বসনিয়ার যে ক্যাফেতে ডাউন সিন্ড্রোম থাকা মানুষেরা কাজ করেন
৮ ডিসেম্বর ২০২৩
বসনিয়ার ‘ড্রাগনস হার্ট ক্লাব' ক্যাফেতে ডাউন সিন্ড্রোম থাকা মানুষেরা কাজ করেন৷ শুরুতে ক্রেতা না পেলেও সামাজিক মাধ্যমে সফল ক্যাম্পেইনের পর সেটি এখন অনেক ক্রেতা পাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সাশা সুনিয়াকের কাছে তার চাকরিই সব৷ তিনি ‘ক্লাব স্মায়েভো সারসা' বা ‘ড্রাগনস হার্ট ক্লাব' ক্যাফেতে কাজ করেন৷ সাশার হৃদয়টা একজন যোদ্ধার মতো: কখনও হাল ছাড়েন না, এমনকি কঠিন সময়েও৷ ‘‘আমার খুব ভালো লাগে, আনন্দ হয়৷ এখানে কাজ করতে ভালোবাসি, আমার সবসময় ভালো লাগে! কোনো বিশ্রাম না নিয়ে আমি ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে পারবো,'' বলেছিলেন সাশা সুনিয়াক৷
তার সহকর্মী বরিস কুসুমোভিচ কথা বলতে পারেন না, কিন্তু তাতে সমস্যা নেই৷ তিনি এমনকি, ক্যাফেতে একটি বিছানা রাখতে চেয়েছিলেন, যেন রাতটা সেখানেই কাটাতে পারেন৷
তারা দুইজন ভাগ্যবান৷ বসনিয়ায় এমন ক্যাফে একটিই আছে৷
স্মায়েভো সারসা এসোসিয়েশনের ওমর ইসোভিচ জানান, ‘‘তাদের চেহারার দিকে তাকালে, তাদের পরিবারের দিকে তাকালে আপনি বুঝবেন যে, এই ক্যাফে তাদের জন্য যেন দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে৷ তাদের মা-বাবারা বলছেন, তাদের সন্তানেরা আগে কখনও এতটা আনন্দে ছিলেন না৷''
তবে প্রকল্পটা শুরুতে ব্যর্থ হতে চলেছিল৷ কারণ, প্রথম কয়েক মাস অতিথি তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না৷ পাশের ক্যাফেতে অনেকে গেলেও ড্রাগনস হার্টে কেউ যেতেন না৷
তবে এডিমা এফেনডিচ-জিনিচ ব্যতিক্রম ছিলেন৷ তিনি সাশাকে ছোটবেলা থেকেই চিনতেন৷ তাই প্রায় প্রতিদিনই সাশার ক্যাফেতে যেতেন৷ কয়েক সপ্তাহ আগের এক শনিবারে তিনিই একমাত্র অতিথি ছিলেন৷ ওমর তার ছবি তুলেছিলেন৷
এডিমা এফেনডিচ-জিনিচ বলেন, ‘‘আমি জানতাম না, ওমর ছবি তুলেছিলেন৷ একদিন উনি আমাকে বলছিলেন যে, উনি ক্লাবটা এ মাসের শেষে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেবেন৷ আমি বলেছিলাম, এমন করতে হবে না৷ তিনি বলেছিলেন, এভাবে চালানো সম্ভব নয়৷''
ওমর ইসোভিচ বলেন, ‘‘বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর সব বদলে যায়! প্রথমে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তারপর জাতীয় গণমাধ্যমে৷ হঠাৎ করেই সকাল, সন্ধ্যা সবসময় আমরা ক্রেতা পাওয়া শুরু করি৷ প্রথম দুই, তিন সপ্তাহে টেবিল পাওয়া সহজ ছিল না৷''
ওটা অবিশ্বাস্য ছিল৷ এরপর থেকে খুব ভালো চলছে৷ ক্রেতারাও প্রশংসা করছেন৷ এক ক্রেতা বলেন, ‘‘আমি আপনাকে বলছি, এটা অন্যতম সেরা ক্যাফে! খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন৷ আর সার্ভিসও উঁচুমানের৷'' আরেকজন জানান, ‘‘প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম৷ আশা করিনি, কিন্তু তাতে কী! আমার মনে হয়, তারা আমাকে ও অন্য অতিথিদের অন্যান্য জায়গার চেয়ে একটু বেশি সম্মান ও বন্ধুত্বের সঙ্গে সেবা দিয়েছেন৷''
এখন অন্য এলাকায়ও এমন ক্যাফে খোলা হচ্ছে৷
ফাইট-উলরিশ ব্রাউন/জেডএইচ
২০১৮ সালে তৈরি একটি ছবিঘর:
বিশ্বের প্রথম ডাউন সিন্ড্রোম মডেল
জিনগত ত্রুটি ডাউন সিন্ড্রোমের ফলে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ভারসাম্যও অনেকক্ষেত্রে নষ্ট হয়৷ অথচ এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেডেলিন হয়ে উঠেছেন বিশ্বের প্রথম ডাউন সিন্ড্রোম মডেল৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
কিভাবে হলো শুরু?
