মেশিন কিভাবে বর্ণবাদী হয়! এ নিয়েই এখন অনলাইনে চলছে বিতর্ক৷ টুইটারে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কালো চামড়ার কেউ তরল সাবানের মেশিনের নিচে হাত দিলেও তা থেকে সাবান বের হচ্ছে না, কিন্তু সাদা চামড়ার কেউ এলে মেশিন ঠিকঠাক৷
বিজ্ঞাপন
আলোচনার শুরু ১৬ আগস্ট৷ নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের চুকওয়েমেকা আফিগবো নামের এক ব্যক্তি টুইটারে আপলোড করেন এই ভিডিও৷ ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় তুলনামূলক ফর্সা চামড়ার এক ব্যক্তি সোপ ডিসপেনসার বা তরল সাবানের মেশিনের নিচে হাত দিতেই তা থেকে সাবান বের হয়৷
কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন এরপরপরই একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি সাবান নিতে যান৷ নানাভাবে মেশিনের নীচে হাত নিলেও সাবান আর বের হচ্ছিলো না৷ এ সময় পাশ থেকে কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, 'টু ব্ল্যাক, টু ব্ল্যাক', অর্থাৎ 'বেশি কালো, বেশি কালো৷'
স্বভাবতই, মেশিনের এমন অদ্ভুত আচরণকেই ব্যঙ্গ করছিলেন তাঁরা৷
তবে ঘটনা আরো জমে ওঠে, যখন সেই একই ব্যক্তি পাশের আরেক মেশিন থেকে হাত মোছার টিস্যু হাতে নেন৷ টিস্যুটি ছিল সাদা৷ ফলে এবার মেশিনের নিচে টিস্যু ধরতেই তা থেকে বেরিয়ে আসে সাবান৷ ঠিক এর পরপরই আবার হাত দিলেও, আবারো ব্যর্থ হন তিনি৷
ঘটনাটি কোন দেশের তা উল্লেখ করা হয়নি টুইটে৷ তবে, ভিডিও শেয়ার করে চুকওয়েমেকা তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন৷ তিনি বলছেন, ‘‘প্রযুক্তিতে বৈচিত্র্য এবং সমাজে এর প্রভাবের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে যদি কারো সমস্যা হয়, এই ভিডিওটি দেখতে পারেন৷''
ভিডিওটি টুইট করার সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুতগতিতে৷ এক সপ্তাহে টুইটটি পছন্দ করেছেন দুই লাখের বেশি মানুষ, রিটুইট হয়েছে দেড় লাখেরও বেশি বার৷
মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ বলছেন, এইসব মেশিন যাদের দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তাদের স্কিন টোন, অর্থাৎ চামড়ার রংহালকা বলে এই মেশিন কৃষ্ণাঙ্গদের বেলায় কাজ করে না৷ কৃষ্ণাঙ্গদের বিষয়টি ঠিকমতো খেয়াল রাখা হয় না বলেও মনে করেন তারা৷ কেউ কেউ আবার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ বলছেন, এই সামান্য প্রযুক্তিগত সমস্যাকে বিশাল সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই৷
কেউ আবার তুলে ধরছেন এর প্রযুক্তিগত দিক৷ তাদের মতে, এই মেশিনের সেন্সর আলোর প্রতিফলনের ভিত্তিতে কাজ করে৷ অপেক্ষাকৃত কালো চামড়ায় আলোর প্রতিফলন কম হয় বলে অনেকক্ষেত্রে মেশিন বুঝতে পারে না, নীচে কিছু আছে কিনা৷
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
9 ছবি1 | 9
তবে, এ ধরনের ঘটনা যাদের সাথে ঘটে, তাদের যে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, সে বিষয়ে একমত হচ্ছেন সবাই৷
এডিকে/এসিবি
আপনি কখনও এমন কিছুর শিকার হয়েছেন? লিখুন নীচের ঘরে৷