সফল চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং নড়বড়ে কনজারভেটিভ দলের ভীত শক্ত করাই মূল চ্যালেঞ্জ নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সামনে৷তিনি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হবেন, না টেরেসা মে-র পরিণতি বরণ করতে হবে তাকে?
বিজ্ঞাপন
কনজারভেটিভ দলের যে ক'জন নেতার ব্যাপক প্রচারণা ও অবস্থানের কারণে ব্রেক্সিটের পক্ষে গিয়েছে গণভোট, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন নয়া প্রধানমন্ত্রী জনসন৷ কথার লড়াইয়ে ব্রিটেনে রাজনীতির ময়দান গরম রাখা আর সমালোচনা কুড়ানোর ক্ষেত্রেও যিনি থাকেন সর্বাগ্রে৷
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সদস্যদের রায় আনতে দুই বছরে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছেন টেরেসা মে৷ গণভোটের আগে ব্রেক্সিট-বিরোধিতা করলেও সেই কাজটি করার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর কাঁধে৷
নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনের কড়া ইইউ-বিরোধী মনোভাবের শুরুটা হয়েছিল আশির দশকের শেষে, যখন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনে ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি৷ তখন থেকেই এই সংস্থায় যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হতে দেখা যায় তাঁকে৷
সেসময় ইউরোপীয় কমিশনে ব্রিটেনের অবস্থান পোক্ত করার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী-খ্যাত মার্গারেট থাচ্যার৷ সবার বিরোধী অবস্থানে গিয়ে ইউরোপীয় কমিশনে ব্রিটেনের ফি কমিয়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি৷
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন যাঁরা
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৭ জুন কনজারভেটিভ দলের নেতার পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এরপর অনেকেই সেই পদে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ আর যিনি ঐ পদে যেতে পারবেন তিনিই হবেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/L. Neal
বরিস জনসন
নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে বুকমেকারদের ফেভারিট তিনি৷ তিনি লন্ডনের সাবেক মেয়র ও টেরেসা মে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ৫৪ বছর বয়সি জনসন গতবছর বোরকা পরিহিত নারীদের নিয়ে বক্তব্য রেখে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা খুবই হাস্যকর যে, মানুষকে লেটার বক্সের মতো সেজে বের হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/A. Yates
ডমিনিক রাব
সাবেক ব্রেক্সিটমন্ত্রী রাব সম্ভবত বরিস জনসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন৷ রাব-এর বাবা ইহুদি শরণার্থী ছিলেন, যিনি নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Dunham
মাইকেল গোভ
ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনের অন্যতম নেতা ছিলেন৷ ২০১৬ সালে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে শামিল হয়েছিলেন৷ অবশ্য সেবার তিনি প্রথমে বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/C. J. Ratcliff
জেরেমি হান্ট
৫২ বছর বয়সি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য পক্ষ পরিবর্তন করেন৷ বরিস জনসনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে হান্ট একবার বলেছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনার সময় ব্রাসেলস ‘উদ্ধত’ আচরণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Pezzali
এস্থার ম্যাকভে
মে’র পদত্যাগের অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক এই টেলিভিশন উপস্থাপক৷ গত নভেম্বরে তিনি টেরেসা মে-র ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতিবাদে কর্ম ও পেনশনমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন৷ অবশ্য মার্চে সংসদে ভোটাভুটির সময় তিনি ঐ বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট কার্যকর করার এটিই একমাত্র উপায়৷
ছবি: Getty Images/L. Neal
রোরি স্টুয়ার্ট
বরিস জনসন ও ডেভিড ক্যামেরনের মতো স্টুয়ার্টও এটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন৷ বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন৷ সাবেক এই কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার ট্রেকিং করেছেন৷ কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিপক্ষে তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
ম্যাট হ্যানকক
টেরেসা মে’র পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন তাঁর আগ্রহের কথা ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যানকক৷ ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের সময় তিনি ব্রিটেনের ইউরোপে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন৷ তবে এখন তিনি মনে করেন, একটি চুক্তির আওতায় ব্রিটেনের ইউরোপ ত্যাগ করা উচিত৷
ছবি: Imago/P. Maclaine
আন্দ্রেয়া লিডসম
২০১৬ সালে টেরেসা মে’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি৷ তবে তখনকার একটি মন্তব্যের ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি৷ লিডসম বলেছিলেন, একজন মা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন৷ উল্লেখ্য, টেরেসা মে অতীতে মা না হতে পারায় যন্ত্রণার কথা বলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/W. Szymanowicz
