1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বরিশালে কয়েকটি আসন হাতছাড়া হবে বিএনপির

সমীর কুমার দে২৪ ডিসেম্বর ২০০৮

বরাবরই বরিশাল হলো বিএনপির শক্ত ঘাঁটি৷ এবার সেই ঘাঁটিতে হানা দিয়েছে মহাজোট৷ বরিশাল জেলার ৬টি আসনের সবক'টিতেই গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি তথা চারদলীয় ঐক্যজোট৷ এবার বিএনপি হলফ করে বলতে পারছে না ফল আগের মতো হবে৷

রাজনীতিবিদদের কাছে সিডর দুর্গত বরিশালবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি (ফাইল ফটো)ছবি: AP

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অভিমত, বরিশাল জেলার ৬টি আসনের মাত্র একটিতে (বরিশাল-৫) চারদলীয় জোটপ্রার্থী পরিচ্ছন্ন ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন৷ একইভাবে মহাজোটও একটি (বরিশাল-৪) আসনে এগিয়ে আছে ভালো ব্যবধানে৷ নির্বাচন থেকে মাত্র কয়েকদিন দূরে থেকেও আঁচ করা যাচ্ছে না বাকিগুলোতে জয় চারদলীয় জোটের হবে, না মহাজোটের৷

বিভিন্ন স্তরের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বরিশালে বিএনপির যে একচ্ছত্র দাপট ছিল; এবার দ্রোহ-বিদ্রোহের কবলে পড়ে তা আর থাকছে না৷ একজন ভোটারের মতে, জনগণের চোখে ধরা পড়েছে জোট সরকারের সাবেক সাংসদদের ব্যক্তিগত উন্নতি, প্রতিপক্ষের ওপর প্রয়োগ করা পেশিশক্তি আর লুটপাটের কাহিনী৷ এসব এবার ভোটের বিবেচনায় আসছে৷ মহাজোটের দিনবদলের হাওয়াও গায়ে মাখছে সাধারণ মানুষ৷

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)

এখানে আলোচিত সাংসদ ছিলেন সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত৷ '৯১ ও '৯৬তে পরপর দু'বার নির্বাচিত এই সাংসদ ত্রাস ও গ্রাসে যে দুর্নাম কুড়িয়েছিলেন সে পথেই হেঁটেছেন জহির উদ্দিন স্বপনও৷ ২০০১ সালে স্বপনের বিজয়ে স্বস্তির বদলে অশ্রুসিক্ত করে সংখ্যালঘুদের৷ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছিল তা ৭ বছর পরও স্মৃতিকাতর করে তুলছে নির্যাতিতদের৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বপনের রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টিও৷ এত সব বৈরিতা ঠেলে এ আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহানের জয়ী হওয়া দুরূহ বলেই মনে করছেন বিএনপির কট্টর সমর্থকরাই৷ যদিও বিদ্রোহী জহির উদ্দিন স্বপন নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সোবহানকে সমর্থন দিয়েছেন৷ কিন্তু সাধারণ্যে এই সরল সমীকরণ এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হয়নি৷ বিএনপি সমর্থকদের ভেতরেই বলাবলি হচ্ছে, প্রকাশ্যে যাই হোক স্বপনের রিজার্ভ ভোটগুলো গোপনে মহাজোট প্রার্থী তালুকদার মোঃ ইউনুসের বাংকে পড়বে৷ ফলে তিনি বেশ খানিকটা এগিয়েই আছেন৷

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া)

এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি৷ তার বিপরীতে আছেন বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু ও গত বিএনপির সরকারের হুইপ শহীদুল হক জামাল হয়েছেন সতন্ত্র প্রার্থী৷ একক প্রার্থী হতে পারলে সান্টুর বিজয় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ভোটাররা৷ কিন্তু শহীদুল হক জামাল আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থি হওয়ায় হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে৷ উপরন্তু তার পক্ষ নেওয়ায় গত শুক্রবার বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর শহিদুল ইসলামসহ বিএনপি ও যুবদলের ১৩ নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে থানা কমিটি৷ বিএনপির বিভক্তিই সম্ভাবনা তৈরি করেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মহাজোট প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনির৷

