1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্ধমানের ঐতিহ্য সীতাভোগে ফিউশন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জানুয়ারি ২০২০

বাঙালির খাবার নিয়ে লড়াই ঐতিহ্য ও ফিউশনের। বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ এবার প্রথম তৈরি হয়েছে নলেন গুড় দিয়ে। শতাব্দীপ্রাচীন এই মিষ্টান্নের রূপবদল নিয়ে নানা মুনির নানা মত।

Bangladesch Süßspeisen Sitabhog und Mihidana
ছবি: DW/P. Samanta

বাংলার শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা। এই জেলার সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল থেকে তৈরি সীতাভোগ মিষ্টির খ্যাতি বিশ্বজুড়েই। শতাব্দী পার করা এই মিষ্টির ইতিহাস বলে, ১৯০৪ সালে বড়লাট লর্ড কার্জন বর্ধমান এসেছিলেন। তৎকালীন বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে মহারাজা খেতাব দিতেই তাঁর আগমন। সেই বড়লাটকে স্বাগত জানাতে নতুন ধরনের মিষ্টির পরিকল্পনা করেন বিজয়চাঁদ। মিষ্টি ব্যবসায়ী ভৈরবচন্দ্র নাগ ইংরেজ বড়লাট লর্ড কার্জনের জন্য তৈরি করেছিলেন সীতাভোগ, মিহিদানা। সেই শুরু সীতাভোগের জয়যাত্রা। তার আগেই কলকাতার বুকে ভীমচন্দ্র নাগ তৈরি করে ফেলেছেন লেডিকেনি। লেডি ক্যানিংকে খুশি করতে যখন তৈরি হচ্ছে লেডিকেনি, তখন অনেক দেরি সীতাভোগের আবির্ভাবের। উৎসাহ জোগালেন কার্জন। তিনি সীতাভোগ খেয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, সরকারি অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির পরিবেশন বাধ্যতামূলক করেন। সেই শুরু সীতাভোগের জয়যাত্রার।

প্রদীপ ভকত

This browser does not support the audio element.

ঐতিহ্যের মিষ্টি এবার নতুন চেহারায় হাজির হয়েছে। ছানার তৈরি মিষ্টিতে শীতকালে নলের গুড়ের মিশ্রণ নতুন কিছু নয়। রসগোল্লা থেকে নানা ধরনের সন্দেশে এই গুড়ের ব্যবহার করা হয়। এই বছর বর্ধমানের একাধিক মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারী সীতাভোগে নলেন গুড়ের ব্যবহার করছেন। এই মিষ্টি তৈরি হয় যে সীতাসের চাল দিয়ে তার চাষ হয় বর্ধমানেই। এই চালের গুঁড়োর সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে ছানা ও দুধ মেশানো হয়। সেই মিশ্রণ চালের আকৃতির ছিদ্রযুক্ত পাত্রের মধ্যে দিয়ে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এই শেষ ধাপটিতে একটু পরিবর্তন এনে ফিউশন সীতাভোগ তৈরি করা হচ্ছে।

বর্ধমানের রাধাবল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্ণধার প্রদীপ ভকত জানান, চিনির রসের বদলে মিশ্রণ ফেলা হচ্ছে নলেন গুড়ে। তাতে তৈরি হচ্ছে নয়া সীতাভোগ। সাদা নয়, এটা দেখতে একটু লালচে। মুখে দিলে পাওয়া যাচ্ছে গুড়ের স্বাদ। কেন সীতাভোগ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হল? পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সদস্য প্রদীপ বলেন, "মানুষ চিরকালই নতুন কিছু চায়। নলেন গুড় প্রাকৃতিক জিনিস, আমরা প্রত্যেকেই শীতকালে খেতে পছন্দ করি। তার সঙ্গে সীতাভোগের মিশেল মানু্ষ গ্রহণ করবে, আমাদের ব্যবসার পক্ষে ইতিবাচক হবে, এসব ভেবেই এই পরিবর্তন।"

দেবদত্ত

This browser does not support the audio element.

বর্ধমানের বাসিন্দারা সীতাভোগের নয়া অবতার নিয়ে দুই শিবিরে বিভক্ত। নতুন প্রজন্ম এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছে। প্রবীণ মানুষরা এর পক্ষপাতী নন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রকাশনা আধিকারিক দেবদত্ত বলেন,  ”গোড়ায় নতুন জিনিসের প্রতি আকর্ষণ থাকে। গুড়ের সীতাভোগ নিয়েও থাকবে। এটা একেবারেই সাময়িক। দীর্ঘস্থায়ী হবে না এই আকর্ষণ। এবারও হাতে গোনা কয়েকটি দোকান সীতাভোগ তৈরি করেছে। ধবধবে সাদা রং ছাড়া সীতাভোগ ভাবাই যায় না। এটা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার অনুষ্ঠানের মতো।" তিনি জানান, বর্ধমানে ভৈরবচন্দ্র নাগের হাত ধরে সীতাভোগের সৃষ্টি। সেই দোকান হাতবদল হয়েছে। সেখানেও কিন্তু গুড়ের ফিউশন নেই।

কলকাতা যাওয়ার পথে বর্ধমান স্টেশনে নেমে গণেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে গুড়ের সীতাভোগ কিনে খেয়েছেন মানস সরকার, বিপ্লব গুপ্তরা। দামেও বিশেষ পার্থক্য নেই। কেজিতে মাত্র ১০ টাকা বেশি। অনেক ক্রেতার বক্তব্য, গুড়ের স্বাদ অভিনব। শীতের সময় ভালোই লাগছে। তবে বছরভর সাদা, ঐতিহ্যবাহী সীতাভোগই চাই। এতে পরম্পরায় আঘাত লাগছে বলে মনে করেন না প্রদীপ ভকত। তাঁর বক্তব্য, "দুটিই পাশাপাশি থাকলে আপত্তি নেই। পাশ্চাত্যের ঝোঁক এসেছে, এটা মানতেই হবে। যে জিন্‌স পরে প্রতিদিনের কাজকর্মে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, সে আবার কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বা বিয়ের পিঁড়িতে বসার সময় বাঙালি পোশাক পরে। সুতরাং ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুনের বিরোধ নেই।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