সাজিদ জাভিদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদের বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি বাস চালক হিসেবে কাজ করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিও প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন৷ এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মোর্ডন্ট, প্রীতি প্যাটেল, লিজ ট্রুস, স্টিভ বেকারের নামও শোনা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
9 ছবি1 | 9
ব্রেক্সিটের আলোচনা করতে গিয়ে থ্যাচারের সে সময়কার শক্ত অবস্থানের উদাহরণ টেনে থাকেন জনসন৷ নতুন প্রধানমন্ত্রীর একটি জীবনীতে উঠে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের সঙ্গে তাঁর বেশ সখ্যতাও ছিল৷
১৯৭৯ সালে থ্যাচার যখন ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন, তখনও বর্তমান সময়ের মতো বহুধা বিভক্ত ছিল টোরি দল৷ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ব্রিটেনকে টেনে তোলার পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন থ্যাচার৷
আবার কনজারভেটিভ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা থ্যাচার৷ নিজ দলের জন মেজরের হাতে ক্ষমতা তুলে বিদায় নেন তিনি৷
জন মেজর সাড়ে ছয় বছর ক্ষমতায় থাকলেও দলের অবস্থান পোক্ত না করে উল্টো খারাপ করেছিলেন৷ তারপর টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় ছিল লেবার পার্টির দখলে৷
দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১০ সালে ডেভিড ক্যামরনের নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি৷ এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও এক বছরের মাথায় বেক্সিটকে কেন্দ্র করে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
থ্যাচারের বিদায়ের ৩০ বছরের মাথায় ব্রেক্সিট নিয়ে সংকটের মুখে ব্রিটেন৷ ক্যামেরনের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে এলেন টেরিসা মে, তাঁকেও বিদায় নিতে হয় ব্রেক্সিট সফল না করেই৷
ব্রেক্সিটের কড়া সমর্থক হওয়ার কারণে মে সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বাছাই করা হয়েছিল জনসনকে৷ কিন্তু ব্রেক্সিটের ধরণ কেমন হবে সেই বিতর্কে পদ ছাড়েন এই টোরি নেতা৷
এলোমেলো সোনালি চুলের বরিস জনসন লন্ডনের সাবেক মেয়র, ব্রিটিশ রাজনীতির এক জনপ্রিয় এবং বর্ণাঢ্য চরিত্র- যার চটকদার কথা এবং বিচিত্র কর্মকান্ড প্রায় সবসময়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়৷
ব্রেক্সিট নিয়ে সফল হতে হলে দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি সংসদে বিরোধ দল লেবার পার্টির সমর্থনও খুব দরকার৷ কারণ বর্তমান সংসদে বড় কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রক্ষণশীলদের৷ আবার টেরিসা মে-এর মতো নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসকেও আস্থা ভোটের দিকে নিয়ে যেতে পারে জেরেমি করবিনের দল৷
বিচিত্র চরিত্রের জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও শিক্ষামন্ত্রী অ্যানে মিলটনসহ কয়েকজন৷ আবার ব্রেক্সিট-বিরোধী অনেকে তাঁর বিপক্ষে একাট্টা৷
রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা বরিস জনসন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতোটা সফল হবেন- তা এখন দেখা বিষয়৷ বেক্সিটের পাশাপাশি তিনি টোরি দলের ভীত শক্ত করতে পারবেন কিনা, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন৷
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বপুরুষ তিনি!
ছবিতে মমি করা যে শরীরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের পূর্বপুরুষের, বলে দাবি গবেষকদের৷ ১৯৭৫ সালে এটি পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/G. Kefalas
রহস্যময়
সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরের বারফ্যুসার চার্চ সংস্কারের সময় এই মৃতদেহটি পাওয়া যায়৷ চার্চের বেদির সামনে তাকে সমাহিত করা হয়েছিল৷ দেহটি অভিজাত পোশাক পরানো অবস্থায় ছিল৷ তাছাড়া শরীর দেখে মনে করা হয়েছিল, এটি কোনো ধনী নারীর দেহ৷ তবে কোথাও কিছু না লেখা থাকায় ঐ নারীর পরিচয় এতদিন রহস্যে ঘেরা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/G. Kefalas
সিফিলিস চিকিৎসা
মৃতদেহটি এতদিন ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকার কারণ শরীরে উচ্চমাত্রার পারদের উপস্থিতি৷ ১৫ থেকে ১৯ শতকের মধ্যে সিফিলিস চিকিৎসায় পারদের ব্যবহার থাকায় ঐ নারী এই রোগে আক্রান্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে অনেক সময় পারদ চিকিৎসা মানুষকে সুস্থ করার চেয়ে প্রাণ নিয়ে নিত৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/G. Kefalas
ডিএনএ পরীক্ষা
বাসেলের ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি দেহটি শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা চালায়৷ এর জন্য মমির পায়ের আঙুল থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ এতে জানা যায়, মৃতদেহটি আনা ক্যাথরিনা বিশফ নামের এক নারীর, যিনি ১৭৮৭ সালে মারা গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/G. Kefalas
অবাক করা ব্যাপার
গবেষকরা বলছেন, আনা ক্যাথরিনা বিশফ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের পূর্বপুরুষ ছিলেন৷ ঐতিহাসিক রেকর্ড বলছে, বিশফের কন্যা ক্রিস্টিয়ান হুবার্ট ব্যারন ফেফেলকে বিয়ে করেছিলেন৷ বরিস জনসন (যাঁর অফিসিয়াল নাম আলেকজান্ডার বরিস ডি ফিফেল জনসন) সেই পরিবারের সদস্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Humphreys
প্রতিক্রিয়া
বরিস জনসনের বাবা লেখক স্ট্যানলি জনসন গবেষকদের এই আবিষ্কারে ‘খুবই রোমাঞ্চিত’ বলে জানিয়েছেন৷ আর বরিস জনসন টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি খুবই গর্বিত৷