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী)

এখানে চার দলে সেই 'জামাল' সমস্যা৷ জোটের বিভক্তিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন মহাজোট প্রার্থী (জাতীয় পার্টি) গোলাম কিবরিয়া টিপু৷ কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপির যু্গ্ম মহাসচিব সেলিমা রহমানের প্রতিপক্ষ যতটা না টিপু, তার চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন৷ এ আসনের মুল প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিমা রহমান ও টিপুর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলায়৷ অন্যদিকে জয়নুলের বাড়ি মুলাদীতে৷ আসনটির ১ লাখ ৮২ হাজার ভোটের মধ্যে বাবুগঞ্জে ৮২ হাজার ও মুলাদিতে রয়েছে প্রায় ১ লাখ৷ মুলাদীর অধিবাসী মোশাররফ হোসেন মঙ্গু গত সংসদে বিএনপির হয়ে নির্বাচিত হন৷ মনোনয়ন না পেয়ে মঙ্গু এবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন৷ পুরনো শত্রু জয়নুলকে ঠেকাতে সেলিমা রহমানের হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন মঙ্গু৷ নির্বাচনে জয়ী হতে টিপুর বড় পুঁজি মুলাদী আওয়ামী লীগের সমর্থন৷ দৃশ্যত সে সমর্থন তিনি পাচ্ছেন৷ এলাকাবাসীর মতে, মুলাদীতে জয়নুলকে কোণঠাসা করা গেলে সেলিমা রহমানের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে৷

বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা)

এই আসনেও জোটপ্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের প্রধান প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন৷ দু'জনে একই ঘরানার৷ ভোট কাটাকাটির সুফল পাবেন মহাজোট প্রার্থী সাবেক সাংসদ মইদুল ইসলাম৷ নবীন প্রার্থী ফরহাদ রীতিমতো যুদ্ধ করছেন দুই প্রবীণ প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল হোসাইন ও মইদুলের বিরুদ্ধে৷ হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বরিশালের ৬টি আসনের মধ্যে এ আসনটিতে মহাজোট প্রার্থী পরিচ্ছন্ন ব্যবধানে এগিয়ে আছেন৷

বরিশাল-৫ (সদর)

অন্যদিকে খোদ মহাজোটের সমর্থকদেরই মন্তব্য, বরিশালের ৬টি আসনের একটিতেও যদি জোটের জয়ের সম্ভাবনা থাকে সেটি হচ্ছে বরিশাল-৫ (সদর) আসন৷ সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জোটপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এগিয়ে আছেন৷ বিএনপির শক্তিশালী ভোট ব্যাংকের পাশাপাশি জোটপ্রার্থীর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার একটা অবস্থান তৈরি করেছে৷ অন্যদিকে হঠাৎ উদয় হওয়া মহাজোট প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা সরোয়ারের জন্য সহায়ক হয়েছে বলে বিবেচিত হচ্ছে৷ এসব কারণে চারদলীয় প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও ভোটের লড়াইয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে মজবুত অবস্থানে আছেন৷

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)

এখানে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের পাল্লা ভারি হচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থনে৷ প্রথমদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে গ্রহণ করতে দ্বিধা করলেও শেষ দিকে তিনি সবাইকে ম্যানেজ করতে সমর্থ হয়েছেন৷ তার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটপ্রার্থী সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খান৷ এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক৷ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত দুর্গ৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ সৈয়দ মাসুদ রেজা প্রায় ১৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে আবুল হোসেন খানের কাছে পরাজিত হলেও ওই সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামসুল আলম চুন্নু প্রায় ২১ হাজার ভোট পেয়েছিলেন৷ অন্যদিকে হাওলাদার গত তিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে তৃতীয় স্থানে ছিলেন৷ গত নির্বাচনে ২০ হাজার ভোট পান হাওলাদার৷ সব মিলিয়ে এবার আওয়ামী লীগ ও জাপার সম্মিলিত ভোটে রুহুল আমিন হাওলাদার সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