বলসোনারোর হাঙ্গেরির দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে তদন্ত শুরু
২৬ মার্চ ২০২৪
বলসোনারো হাঙ্গেরির দূতাবাসে দুইদিন গিয়ে ছিলেন। ব্রাজিলের পুলিশ তার তদন্ত শুরু করেছে।
বিজ্ঞাপন
বলসোনারোর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। বলসোনারো দুইদিন হাঙ্গেরির দূতাবাসে ছিলেন। পুলিশ তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বলসোনারোর সম্পর্ক বেশ ভালো। ২০২২ সালে হাঙ্গেরি সফরের সময় বলসোনারো তাকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করেছিলেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অর্বানও দক্ষিণপন্থি নেতা। ব্রাজিলের এই অতি-দক্ষিণপন্থি রাজনীতিক ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি দূতাবাসে আশ্রয় নেয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে অভিযোগ।
তদন্ত নিয়ে যা জানা গেছে
নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছিল, সিকিউরিটি ফুটেজ দেখা গেছে. বলসোনারো হাঙ্গেরির দূতাবাসে ১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিলেন।
ব্রাজিলের পুলিশ জানিয়েছে, ২০২২ সালের নির্বাচনের পর বলসোনারো সেই ফলাফল মানতে চাননি। তিনি ভোটের ফল বদলে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ।পুলিশ বলসোনারোর ব্রাজিল ও ইটালির পাসপোর্ট আটক করার পরই তিনি হাঙ্গেরির দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বলসোনারোর দুই ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি করেছে এবং সেখান থেকে নথিপত্র আটক করেছে।
বলসোনারোর বিরুদ্ধে মাঠে ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীরা
ফুটবল ফ্যানরা নানা ধরনের কমর্কাণ্ডের ফলে প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হন৷ কিন্তু এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবল ফ্যানরা এক হয়েছেন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে, রাজপথে আন্দোলন করছেন গণতন্ত্রের দাবিতে৷
ছবি: Rogerio Bassetto
বর্ণবাদী, সমকামীবিদ্বেষী
জাইর বলসোনারোকে ব্রাজিলের অনেকেই অগণতান্ত্রিক, বর্ণবাদী এবং সমকামীবিদ্বেষী বলে উল্লেখ করে থাকেন৷ তার গ্রহণ করা নানা পদক্ষেপ দেশের জন্য ক্ষতিকরও মনে করেন অনেকে৷ এবার তাই রাজপথে নেমেছেন বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবলপ্রেমীরাও৷ ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব কোরিন্থিয়ান্সের ফ্যান রোজারিও বাসেত্তো বলছেন, ‘‘মানবতার এই শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে৷’’
ছবি: Rogerio Bassetto
সব ক্লাব এককাট্টা
বাসেত্তো কোরিন্থিয়ান্সের ফ্যান হলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অন্য আরো তিন ক্লাবের ফ্যানরাও এই ক্ষেত্রে তাকেই নেতা বলে মেনে নিয়েছেন৷ পালমেইরাস, সাও পাওলো এবং সান্তোসের ভক্তরাও রাজপথে নেমেছেন বাসেত্তোর নেতৃত্বে৷ কে কোন দলকে সমর্থন করেন? এ প্রশ্নের উত্তর এখন আর জরুরি না৷ উগ্র ডানপন্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই এখন সবার মূল লক্ষ্য৷
ছবি: Rogerio Bassetto
বামপন্থিরা নীরব
বলসোনারোর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিলের বামপন্থি দলগুলো৷ বাসেত্তো মনে করেন, বিভিন্ন দল ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ভয় পেয়ে চুপ করে আছেন৷ অন্যদিকে বলসোনারোর কর্মীরা রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করছে৷ ফলে নিজেকে কট্টর বামপন্থি হিসেবে পরিচয় দেয়া বাসেত্তোর মতো ফুটবল ফ্যানরা এখন রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zarbietti
ফুটবলের রাজনৈতিক ঐতিহ্য
১১০ বছর আগে এক সামরিক স্বৈরাচারীকে রুখে দেয়ার আন্দোলনে জন্ম হয় কোরিন্থিয়ান্স ক্লাবের৷ সেই সময় থেকেই ফুটবল ক্লাবটির রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য৷ কোরিন্থিয়ান্স ফ্যানদের ক্লাবেরও বয়েস এখন ৫০৷ ক্লাবের মোটো ‘‘হারি বা জিতি, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে৷’’ সেই ঐতিহ্যকে স্মরণ করেই এবার বলসোনারোকে রুখে দেয়ার দায়িত্ব অনুভব করছেন ক্লাবের কট্টর ফ্যানরা৷
ছবি: Rogerio Bassetto
বলসোনারো ব্যর্থ, ফুটবলের জয়
করোনা মহামারির শুরু থেকেই একে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এসেছেন বলসোনারো৷ দেশটিতে এরই মধ্যে ২০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত, মারা গেছেন ৮০ হাজার মানুষ৷ দরিদ্ররা কাজ হারাচ্ছেন, পাচ্ছেন না ত্রাণও৷ কেবল রাজপথে আন্দোলন না করে দরিদ্রদের সহায়তায়ও এগিয়ে এসেছেন ফুটবল ফ্যানরা৷ এরই মধ্যে চার হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে সহায়তা প্যাকেজ৷ দ্রুতই এমন আরো সহায়তার কথাও জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: Rogerio Bassetto
5 ছবি1 | 5
বলসোনারোর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট হাঙ্গেরির দূতাবাসে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন, তিনি গ্রেপ্তারি এড়ানোর জন্য যাননি।
তারা জানেয়েছেন, বলসোনারো হাঙ্গেরির দূতাবাসের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। অন্য যে সব কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোনো যোগ নেই।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা হাঙ্গেরির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কেন বলসোনারো দূতাবাসে ছিলেন।
গত বছর ব্রাজিলের আদালত রায় দিয়েছে, ২০৩০ পর্যন্ত তিনি কোনো পদে থাকতে পারবেন না। কারণ, তিনি ২০২২-এর নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলার কাছে পরাজিত হওয়ার পর ভুল তথ্য প্রচার করেছিলেন।
গত ১৯ মার্চ ব্রাজিলের পুলিশ অভিযোগ করে, বলসোনারো তার করোনার টিকা সংক্রান্ত রেকর্ডে জালিয়াতি করেছিলেন।
দুই সপ্তাহ আগে ব্রাজিলের সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধান জানিয়েছিলেন, বলসোনারো তাদের সঙ্গে একটা খসড়া ডিক্রি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, লুলার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না।