ফিচার অফ দ্য উইক
১১ জানুয়ারি ২০১৩![A Bangladeshi farmar plants rice saplings in his paddy field at Demra near Dhaka city, Thursday 19 August 2004. In this field standing crops were damaged by flood recently. 43 districts of the country were flooded where crops were damaged by devestating floods recently. Foto: MUFTY MUNIR Schlagworte Landwirtschaft, Hochwasser, Agrar, Felder, Pflanzen, Feldbestellung, reis, einsetzen, einpflanzen](https://static.dw.com/image/15824380_800.webp)
এই যেমন ‘‘শ্রাবণের পুরো ভাদ্রের বার; এর মধ্যে যত পার''৷ অর্থাৎ খনা বলছেন, সারা শ্রাবণ মাস ধরে ধান রোপন করা গেলেও ভাদ্রের যাবে ১২ তারিখ পর্যন্ত৷ আবার কৃষিকাজের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা জরুরি একটি বিষয়৷ সেটা নিয়েও খনার বচন রয়েছে৷ খনা বলছেন, ‘‘চৈত্রেতে খর খর; বৈশাখেতে ঝড় পাথর৷ জ্যৈষ্ঠতে তার ফুটে; তবে জানবে বর্ষা বটে৷''
কিন্তু কে এই খনা? এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বললেন, ‘‘খনা কে তা নিয়ে নানা মত রয়েছে৷ এবং সেগুলোর কোনোটাকেই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি৷ কেউ বলেন, খনা সিংহলরাজের মেয়ে ছিলেন, কারও মতে তিনি ছিলেন ওডিশা রাজার মেয়ে বা সেখানকার বাসিন্দা, কেউ বলেন খনার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত এলাকায়৷ আবার কোনো কোনো পন্ডিতের মতে, বচনগুলোর সঙ্গে যেহেতু দিনক্ষণের একটা সম্পর্ক আছে সেখান থেকে ‘খনা' শব্দটা এসেছে৷''
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সহ কয়েকজন পন্ডিতের লেখার বরাত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, প্রায় নয়শো বছর আগে অত্র অঞ্চলে মুসলমানদের রাজ্য জয়ের আগে থেকেই কিছু কিছু খনার বচন প্রচলিত ছিল৷ তবে খনার বচন বলে যা পরিচিত তার সবগুলোই যে খনার মুখ থেকে এসেছে তা নয়৷ অধ্যাপক শাহেদ বলেন, ‘‘লোকসাহিত্যের ক্ষেত্রে যেটা হয় যে একজন কিছু একটা শুরু করে৷ যেমন খনার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে৷ খনা হয়তো শুরু করেছেন৷ তারপর এ সম্পর্কিত আরও যা এসেছে সেগুলো খনার নামেই পরিচিতি পেয়েছে৷''
খনা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন৷ তাই আবহাওয়া বা কৃষি সংক্রান্ত যে বচনগুলো তিনি দিয়েছেন সেগুলো বেশ কার্যকর৷ কিন্তু এতকাল আগে খনা কীভাবে পূর্বাভাসগুলো দিতেন৷ অধ্যাপক শাহেদ বলছেন, ‘‘দর্শন এবং বিজ্ঞান আবিষ্কারের আগে থেকেই মানুষ লোকদর্শন আর লোক-প্রযুক্তির ব্যবহার করতো৷ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমরা যারা শহরে বাস করি তারা মেঘ দেখলে বলতে পারবো না কখন বৃষ্টি হবে, বা আদৌ হবে কিনা৷ কিন্তু একজন কৃষক সেটা বলে দিতে পারবে৷ আসলে এগুলো হলো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফল৷ খনার বচনগুলোতেও দীর্ঘদিনের লোক অভিজ্ঞতা প্রসার ঘটেছে৷''
বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে প্রায় শ দুয়েক খনার বচনের প্রচলন রয়েছে৷ তবে অধ্যাপক আলী নেওয়াজের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐ প্রতিবেদনে অধ্যাপক নেওয়াজ গবেষণার সময় কোনো কোনো কৃষকের কাছে হাজার খানেক খনার বচন থাকার কথা জানতে পেরেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন৷
অধ্যাপক শাহেদের মতে, আজকের এই আধুনিক যুগেও খনার বচনের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়নি৷ বরং গ্রামে গঞ্জের কৃষকরা এখনো যেভাবে কাজ করছেন তাতে খনার বচনের প্রভাব রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, একজন কৃষিবিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়া শেষ করে তাত্ত্বিক যেসব কথা বলবেন তার চেয়ে একজন কৃষক বেশি বাস্তব কথা বলবেন৷ কৃষকদের এই জ্ঞানের পেছনে খনার বচন বলে পরিচিত যে জ্ঞানের সংকলন সেটার একটা প্রভাব আছে৷''