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে মা রোসানে স্টুয়ার্টের সাথে এক ফ্যাশন প্যারেড দেখতে গিয়েছিলেন মেডেলিন৷ আলোর ঝলকানিতে উজ্জ্বল রানওয়েতে হাঁটতে থাকা দুর্দান্ত সব সুন্দরীদের দিকে সবার নজর৷ তখনই মায়ের দিকে ফিরে দৃঢ় কণ্ঠে জানান মেডেলিন, তিনি মডেল হতে চান৷ মেয়ের চোখের প্রত্যয় দেখে সাথে সাথেই তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেন রোসানে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
স্থূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত অন্যদের মতোই মেডেলিনও অতিরিক্ত স্থূলতায় ভুগছিলেন৷ তবে মডেলিং শুরুর আগেই শারীরিক সমস্যার কারণে ওজন কমাতে রীতিমতো লড়াইয়ে নামেন মেডেলিন৷ ২০১৫ সালেই রোসানে অন্যদের উৎসাহিত করতে অনলাইনে তাঁর মেয়ের কিছু ছবি শেয়ার করেন৷ এক সপ্তাহে ৭২ লাখ মানুষ সে পোস্ট দেখে৷ সংবাদ পরিবেশিত হয় ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
প্রথম ক্যাটওয়াক
অনলাইনে মেডেলিনের জনপ্রিয়তা দেখে সাউথ আফ্রিকার ফ্যাশন ডিজাইনার হেনড্রিক ভেরময়লেন নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক শো-তে তাঁর সাথে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান৷ এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷ একের পর এক বিশ্বখ্যাত ডিজাইনাররা মেডেলিনকে বেছে নেন তাঁদের মডেল হিসেবে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
ব্যস্ততম সূচি, বিশ্বজোড়া খ্যাতি
মেডেলিনের বয়স এখন ২১ বছর৷ গত চার বছরে লন্ডন, প্যারিস, দুবাইয়ের মতো ফ্যাশন শহরগুলোতে ৬০টিরও বেশি ক্যাটওয়াকে অংশ নিয়েছেন মেডেলিন৷ ২০১৮ সালের নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক শো-তে সাত জন ফ্যাশন ডিজাইনারের হয়ে রানওয়েতে হেঁটেছেন মেডেলিন৷ তবে বছর শেষ হতে বাকি এখনও আরো তিন মাস৷ এর আগেই লন্ডন ফ্যাশন উইকে আরো সাত ডিজাইনারের পোশাক পড়ে ক্যাটওয়াক করবেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
সমালোচনা, জবাব
অনেকেই রোসানের বিরুদ্ধে মেডেলিনকে দিয়ে জোর করে কাজ করানোর অভিযোগ করেছেন৷ তবে রোসানে বলছেন, ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্তরা অনেক একগুঁয়ে প্রকৃতির হয়৷ ফলে তাঁদের দিয়ে জোর করে কখনোই কিছু করানো যায় না৷ রোসানের ধারণা, মেডেলিনকে দিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্যাটওয়াক করানোর চেষ্টা করলে সে হয়তো মাঝপথে হাঁটু গেড়েই বসে থাকতো৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
মেডেলিনের বয়ফ্রেন্ড
রোসানে চেয়েছিলেন সব বাধা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পাক মেডেলিন৷ হয়েছেও ঠিক তাই৷ মডেলিংয়ে খ্যাতির পাশাপাশি নিজের জন্য খুঁজে নিয়েছেন বয়ফ্রেন্ডও৷ রবির সাথে মেডেলিনের পরিচয় হয় চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় এক স্পেশাল অলিম্পিকে৷ রবিও আক্রান্ত ডাউন সিন্ড্রোমে৷