উদ্বাস্তুদের তুরস্ক থেকে গ্রিস হয়ে মধ্য ইউরোপে যাবার পথ, তথাকথিত বলকান রুট, প্রায় বন্ধ৷ সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও ম্যাসেডোনিয়া উদ্বাস্তুদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করাই ‘‘সমগ্র সমস্যার সমাধান নয়'', বলেছেন ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন যে, এভাবে উদ্বাস্তুর স্রোত বন্ধ করার প্রচেষ্টা সফল হবে না, যদি না ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বাস্তু সংকটের প্রতি প্রশস্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ বলকান দেশগুলি যা করছে, তা সমগ্র সমস্যার সমাধান হতে পারে না৷ বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্যদেশের মধ্যে ঐকমত্যের প্রয়োজন৷
মনে রাখা দরকার, ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক কিন্তু ইতিপূর্বে বলকান দেশগুলির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এই বলে যে, বলকান দেশগুলি উদ্বাস্তু সংকটের মোকাবিলার জন্য ইইউ-এর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাস্তবায়িত করছে৷ অপরদিকে ম্যার্কেল বলেন যে, ইউরোপ যদি উদ্বাস্তুদের হতাশ করে, তাহলে ইতিহাস তার কঠিন বিচার করবে৷
বলকান দেশগুলির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর ম্যার্কেল জার্মানির সরকারি এমডিআর বেতারকে বলেন যে, ‘‘একক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না৷ এই পরিস্থিতি টেকসই বা স্থায়ী নয়৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, অস্ট্রিয়ার একক সিদ্ধান্ত, তারপর বলকান দেশগুলির সিদ্ধান্তের ফলে স্পষ্টতই আরো কম উদ্বাস্তু আসবে, কিন্তু গ্রিস একটি বিশেষ সমস্যাকর পরিস্থিতিতে পড়বে৷''
‘‘আমরা যদি তুরস্কের সাথে সমঝোতায় না আসতে পারি, তাহলে গ্রিস বেশি দিন এই বোঝা টানতে পারবে না'', বলে ম্যার্কেল মনে করেন, যে কারণে তিনি ‘‘একটি বাস্তবিক ইউরোপীয় সমাধানের'' সন্ধান করছেন৷ অপরদিকে গ্রিসে আটকে পড়া উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের কাছে তাদের ত্রাণকর্ত্রী যে কে, ডয়চে ভেলের অলিভার সালে-র ম্যাসেডোনিয়ার ইদোমেনি সীমান্ত থেকে পাঠানো একটি ভিডিও-তে তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷
তুরস্ক গ্রিস থেকে উদ্বাস্তুদের ফেরত নিতে রাজি, অথবা বলকান রুট বন্ধ বলেই যে জার্মানিতে উদ্বাস্তুদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে, এটা প্রত্যাশা করা সম্ভবত ভুল হবে৷ লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর একটি গ্র্যাফিকে দেখানো হয়েছে, উদ্বাস্তুরা কিভাবে বিকল্প রুটের খোঁজ করছে অথবা করতে পারে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, ডিডাব্লিউ)
ম্যার্কেল কি তাঁর শরণার্থী নীতিতে সফল হবেন? জানান মন্তব্যের ঘরে৷
ইউরোপে শরণার্থী সংকট চরমে
অস্ট্রিয়ার মোটরওয়েতে পরিত্যক্ত হিমায়ন যুক্ত ট্রাকটি থেকে এ যাবৎ ৭০টির বেশি লাশ পাওয়া গিয়েছে; লিবিয়ার উপকূলে আবার নৌকাডুবি হয়ে উদ্বাস্তুদের মৃত্যু৷ কিন্তু ইউরোপ এখনও বিভক্ত, দ্বিধাগ্রস্ত৷
ছবি: DW/E. Numanovic
অভিবাসীর মৃত্যু
