ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করেছে অ্যামাজনের বাসিন্দারা। গণহত্যার অভিযোগও উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক আদালতের ফৌজদারি বিভাগের দ্বারস্থ ব্রাজিলের অ্যামাজনের বাসিন্দাদের একটি গ্রুপ। তাদের অভিযোগ, জাইয়া বলসোনারো একদিকে যেমন অ্যামাজন ধ্বংস করছেন, তেমনই অ্যামাজনে বসবাসকারী জনজাতিগুলিকেও শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন। আইনের ধোঁয়াশা তৈরি করে তাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যার ফলে লড়াই হচ্ছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। একেই গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন অ্যামাজনের বাসিন্দারা।
আন্তর্জাতিক সংজ্ঞায় গণহত্যা বা জেনোসাইড শব্দটির অর্থ কোনো গোষ্ঠী বা জাতি অথবা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মারা বা মারার চেষ্টা। ২০০২ সালের রোম স্ট্যাটিউট অনুসারে এই সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়। একই সঙ্গে মানবজাতি এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টিও সেখানে ঢোকানো হয়। আন্তর্জাতিক আদালতে অ্যামাজনের নাগরিকরা যে অভিযোগ জানিয়েছেন, সেখানে ওই স্ট্যাটিউটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন যাঁদের জন্য দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো সম্প্রতি তাঁর স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন৷ তবে সেই কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অ্যামাজনে বাস করা আদিবাসীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো গত বুধবার একটি নতুন বিল প্রস্তাব করেছেন৷ কংগ্রেসে এটি পাস হলে অ্যামাজনে খনি, কৃষিকাজ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সহজ হবে৷ তিনি আশা করছেন, তাঁর এই ‘স্বপ্ন’ পূরণ হবে৷
ছবি: AFP/S. Lima
আদিবাসীদের দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিলের আদিবাসী সংগঠনের কর্মকর্তা সোনিয়া গুয়াজাজারা বলছেন, ‘‘বলসোনারোর স্বপ্ন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন৷ এটা আমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে৷ খনি কোম্পানি মৃত্যু, রোগ আর কষ্ট নিয়ে আসে৷ এবং এটা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে৷’’ ব্রাজিলে কমপক্ষে একশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস, যাঁদের এখনও বাইরের বিশ্বের ছোঁয়া লাগেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনা যেমন, প্রায় তেমন ভাবনা ব্রাজিল প্রেসিডেন্টেরও৷ তাই অনেকে তাঁকে ‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’ নামেও ডাকেন৷ গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পর অ্যামাজন বিষয়ে বলসোনারোর নেয়া বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন পরিবেশকর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
প্রেসিডেন্টের হুমকি
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অ্যামাজন রক্ষা করতে চান পরিবেশবাদীরা৷ তাই নতুন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে তাঁদের একহাত নিয়েছেন বলসোনারো৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি পরিবেশকর্মীরা আমাদের উপর চাপ দেবে৷ পারলে আমি তাঁদের অ্যামাজনে বন্দি করে রাখতাম, কারণ তাঁরা পরিবেশ খুব পছন্দ করেন৷’’
ছবি: Reuters/U. Marcelino
আইন সহজ করেছেন
গবেষক ব্রেন্ডা ব্রিতো বলছেন, ব্রাজিলের আইন জমি দখল ও বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে৷ ‘‘এটি (এই আইন) আপনাকে জমি দখলের অনুমতি দেয়, যদি আপনি একে কাজে (বৈধ কাজ) লাগানোর ভান করেন, এবং এরপর জমির মালিকানা দখল করে নেন৷’’ বলসোনারো এই আইন আরও সহজ করে জমি দখলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ এছাড়া আগে যেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জমি নিয়ন্ত্রণে থাকলে মালিক হওয়া যেত সেখানে নতুন আইনে ঐ সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৪ সাল করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/C. de Souza
এলাকা দ্বিগুন হয়েছে
বলসোনারো আসার পর গতবছর ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যামাজন ধ্বংস হয়েছে৷ আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ২১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি৷
ছবি: AFP/R. Alves
প্রতিবাদ করলে হুমকি
স্থানীয়রা জমি দখল ও বন ধ্বংসের প্রতিবাদ করলে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ যেমন স্থানীয় নেতা দে মেলো থাকেন নভো প্রোগ্রেসো এলাকায়৷ গতবছর ঐ এলাকার অ্যামাজনে আগুন লাগার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল৷ দে মেলো প্রতিবাদ করায় তাঁর ছেলেকে মারধর করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০১৮ সালে তাঁর গ্রামের তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ১৬ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/M. Carwardine
7 ছবি1 | 7
অ্যামাজনের প্রায় সমস্ত গোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে তৈরি হয়েছে এপিআইবি বলে একটি সংগঠন। মামলাটি তারাই করেছে। তাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ধরে বলসোনারো অ্যামাজনের বাসিন্দাদের অপমান করেছেন। তাদের অধিকারের প্রশ্ন সামনে এলেই তিনি চিড়িয়াখানার জন্তুদের সঙ্গে তাদের তুলনা করেছেন। একবার নয়, বারবার। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, অ্যামাজনের জনগোষ্ঠীদের জন্য চিহ্নিত জায়গায় অবাধে খনি তৈরি করতে দিয়েছেন বলসোনারো। গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। অ্যামাজনের জনগোষ্ঠীর জঙ্গলের অধিকার আছে। সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাদের জন্য জায়গা চিহ্নিত করার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এপিআইবি-র অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, খনির মালিকরা তাদের এলাকায় এসে কাজ করতে গেলে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অ্যামাজনের জনগোষ্ঠীর বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার দায় বলসোনারোকে নিতে হবে। তিনি পরিকল্পনামাফিক জনগোষ্ঠীগুলিকে ধ্বংস করতে চাইছেন। সে কারণেই তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে এটাই প্রথম বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা নয়। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছিল। অ্যামাজনে আগুন লাগার পিছনে বলসোনারোর হাত আছে, এমন অভিযোগ উঠেছিল। অ্যামাজন ধ্বংস করে ওই এলাকা তিনি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। হেগের আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, নতুন মামলাটিকে পুরনো মামলাটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে। মামলার শুনানি শুরু হবে বলেও আদালতের তরফে জানানো হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের দাবি, বলসোনারোর আমলে ব্রাজিলের অ্যামাজনের অনেকটাই ধ্বংস করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিজে প্রকাশ্যে বলেছেন, অ্যামাজন রক্ষা করতে গেলে উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।