বেঙ্গালুরু শহরে বর্ষ বিদায়ের আনন্দ উল্লাসের রাতে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা একাধিক মহিলার ‘শ্লীলতাহানি' করে৷ এই ঘটনায় দেশজুড়ে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়৷ প্রথমদিকে কর্নাটক সরকার ঘটনাকে আমল দিতে চায়নি৷ পরে চাপে পড়ে তদন্ত শুরু করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে বর্ষ বিদায়ের আনন্দ উল্লাসের রাতে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা একাধিক মহিলার ‘শ্লীলতাহানি' করে৷ এই ঘটনায় দেশজুড়ে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়৷ প্রথমদিকে কর্নাটক সরকার ঘটনাকে আমল দিতে চায়নি৷ পরে চাপে পড়ে তদন্ত শুরু করেছে৷
দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কর্নাটকের বেঙ্গালুরু শহরে বর্ষ বিদায়ের রাতে যেভাবে লাগামছাড়া বেলেল্লাপনা দেখা গেছে, তা এক কথায় বেনজীর৷ তথ্য প্রযুক্তির ঘাঁটি বলে খ্যাত এই শহরের প্রাণকেন্দ্র এম.জি রোড এবং ব্রিগেড রোডে মধ্যরাতে জড়ো হয় প্রায় ৫০-৬০ হাজার তরুণ-তরুণী৷ সবাই আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা৷ কিন্তু সেই আনন্দ নিবিড় আবহ হয়ে পড়ে এক বিভীষিকা৷ উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক অবাধে চালায় তরুণীদের ওপর যৌন নিগ্রহ৷ জড়িয়ে ধরে, দেহের আপত্তিকর জায়গায় হাত রাখে, চুম্বন করে৷ মেয়েদের মধ্যে শুরু হয় পরিত্রাহি চিৎকার৷ জুতো হাতে ছুটাছুটি শুরু করে৷ পুলিশ অবশ্যই ছিল৷ সরকারের মতে হাজার দেড়েক৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশ প্রশাসন এইসব ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেনি৷ পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের মাঝে মধ্যে দু -একবার তাড়া করে মাত্র৷ পরে এই নিয়ে যখন দেশে ক্ষোভের তুফান ওঠে, তখন সাফাই দিতে গিয়ে কর্নাটক রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন তাতে আগুণে ঘি পড়ার মতো৷ সংবাদ মাধ্যমের সামনে নির্লিপ্তভাবে তিনি বলেছেন, পশ্চিমী ভাবধারা নকল করতে গিয়ে এসব ঘটেছে৷ বড়দিন বা বর্ষবরণের আনন্দ উল্লাসের রাতে এমন একটু-আধটু ঘটেই থাকে৷ পশ্চিমী মানসিকতায় রপ্ত কিছু যুবক সংযম হারিয়ে ফেলে. পুলিশ ছিল, তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে৷ লিখিত কোনো অভিযোগ কেউ এখনও পর্যন্ত করেনি৷ অকাট্য প্রমাণও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
মন্ত্রীর এই ধরণের কুরুচিকর মন্তব্যকে ধিক্কার জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ললিতা কুমারমঙ্গলম মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান৷ দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান কর্নাটকের মন্ত্রী সমাজবাদী পার্টির নেতা আবু আজমির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ কুরুচিকর মন্থব্য করেছেন সমাজবাদী দলের নেতা আবু আজম৷ মেয়েরা ছোট পোশাক পরে রাতবিরেতে পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে গেলে এমনটা ঘটতেই পারে৷ মহিলাদের নিরাপত্তা শুরু হওয়া দরকার বাড়ি থেকেই৷ ভারতীয় সংস্কৃতি অন্তত তাই বলে৷
এরপরেই সামনে আসে অকাট্য প্রমাণ৷ সিসিটিভি ফুটেজ৷ তাতে দেখা যায় শহরের অন্য জায়গায় স্কুটারে আসা তিনজন যুবক অটোতে আসা দুই তরুণীকে কিভাবে যৌন হেনস্থা করছে৷ সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত৷ নড়েচড়ে বসে পুলিস প্রশাসন৷ বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কিছু প্রমাণ হাতে এসেছে৷ শহরের ৪০টি সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে৷ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়েছে৷
প্রশ্ন উঠেছে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে৷ জোর বিতর্ক উঠেছে মেয়েরা কি তাঁদের পছন্দমতো পোশাক পরে রাতে বাইরে যেতে পারবে না? না পারলে পুলিশ প্রশাসন আছে কেন? মহিলাদের নিরাপত্তা রক্ষায় কেন সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? কড়া শাস্তির বিধান কেন নেই?
কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর উত্তর, আইন কড়া করলেই যে এই ধরনের অপরাধ কম হবে, তার নিশ্চয়তা নেই৷ আসলে তরুণ প্রজন্মের একাংশ হতাশায় ভুগছে৷ চাকরি নেই, শিক্ষাদীক্ষার অভাব, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ মনের হতাশা জাগিয়ে তুলছে হিংসার মনোভাব৷ সমাজের দুর্বলতর লিঙ্গের ওপর জোর খাটাতে চাইছে৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
নারী নিরাপত্তার সূচিতে ভারতের স্থান একেবারে নীচের দিকে৷ তবে সরকার হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ চালু করতে চলেছি মোবাইলে বিপদ সঙ্কেত বাটন৷ ঐ বোতামে চাপ দিলেই বিপদ সংকেত পৌঁছে যাবে কাছের পুলিশ থানায় এবং অন্যদের কাছে৷ সেইসঙ্গে থাকছে জিপিএস সিস্টেম যাতে বিপদাপন্ন মহিলা কোথায় আছেন তা জানা যায়৷ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান মানেকা গান্ধী৷
জাগরি নামের এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, চলতি আইনকানুন যা আছে, তা আছে৷ আইন কড়া করাই যথেষ্ট নয়৷ আসল কথা, চলতি আইন প্রয়োগে রয়ে গেছে ঢিলেমি৷ দ্বিতীয়ত, পুরুষদের সামাজিক মানসিকতায় আনতে হবে পরিবর্তন৷ নারীদের যে একটা আলাদা ব্যক্তিপরিচয় আছে, সেটাকে সম্মান করতে শিখতে হবে৷ মহিলা বলেই তাঁকে অন্য চোখে দেখতে হবে, এ কেমন কথা? শুধু দেশের নয়, বিদেশি মহিলাদেরও ভারত ভ্রমণে এসে ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে কেন? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে এনজিও জাগরি-র বক্তব্য, এটা দেশি বা বিদেশি মহিলার কথা নয়, এটা বিশ্বের গোটা নারী সমাজের কথা৷ জনবহুল দেশে যৌন হেনস্থার ঘটনা বেশি হয়, এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে জাগরি-র মুখপাত্র বলেন, জনসংখ্যার কথা নয়, নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার মানসিকতা৷ শিক্ষা, সংস্কৃতি, রুচির কথা৷
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বেলজিয়াম, জার্মানি, ডেনমার্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উগান্ডার নারীরা ভারতে এসে ধর্ষিতা হন৷ তা-ও এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে রাজধানী দিল্লিতে৷ নির্ভয়া গণ ধর্ষণকাণ্ডের পর মহিলাদের নিরাপত্তা আইন কঠোর করতে গঠিত হয় ভার্মা কমিশন৷ কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্ন পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়৷ বলা হয় ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ বিচারের কথা৷ তিন মাসের মধ্যে বিচার পর্ব শেষ করে অপরাধিকে শাস্তি দিতে হবে৷ পুলিশকে সেই অনুযায়ী যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে হবে৷ কিন্তু কোথায়? সবই বন্দি কাগজে-কলমে৷ ভারতে প্রতি ৩০ মিনিটে একটি করে ধর্ষণ বা যৌন লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে৷
বিষয়টি নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
ধর্ষিতার দুই আঙুল পরীক্ষা
কোনো নারী ধর্ষিতা হয়েছেন কিনা, তা নিরূপণের জন্য বিতর্কিত দুই আঙুল পরীক্ষা চালু করতে চেয়েছিল ভারত৷ এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়৷ শেষে অবশ্য বিশেষ কারণ ছাড়া পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়৷ কী এই পরীক্ষা?
ছবি: AP
প্রমাণ করার জন্য
ধর্ষণকারীকে সাজা দিতে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনাটাই যথেষ্ট নয়৷ ধর্ষণ যে হয়েছে, সেটা প্রমাণ করতে হয়৷ তাই এতদিন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা দুই আঙুল পরীক্ষা করতেন৷
ছবি: Fotolia/detailblick
সম্ভোগের অভ্যাস
নিগৃহীতা মহিলার যৌনসম্ভোগের অভিজ্ঞতা বা অভ্যাস আছে কিনা, তা যাচাই করা হতো, কোথাও কোথাও এখনও হয়ে থাকে যোনিপথে আঙুল ঢুকিয়ে৷
ছবি: AP
কুমারিত্বের প্রমাণ
আঙুলের স্পর্শে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, একজন নারীর সতীচ্ছদ অক্ষত আছে কিনা, অর্থাৎ সেই নারীর কুমারিত্ব অক্ষুণ্ণ আছে কিনা৷
ছবি: Fotolia/NinaMalyna
ভিত্তিহীন ধারণা
আঙুলের সাহায্যে নাকি বোঝা যায়, বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক হয়েছিল, না সম্মতি নিয়ে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পদ্ধতিকে ভিত্তিহীন বলে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
সর্বোচ্চ রায়
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালেই বলেছিল, দুই আঙুল পরীক্ষা ধর্ষিতার পক্ষে শারীরিক ও মানসিকভাবে অবমাননাকর৷ সরকারের বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান করা উচিত৷
ছবি: CC-BY-SA-3.0 LegalEagle
আর্মিতে ভর্তি হতে গেলে
ইন্দোনেশিয়ায় মহিলারা আর্মিতে ভর্তি হতে চাইলে, তাঁদের এই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়৷ দেশটির আর্মি প্রধান জেনারেল মোয়েলদোকোর কথায়, ‘‘দুই আঙুল পরীক্ষা নারীর আচার-আচরণ, চরিত্র নিরীক্ষণের মূল চাবিকাঠি৷’’ বলা বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও মধ্য-পূর্ব এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতেও এটি একটি চালু পরীক্ষা৷