বিদ্বেষমূলক ছবিতে পূর্ণ রং করার বই প্রকাশ করাটা ‘ভুল হয়েছে' বলে স্বীকার করেছে জার্মানির উগ্র ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়চলান্ড- এএফডি৷ অন্য নানা ছবির মধ্যে তুর্কি পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের ছবিও রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বর্ণবাদী ছবিসহ বই প্রকাশ করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এএফডি৷ বুধবার অবশেষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলো দলটি৷ ডয়চে ভেলেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য শাখা জানিয়েছে, এই ঘটনার জন্য তারা ‘আন্তরিকভাবে ক্ষমা' চাইছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বইটির বেশিরভাগ অংশ আমাদের পরিকল্পনা অনুসারেই হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু অংশে আসলেই সমস্যা রয়েছে৷ আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে এই অংশগুলো যায় না৷''
বইটি ঠিকমতো পর্যালোচনা হওয়ার আগেই প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এএফডি৷
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে এএফডির সংসদীয় দলের প্রধান মার্কুস ভাগনার বলেছেন, ‘‘গতকাল আমি বইটির সম্পর্কে যে পর্যালোচনা করেছিলাম, তা ভুল ছিল৷ এই বই এভাবে প্রকাশ করাটা ঠিক হয়নি৷''
শুরুতে অবশ্য বইটির বিরুদ্ধে সমালোচনাকে ‘শিল্প ও বিদ্রুপ করার স্বাধীনতার ওপর আঘাত' বলে বক্তব্য দিয়েছিল দলটি৷
তদন্ত শুরু
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের পার্লামেন্ট বুধবার জানিয়েছে, এএফডি এই বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে পাবলিক ফান্ড ব্যবহার করেছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে৷
পুলিশ ও তদন্তকারীরাও এর মাধ্যমে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন৷ গত সপ্তাহে ক্রেফেল্ড শহরের এক অনুষ্ঠানে এএফডির পার্লামেন্টারি দল এই বই বিতরণ করে৷
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
6 ছবি1 | 6
বইটির একটি ছবিতে একটি সুইমিং পুলে বোরকা পরা নারীদের দেখানো হয়েছে৷
আরেকটি পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে গাড়ি থেকে বন্দুক ও তুরস্কের পতাকা নিয়ে কয়েকজন বের হচ্ছেন৷
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য এবং জাতিগত দিক দিয়েও সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ৷ তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বাস করেন এ রাজ্যে৷
বইটির কথা জানাজানি হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাড়াও ক্যাথলিক চার্চও এর সমালোচনা করেছে৷