ভারতের একটি নারী অধিকার সংস্থা সিনেমাপাগল ভারতীয়দের বলিউডের যৌন আবেদনময়ী গানগুলো পুনরায় লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে৷ এ সব গানে নারীদের অসম্মান এবং নারী বিদ্বেষ উপস্থাপিত হয়েছে বলে অভিযোগ সংস্থাটির৷
বিজ্ঞাপন
নারী অধিকার সংস্থা ‘আকশারা সেন্টার' গত বছরের ডিসেম্বরে ‘গানা রি-রাইট' প্রতিযোগিতা চালু করেছে৷ তাদের মতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের যেসব গানে নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, নারীদের অসম্মান করা হয়েছে, নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বা নারীদের উত্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে, সেসব গানগুলোর কথা পরিবর্তন করে তাদের কাছে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি৷ এই ধরনের প্রতিযোগিতায় যদি বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে, তবে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রিতে পরিবর্তন আনার জন্য আবেদন করা যাবে বলে মনে করে তারা৷
মুম্বইয়ের আকশারা সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর স্নেহাল ভেলকার বলেন, ‘‘লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটা করা হচ্ছে৷ কেননা সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে যেখানে পুরুষরা এইসব বিকৃত গান গেয়ে নারীদের উত্যক্ত করছে৷''
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বলিউডের এমন কিছু গান আছে, যা গাওয়া এবং নাচার জন্য একেবারেই উপযুক্ত, কিন্তু যখন মনোযোগ দিয়ে শুনবেন তখন লক্ষ্য করবেন হয় একই শব্দের ভিন্ন কোনো লুকানো অর্থ রয়েছে এবং নারীদের উপজীব্য করা হয়েছে, নারীদের জন্য যা অসম্মানজনক৷ এ সব গানে নারীদের হয়রানিকেও স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া হয়েছে, যা দৈনন্দিন জীবনে নারীদের প্রতি সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷''
বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি বলিউড থেকে প্রতি বছর কয়েকশ' চলচ্চিত্র মুক্তি পায়৷ এসব চলচ্চিত্রের মুখ্য বিষয় প্রেম এবং রোম্যান্স, পারিবারিক কাহিনি বা মারপিট৷ আর এর মধ্যে গুটি কয়েক গান এবং নাচ বাধ্যতামূলক৷
যে নায়ক-নায়িকারা ফ্লপ থেকে হিট
তাঁদের অনেকে এখনো সিনেমা জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ কেউবা মৃত্যুর পরও রয়ে গেছেন ভক্তদের হৃদয়ে৷ ছবিঘরে ভারতীয় চলচ্চিত্রের এমন কয়েকজন তারকার কথা জানা যাবে যাঁরা শুরুতে অসফল ছিলেন, তবে পরে খুবই সফল হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উত্তম কুমার
১৯৪৮ সালে উত্তম কুমারের প্রথম সিনেমা ‘দৃষ্টিদান’ মৃক্তি পায়৷ এর আগে ‘মায়াডোর’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করলেও সেটি মুক্তি পায়নি৷ এরপর আরো ৪-৫টি মুভি করেছিলেন যার একটিও ব্যবসাসফল ছিল না৷ ‘ফ্লপ মাস্টার’ খেতাবও জুটেছিল তাঁর ভাগ্যে৷ ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি তার ক্যারিয়ারে প্রথম সাফল্য যোগ করে৷ এরপর তো ইতিহাস৷ বাঙালির জীবনে এখনো তিনি ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’৷
ছবি: RDB Entertainments
রাজ কাপুর
১৯৩৫ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে অভিনয় শুরু৷ প্রথম ছবির নাম ‘ইনকিলাব’৷ এরপর ১২ বছর টানা কাজ করে গেছেন, কিন্তু একটি মুভিও ব্যবসাসফল হয়নি৷ ১৯৪৭ সালে মধুবালার বিপরীতে ‘নীল কমল’ সিনেমা তার ঝুলিতে সাফল্য এনে দেয়৷ এরপর তো ইতিহাস৷ পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে প্রায় সমানভাবেই দাপিয়েছেন বলিউডে৷ জনপ্রিয় হয়েছেন বিশ্বব্যাপী৷
অমিতাভ বচ্চন
১৯৭০ এ ‘সাত হিন্দুস্থানী’ মুভি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, যা খুব একটা আলোচনায় আসেনি৷ তবে ১৯৭১ সালে রাজেশ খান্নার সাথে ‘আনন্দ’ মুভি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট৷ তারপরই ধীরে ধীরে সুপারস্টারে পরিণত হন তিনি৷
ছবি: Reuters
ঐশ্বরিয়া রায়
১৯৯৪ সালে বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট জেতার পর ১৯৯৭ সালে তামিল সিনেমা ‘ইরুবর’ এবং পরে হিন্দি মুভি ‘অর পেয়ার হো গ্যায়া’ দুটো মুভিই ফ্লপ ছিল৷ পরে ‘জিন্স’ মুভিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়৷ এরপর ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ বক্স অফিসে হিট হলে ঐশ্বরিয়াকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি৷ এরপর বলিউড হয়ে হলিউডেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/I. Gavan
রজনীকান্ত
