বর্ণ বৈষম্যের কারণে এক সময় বাইরের দুনিয়ার কাছে সাউথ আফ্রিকা ছিল ‘নিষিদ্ধ’ এক দেশ৷ সেই দেশে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পাইলট হওয়া কয়েক বছর আগেও ছিল অসম্ভব কল্পনা৷ সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন রেফিলওয়ে লেডওয়াবা৷
বিজ্ঞাপন
সমাজে বৈষম্য আছে এবং সে কারণে স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না- এমন যাদের বিশ্বাস, তাদের নিয়মিত ডেকে ডেকে পরামর্শ দেন রেফিলওয়ে৷ বৈষম্য যদি সফল হওয়ার অদম্য বাসনাকে আটকাতে পারতো, তাহলে তো সাত ভাই-বোনের একজন হয়ে তিনি সাউথ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পাইলট হতে পারতেন না৷ একে তো সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের সন্তান, তার ওপর নারী, তার জন্য এতটা পথ পেরিয়ে হেলিকপ্টার পাইলট হওয়া এক অর্থে অসম্ভবই ছিল৷ রেফিলওয়ে লেডওয়াবা বলেন, ‘‘আপনি নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারী, আপনার জন্য তো সব কাজই দ্বিগুণ কঠিন৷ সঠিক মানুষকে খুঁজে না পেলে আপনি (আলবার্ট) আইনস্টাইন হলেও তো কিছু করতে পারবেন না৷’’
রেফিলওয়ে লেডওয়াবার সৌভাগ্য যে স্কুলের লেখাপড়ার ঋণ পরিশোধ করতে কেভিন ক্রুর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন এবং সেই কাজটা তার ভীষণ ভালো লেগেছিল৷ এক শ্বেতাঙ্গ সহকর্মী বলেছিলেন, রেফিলওয়ের ভালো পাইলট হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ রেফিলওয়ে শুধু তেলের খরচ দিতে পারলেই তাকে প্রশিক্ষণ দেবেন – এমন আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি৷
২০০৫ সালে সেই সুযোগটা এলো৷ ডারবানের সরকারি স্কুলে হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু হলো৷ কিন্তু স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারছিলেন না৷ মনে হতো, ককপিটে পাশে কোনো পুরুষ না থাকলে কোনো নারীর পক্ষে একা হেলিকপ্টার ওড়ানো অসম্ভব৷
প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনাও করতে শুরু করেছিলেন৷ তখনই এগিয়ে আসেন আরেক শ্বেতাঙ্গ সহকর্মী৷ তিনি বললেন, প্রশিক্ষণ বাদ দেয়া ঠিক হবে না, দেয়াল ভাঙার চেষ্টা আরো তীব্র করতে হবে৷ তার অনুপ্রেরণায় তীব্র চেষ্টা করেই রেফিলওয়ে লেডওয়াবা এখন সাউথ আফ্রিকার পুলিশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হেলিকপ্টার চালক৷ সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকও তিনি৷ গার্ল ফ্লাই প্রোগ্রাম ইন সাউথ আফ্রিকা (জিএফপিএ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানটও আছে তার৷ সেই প্রতিষ্ঠানের কাজই হলো নারীদের হেলিকপ্টারের ডানায় ভেসে আকাশে উড়তে শেখানো৷
এসিবি/কেএম (রয়টার্স)
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