আগুনে তছনছ বসনিয়ার একটি শরণার্থী শিবির। অভিযোগ, বসবাসকারীরাই আগুন লাগিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রায় বারোশ শরণার্থী বাস করছিলেন উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ার লিপা শরণার্থী শিবিরে। বুধবার সেই ক্যাম্পে আগুন লেগে যায়। বসনিয়া প্রশাসন এবং শরণার্থী শিবির পরিচালকদের বক্তব্য, ওই ক্যাম্পের মানুষই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। কারণ, বুধবারই ওই শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে নির্যাতনের শিকার যারা
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ অভিযোগ উঠেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ক্রোয়েশিয়া পুলিশ তাদের পিটিয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
ইইউর সীমান্তে নির্যাতন
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রবেশের চেষ্টাকালে সম্প্রতি ৭৫ জনেরও বেশি শরণার্থী এবং অভিবাসী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এভাবে প্রবেশ অবৈধ হলেও ইইউ আইনে কাউকে পেটানোর নিয়ম নেই৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে যিনি গত ১৩ অক্টোবর আরো কয়েকজনসহ সীমান্তে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন৷
ছবি: Danish Refugee Council
বাদ যাচ্ছে না কেউ
ইইউ বহিঃসীমান্তে নির্যাতনের শিকাররা অভিযোগ করেছেন কালো পোশাকের পুলিশ সদস্যরা কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই তাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটায়৷ বিশেষ করে কেউ ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করার পর তাদেরকে জোর করে বসনিয়াতে ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয়৷ অনেকক্ষেত্রে এই নির্যাতন পরিকল্পিত বলেও দাবি তাদের৷ ছবিতে একজন মরক্কোর নাগরিককে দেখা যাচ্ছে যাকে পিটিয়ে এই হাল করা হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
নিয়মিত ঘটছে নির্যাতন
বসনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্য রয়েছে এক হাজার কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত৷ ২০১৭ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রবেশের অন্যান্য রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসীরা ইইউতে প্রবেশের জন্য এই সীমান্ত বেছে নেয়৷ তারা সাধারণত তুরস্ক, গ্রিস হয়ে বসনিয়াতে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে যার হাত পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
অভিযোগ কালো পোশাকধারী পুলিশের বিরুদ্ধে
শরণার্থী ও অভিবাসীরা জানিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার একটি বিশেষ বাহিনী রয়েছে যারা কালো পোশাক এবং কালো মাস্ক পরে থাকে৷ শুধুমাত্র এই বাহিনী তাদের নির্যাতন করে বলে নির্যাতনের শিকার কয়েকজন জানিয়েছেন৷ ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনাগুলো যাচাই করছে সেদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Barukčić
ইইউ কি কোন উদ্যোগ নেবে?
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ এই বিষয়ে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইইউ এর ইলভা ইয়োহানসন৷ তবে, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সীমান্তে নির্যাতন বন্ধে এখন অবধি ক্রোয়েশিয়ার উপর কোন দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করেনি ইইউ৷
ছবি: Dursun Aydemir/picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুল পরিমাণ শরণার্থী বসনিয়ায় আটকে পড়েছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য তাঁরা রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু বসনিয়ায় পৌঁছানোর পরে তাঁরা আর এগোতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে অধিকাংশ শরণার্থীই জঙ্গলে বসবাস করছিলেন। কেউ কেউ বেছে নিয়েছিলেন বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শেড অথবা ভাঙা বাড়ি। পরে সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে অধিকার আন্দোলনকারীরা সরব হন। কয়েকটি ক্যাম্প তৈরি করা হয় শরণার্থীদের জন্য। যদিও তা মোট শরণার্থীর তুলনায় নেহাতই অপ্রতুল।
লিপার শিবিরও তেমনই একটি ক্যাম্প ছিল। তৈরির সময়েই বলা হয়েছিল, এই শিবির সাময়িক। বুধবার যে ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হবে, তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ক্যাম্পে বসবাসকারীরা এই ঠান্ডার মধ্যে কোথায় গিয়ে থাকবেন, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ফলে বুধবার ক্যাম্প ছাড়ার সময় ক্ষুব্ধ বসবাসকারীরা সেখানে আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
আশ্রয় হারানো এই শরণার্থীরা ইউরোপের প্রবল শীতে ফের জঙ্গলে গিয়ে থাকবেন। বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে আরো বহু আশ্রয়হীন মানুষের সঙ্গে যোগ দেবেন। ভাঙা বাড়ি, কারখানার শেডে দিন কাটাবেন। অভিযোগ, যে শিবিরে তাঁরা ছিলেন, সেখানেও বিদ্যুৎ ছিল না। ব্যবস্থা ছিল না হিটিংয়েরও।
বসনিয়ায় আটকে পড়া শরণার্থীদের এখনো পর্যন্ত আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি ইউরোপের কোনো দেশ। বসনিয়াও স্থায়ী ভাবে এই শরণার্থীদের রাখতে আগ্রহী নয়। যে কারণে, তাঁদের জন্য কোনো স্থায়ী ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। শরণার্থীদের অভিযোগ, ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে তাঁদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে সেখানকার পুলিশ। সব মিলিয়ে এই প্রবল শীতে দুর্বিসহ অবস্থা শরণার্থীদের।