প্রিন্স হ্যারি ও মেঘানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিল বাকিংহাম প্যালেস। প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, রানি উদ্বিগ্ন। বিষয়টি ব্যক্তিগত স্তরে মেটানো হবে।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ রাজপরিবারেও বর্ণবাদ। অভিযোগ করেছেন প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অফ সাসেক্স মেঘান। সম্প্রতি অ্যামেরিকায় হ্যারি ও মেঘান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তারা সোজাসাপটা অনেক কথা বলেছেন। মেঘান যেমন টেনে এনেছেন বর্ণবাদের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, রাজপরিবারের এক সদস্য প্রিন্স হ্যারির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাদের সন্তান কতটা কালো হবে।
বাকিংহাম প্যালেস সাধারণত রাজপরিবারের ঘরোয়া বিষয় নিয়ে খুবই কম প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু মেঘানের অভিযোগ নিয়ে জানিয়েছে। রানির তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই অভিযোগকে তিনি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে বিষয়টি ব্যক্তিগত স্তরে মিটিয়ে নেয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর হ্যারি ও মেঘান খুবই চ্যালেঞ্জিং সময় কাটিয়েছেন জেনে তিনি দুঃখবোধ করছেন। ২০১৮ সালে বিয়ের পর হ্যারি ও মেঘানকে খুবই ভালো বেসেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
বর্ণবাদ নিয়ে মেঘানের অভিযোগের পরই রাজপরিবার যাতে প্রতিক্রিয়া জানায় তার জন্য চাপ তৈরি হয়েছিল। পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করেন, প্রতিক্রিয়া দেয়া হবে। তারপরই রানির তরফে এই বিবৃতি জারি করা হয়েছে।
প্রেমের কারণে যতবার বিব্রত ব্রিটিশ রাজপরিবার
প্রেম ও বিয়ের ঘটনায় একাধিকবার বিব্রত হতে হয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে৷ এমনই কয়েকটি ঘটনা জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Mary McCartney/Queen Elizabeth II
চার্লস ও ক্যামিলা
বিয়ের ১২ বছর পর ১৯৯২ সালে লেডি ডায়ানার সাথে বিচ্ছেদ হয় যুবরাজ চার্লসের৷ মনোমালিন্য ছাড়াও এই বিচ্ছেদের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল চার্লসের প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলস৷ রাজপরিবারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০০৫ সালে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন চার্লস৷ এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেননা চার্লসের মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তাঁর পিতা ফিলিপও৷
ছবি: AP
ডায়ানা ও দোদি
চার্লসের সাথে বিবাহিত থাকাকালীন এবং বিচ্ছেদের পরেও একাধিক পুরুষের সাথে জুড়তে থাকে ডায়ানার নাম৷ এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মিশরের চলচ্চিত্র প্রযোজক দোদি ফায়েদের সাথে তাঁর সম্পর্ক৷ ১৯৯৭ সালে প্যারিসের যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ডায়ানা সেই গাড়িতে তাঁর সাথে ছিলেন ফায়েদও৷ ডায়ানার জীবনযাপন বিষয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অসন্তোষ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আলোচিত হয়েছে৷
ছবি: dapd
রাজকুমারী অ্যান
