্রবেরি ও মাছ চাষ করছেন দানিয়েল কিমানি৷ তিনি মনে করেন, চাষের ক্ষেত্রে নতুন এই ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় হবে৷ কেননা এর ফলে পানি ও জায়গার অভাব দূর করা সম্ভব৷ অ্যাকুয়াপোনিক্স ব্যবস্থায় একটি ট্যাংকের পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি পানির ওপরে কোনো কিছু জন্মানো যায়৷

কৃষিকাজে শিক্ষিত তরুণরা আশায় পণ্য বিক্রি ও বাজারজাতকরণে এসেছে নতুনত্ব৷ ‘মুকুলিমা ইয়ং’ নামের ওয়েবসাইটে তরুণ কৃষকরা তাদের পণ্যের ছবি দেন৷ ক্রেতারাও সেখান থেকেই পণ্য কেনেন৷ এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের দামও কম পড়ে৷

এমন সব প্রশ্নের দেখা মেলে ‘মুকুলিমা ইয়ং’ সাইটে৷ ৩৫ বছর বয়সি জোসেফ মাচারিয়া মাত্র এক বছর আগে সাইটটি শুরু করেছিলেন৷ এখন তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি৷

দানিয়েল কিমানির মতে, ‘‘আমরা সবাই আইনজীবী হতে পারবো না৷ তবে আমরা সবাই কৃষক হতে পারি৷’’ এই কথার মাধ্যমে কিমানি তাঁর আশার কথা শুনিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, কেনিয়াতে আরও বেশি সংখ্যক তরুণ কৃষিকাজের দিকে ঝুঁকবে৷ বর্তমানে কেনিয়ার প্রতি চারজনের মাত্র একজন কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷

‘মুকুলিমা ইয়ং’ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ মাচারিয়া বলেন, ‘‘কৃষিখাত এখন শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর একটা উপায় নয়, এটা একটা ব্যবসা৷’’ তাঁর মতে, তরুণরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সহজেই কৃষি সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে৷