হাঙ্গেরি থেকে ভিয়েনাগামী মোটরওয়েতে বৃহস্পতিবার ফেলে রাখা অবস্থায় যে রেফ্রিজারেটেড ট্রাকটি পাওয়া যায়, তা থেকে ৭০টির বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, বলে ভিয়েনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
ছবি: Reuters/H.P. Bader
সলিলসমাধি
লিবিয়ার উপকূল থেকে ইটালি পৌঁছনোর প্রচেষ্টায় আরো একটি উদ্বাস্তু বোট ডুবে যায় বৃহস্পতিবার৷ বোটটি পশ্চিম লিবিয়ার জুওয়ারা বন্দর থেকে যাত্রা করছিল৷ লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা দু’শোর বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন, কিন্তু আরো দু’শতাধিক যাত্রী জাহাজের খোলে আটকা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বোটটিতে প্রধানত সাব-সাহারান আফ্রিকা, পাকিস্তান, সিরিয়া, মরক্কো ও বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীরা ছিলেন৷
ছবি: Reuters/H. Amara
যাত্রী বোঝাই
লিবিয়ার উপকূলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ধারকার্যের দায়িত্বে রয়েছে ইটালির উপকূলরক্ষী বাহিনী৷ তাদের বিবৃতি অনুযায়ী শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারেই প্রায় ১,৪৩০ জন মানুষকে বিভিন্ন নৌ-অভিযানে উদ্ধার করা হয়৷ লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনীর সামর্থ্য সীমিত, কেননা তাদের কাছে ছোট ছোট রবারের বোট, টাগবোট কিংবা মাছ ধরার নৌকা ছাড়া অন্য কোনো জলযান নেই৷
ছবি: Reuters/Swedish Coast Guard
কাঁটাতারের বেড়া
পাকানো কাঁটাতার ফেলে রেখে আর বিপুল সংখ্যায় পুলিশ পাঠিয়ে বুদাপেস্ট সরকার উদ্বাস্তুর স্রোত সামাল দেবার চেষ্টা করছেন৷ সার্বিয়ার সঙ্গে ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে একটি চার মিটার উঁচু তারের বেড়া তৈরির কাজ আগামী সোমবার শেষ হবার কথা৷ তার আগে উদ্বাস্তুরা কাঁটাতার পেরিয়ে অভীপ্স পশ্চিম ইউরোপ অভিমুখে আরো এক ধাপ অগ্রসর হবার চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
সীমান্তের পর সীমান্ত
বিশেষ করে সিরীয় উদ্বাস্তুরা গ্রিস থেকে ম্যাসিডোনিয়া হয়ে পশ্চিম ইউরোপ যাবার চেষ্টা করছেন৷ শুধুমাত্র বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার অবধি ১,২৮৮ জন উদ্বাস্তু এ ভাবে ম্যাসিডোনিয়ায় আসেন বলে স্কোপিয়ে সরকার জানিয়েছেন৷ উদ্বাস্তুদের নথিভুক্ত করে তিন দিন সময় দেওয়া হচ্ছে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন পেশ করার কিংবা দেশ ছাড়ার জন্য৷
ছবি: Annette Groth
হাঁটাপথে
সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরি-তে ঢোকার আর কোনো পথ খোলা না থাকুক, রেলপথ তো রয়েছে! সেই পথেই পায়ে হেঁটে স্বপ্নের ইউরোপের দিকে চলেছেন উদ্বাস্তুরা৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘‘ব্যর্থতা’’
বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় পশ্চিম বলকান সংক্রান্ত সম্মেলনে নেতারা ট্রাকে উদ্বাস্তুদের লাশ পাবার ঘটনা শুনে স্তম্ভিত ও বিমূঢ় হয়ে যান৷ ‘‘আমাদের ইউরোপীয় মনোবৃত্তি, অর্থাৎ সংহতির মনোভাব নিয়ে শীঘ্র এই অভিবাসন প্রশ্নের সমাধান করতে হবে’’, বলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল (বাম থেকে দ্বিতীয়)৷