মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ারের 'আই হ্যাভ আ ড্রিম বক্তৃতা'র ৬০ বছর উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেছেন বাইডেন।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আলোচনায় বাইডেনছবি: Susan Walsh/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ফ্লোরিডায় একটি দোকানে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের দিকে গুলি চালিয়েছে এক ২১ বছরের যুবক। পরে নিজেকেও শেষ করে দিয়েছে সে। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই এদিন নিজের বক্তৃতা সাজিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাইডেন বলেছেন, বর্ণবাদ শেষ করার সময় এসেছে। প্রেসিডেন্টের কথায়, ''কালো মানুষদের জীবন যাতে এভাবে চলে না যায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।''
বর্ণবাদ অ্যামেরিকায় নতুন সমস্যা নয়। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের দাবি এবং অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তার দীর্ঘ এবং তীব্র লড়াই অ্যামেরিকার ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। সে সময় তার বিখ্যাত বক্তৃতা দিয়েছিলেন কিং-- আই হ্যাভ আ ড্রিম। সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতার ৬০ বছর উদযাপন হয়েছে সোমবার। বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দুইজনই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূতও বটে। হ্যারিসও এদিন বলেছেন, ''অ্যামেরিকায় কালো এবং সাদা মানুষের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাত নেই। কিন্তু কেউ কেউ তফাত তৈরির চেষ্টা করছে। আমাদের দায়িত্ব তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া।অ্য়ামেরিকাকে কোনোভাবেই এই বিদ্বেষের মধ্য়ে ঢুকতে দেয়া যাবে না।''
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
9 ছবি1 | 9
বাইডেন বলেছেন, বর্ণবাদ এবং বিদ্বেষমূলক আক্রমণ বন্ধ করার জন্য সরকার চরমতম ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভেবেছে। যাতে মূল থেকে এই ধরনের অপরাধকে উৎপাটিত করা যায়। বক্তৃতার পর হোয়াইট হাউসে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করেন বাইডেন এবং হ্যারিস।
সম্প্রতি ফ্লোরিডায় একটি ২১ বছরের যুবক বন্দুক নিয়ে ডলার জেনারেল স্টোরের ভিতর ঢুকে পড়ে। শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গদের দিকেই গুলি চালাতে থাকে সে। ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপর নিজেকেও শেষ করে দেয় সে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক এর আগে হেট স্পিচও প্রচার করেছে।
বস্তুত, এর আগেও একাধিক এমন শুটআউটের ঘটনা ঘটেছে। বর্ণবাদ নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে অ্যামেরিকায়। এদিন লুথার কিংয়ের ছেলে বলেছেন, ''বর্ণবাদের এক নতুন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অ্যামেরিকা। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।''