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার এই সুপারস্টার অভিনয় জগতে আসার আগে বাস কন্ডাক্টর ছিলেন৷ তারপর অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন এই তারকা৷ ১৯৭৫ সালে তামিল সিনেমা ‘অপূর্ব রঙ্গলাল’ সিনেমায় ছোট একটি ভূমিকায় অভিনয় দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে আবির্ভাব৷ ছবিটি ব্যবসাসফল না হলেও রজনীকান্ত সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন৷ এখন পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP
মাধুরী
১৯৮৪ সালে মাধুরী অভিনীতি প্রথম সিনেমা ‘অবোধ’ একেবারেই ব্যবসা সফল হয়নি৷ ১৯৮৮ সালে ‘তেজাব’ বক্সঅফিসে হিট হলে মাধুরীকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি৷ একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: AP
অক্ষয় কুমার
মার্শাল আর্ট শিক্ষকের ভূমিকায় অভিষেক হওয়া অক্ষয় কুমারের বলিউড যাত্রাটা খুব একটা সুখকর ছিল না৷ ১৯৯১ সালে ‘সৌগন্ধ’, ‘আজ’, ড্যান্সার, অর্থাৎ প্রথম তিনটি ছবিই ফ্লপ হয়৷ তবে ‘খিলাড়ি’ ভাগ্য ফিরিয়ে দেয়৷ এখন তিনি অন্যতম জনপ্রিয় তারকা ৷ একসময় কিন্তু ব্যাংককের একটি রেঁস্তোরায় বাবুর্চি ও বেয়ারা হিসেবে কাজ করতেন অক্ষয়৷
ছবি: AP
রানী মুখার্জী
১৯৯৭ সালে রানীর প্রথম সিনেমা ‘রাজা কি আয়েগি বারাত’ মুক্তির পর ব্যবসা সফল না হলেও রানীর অভিনয়ের প্রশংসা হয়েছিল৷ এরপর ১৯৯৮ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘গুলাম’ মুভি বক্স অফিসে হিট৷ পরের বছর ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ থেকে শুরু করে ‘মার্দানী’ পর্যন্ত প্রায় সব মুভিতেই নিজেকে অন্য অবস্থানে নিয়ে গেছেন রানী৷
ছবি: DW
দেবানন্দ
নায়ক হওয়ার আগে কেরানীর পদে চাকরি করতেন প্রয়াত এই বলিউড তারকা৷ বলিউডে ১৯৪৬ সালে ‘হাম এক হ্যায়’ মুভি মুক্তি পায়৷ তখন থেকেই জনপ্রিয় এই তারকা৷
ছবি: AP
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
২০০০ সালে বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জেতার পর ২০০২ সালে ‘হামরাজ’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক৷ সেই মুভি ততটা ব্যবসাসফল না হলেও বর্তমানে বলিউড থেকে হলিউড কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই অভিনেত্রী৷
ছবি: Getty Images/The People's Choice Awards/F. Harrison
10 ছবি1 | 10
আর কয়েকটি সিনেমাতে তথাকথিত ‘আইটেম নাম্বার' বা ‘আইটেম সং' থাকবে সেখানে ছোট পোশাক পরিহিত একজন নারীকে উপস্থাপন করা হবে৷ সম্প্রতি ভারতে নারীর প্রতি সহিংসতার বেশ কিছু ঘটনা শিরোনাম হওয়ার পর নারী অধিকার কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখেন৷ যেখানে তাঁরা লক্ষ্য করেন বলিউডের বিভিন্ন মুভি দেখে পুরুষরা এ সব অপরাধ করতে আগ্রহী হয়৷ যুক্তরাজ্যের অ্যাকশন এইড এর জরিপ অনুযায়ী, ভারতে প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে চারজন পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির শিকার হয়৷ এর মধ্যে বাজে কথা বলা, স্পর্শকাতর অঙ্গে স্পর্শ এবং ধর্ষণ রয়েছে৷
‘মেরে ফটো কো সিনে মে ইয়ার...', ‘শীলা কি জাওয়ানি...', ‘মুন্নি বাদনাম হুয়ি....', ‘যারা যারা টাচ মি...', ‘চিকনি চামেলি...', ‘পালঙ্ক তোড় হ্যায় তেরি জাওয়ানি....', ‘মেরি জাওয়ানি সোডে কি বোতল...' – এছাড়াও অশ্লীল কথার অনেক গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ কেবল অখ্যাত গীতিকাররা নন, জাভেদ আখতার এবং প্রসূন যোশীর মতো খ্যাতিমান গীতিকাররাও এ ধরনের গান লিখে সমালোচিত হয়েছেন৷
গত বছরের শুরুতে তামিল চলচ্চিত্র শিল্পে নারীদের উত্যক্ত করাকে ‘কুল' ভাবে না দেখিয়ে অপরাধ হিসেবে দেখানোর দাবি জানান নারী অধিকার কর্মীরা৷ ভারত সরকার লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীদের উত্যক্ত করার বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোর করেছে৷ তাই আকশারা সেন্টার আহ্বান জানিয়েছে বলিউড কেবল ব্যবসার দিকে নজর না দিয়ে নারীদের প্রতি যাতে আরও দায়িত্বশীল হয়৷ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ‘হ্যাশ বলিউডক্যানচেঞ্জ' ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
এপিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)
এ বিষয়ে আপনার কি কোনো বক্তব্য আছে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
সবচেয়ে বেশি আয় করা অভিনেতারা
চলচ্চিত্র অঙ্গনে আয়ের দিক থেকে ভারতের শাহরুখ খান হলিউডের অনেক বড় বড় তারকাকে পেছনে ফেলেছেন৷ ছবিঘরে দেখে নিন ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত জুন ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অভিনেতাদের আয়ের পরিমাণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০ নম্বর
হলিউড তারকা হ্যারিসন ফোর্ড রয়েছেন ২০ নম্বরে৷ গত এক বছরে তার আয় ১.৫ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: Imago/AD
১৯ নম্বর
ম্যাথু ম্যাককনে ১.৮ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছেন গত এক বছরে৷