চার্লসের ছোট বোন রাজকুমারী অ্যানের সাথেও জড়িয়ে ছিল নানা পুরুষের নাম, যার মধ্যে অন্যতম ক্যামিলার সাবেক স্বামী অ্যান্ড্রু পার্কার বোলসও৷ এছাড়া, অ্যানের স্বামী মার্ক ফিলিপসের নামও জড়ায় নানা কেচ্ছার সাথে৷ শুধু তাই নয়, অ্যান-মার্ক বিচ্ছেদের ফলে সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয় ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিচ্ছেদ-বিরোধিতা কমার প্রবণতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Wire/G. Fuller
মার্গারেট ও পিটার টাউনসেন্ড
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট বোন রাজকুমারী মার্গারেট৷ মার্গারেট প্রথম শিরোনামে আসেন পিটার টাউনসেন্ডের সাথে তাঁর প্রেমের কারণে৷ সেই সময় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কারো সাথে রাজপরিবারের সদস্যের বিয়ে হওয়া ছিল অসম্ভব৷ পরিবারের চাপে টাউনসেন্ডকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন মার্গারেট, কিন্তু পরবর্তীতে চিত্রগ্রাহক অ্যান্টনি আর্মস্ট্রং-জোনসের সাথে তাঁর বিয়েও সৃষ্টি করে বহু বিতর্ক৷
ছবি: AFP/Getty Images
অষ্টম এডোয়ার্ড ও ওয়ালিস সিম্পসন
মার্গারেটেরও আগে মার্কিন নাগরিক ও বিবাহ-বিচ্ছেদপ্রাপ্ত ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য রাজকর্তব্য থেকে সরে আসেন অষ্টম এডোয়ার্ড৷ সেই সময় রাজার আসনে বসতে চলা এডোয়ার্ডের এই পদক্ষেপ আলোড়ন তোলে৷ এর ফলে, তাঁর ছোট ভাই ষষ্ঠ জর্জ রাজা হন৷ এডোয়ার্ড-ওয়ালিসের বিবাহ এখনও রাজপরিবারের অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা হিসাবে আলোচিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
অ্যান্ড্রু
চার্লসের ছোট ভাই অ্যান্ড্রুরও পিছু ছাড়েনি বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনা৷ যেমন মার্কিন অভিনেত্রী কু স্টার্কের সাথে তার সম্পর্ক৷ শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে সারা ফার্গুসনকে বিয়ে করলেও কু স্টার্কের কন্যার ‘গডফাদার’ হন অ্যান্ড্রু, যা নতুন করে খবরের শিরোনামে নিয়ে আসে তাকে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S. Tan
হ্যারি ও মেগান
মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের সাথে রাজপুত্র হ্যারির বিয়ের পর থেকেই চলছিল নানা রকমের জল্পনা৷ বুধবার একটি বিবৃতি দিয়ে তাঁরা জানান যে রাজকর্তব্য থেকে সরে আসতে চলেছেন তাঁরা৷ রাজপরিবারের সদস্য হিসাবে নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান বলে জানান এই জুটি৷ ইতিমধ্যেই তাঁদের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাকিংহাম প্যালেস৷
ছবি: picture-alliance/AP/D. Lipinsky
7 ছবি1 | 7
হ্যারি ও মেঘানের সাক্ষাৎকার ব্রিটেনে এক কোটি ২৪ লাখ এবং অ্যামেরিকায় এক কোটি ৭১ লাখ মানুষ দেখেছেন। হ্যারি ও মেঘান বর্ণবাদ, মানসিক স্বাস্থ্য, ব্রিটিশ মিডিয়া, রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
টিভি শো ছাড়তে হলো
প্রিন্স হ্যারি ও মেঘানের সাক্ষাৎকার ব্রিটেনের মানুষকে দুই ভাবে বিভক্ত করে দিয়েছে। এক অংশের মতে, তারা যা বলেছেন, তা ঠিক। অন্য অংশ মনে করেন, রানি এলিজাবেথ ও রাজপরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের সমালোচনা অনুচিত।
যুক্তরাজ্যে টিভি শো-র হোস্ট পিয়ার্স মর্গান বলেছেন, তিনি মেঘানের একটা কথাও বিশ্বাস করেন না। তার এই কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তার শো গুড মর্নিং ব্রিটেনের প্রচুর দর্শক তো বটেই, সহ-সঞ্চালকরাও তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৪০ হাজার অভিযোগ রেগুলেটরের কাছে জমা পড়েছে। পরে পিয়ার্স জানিয়েছেন, তিনি আর ওই শো করবেন না।