শীত যত বাড়ছিল, দুর্ভোগ ততটাই বাড়ার শঙ্কা ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে৷ শীত মৌসুমের প্রথম তুষারপাত সে দুর্দশা বাড়িয়ে দিলো আরো কয়েকগুণ৷
বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তাঁবুছবি: Joan Giralt/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গল থেকে ডয়চে ভেলে বাংলা যখন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে, তখনই শীতের হাত থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা৷ বাইরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পলিথিনের তৈরি অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন তারা৷ কিন্তু সেটির ভেতরেও সহজেই জমে কুয়াশার ফোঁটা৷
আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ি দিয়েই রান্না ও শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছিলেন অনেকে৷ কিন্তু তাদের রসদও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুতই৷
বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, তুষারপাতের মধ্যেও বেশ কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশী সেই পলিথিনের অস্থায়ী ঘরগুলোতেই বাস করছেন৷
ছবি: Joan Giralt/AP/picture alliance
অনেকক্ষেত্রেই পলিথিনের তাঁবুর ওপর বরফ জমে তা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, ভেঙেও পড়ছে৷ উলের তৈরি টুপি, গরম পোশাক ও রেইনকোট পরে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছেন তারা৷ তবে প্রচণ্ড ঠান্ডার তুলনায় এসব ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল বলে বর্ণনা করা হয়েছে এপির সংবাদে৷
বাংলাদেশ থেকে আসা ৩০ বছর বয়সি শাহীন এপিকে বলেন, ‘‘এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা, গত রাতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম৷ আমাদের কোথাও ঘুমানোরও জায়গা নেই৷’’
তুষারপাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ অনেকে নিজেদের একমাত্র গরম কাপড় ধুয়ে শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রেখছিলেন৷ বরফ পড়ে মুহূর্তেই জামা-কাপড়-জুতা এমনকি অনেকের রাতের একমাত্র সম্বল কম্বলও ভিজে যায়৷
২২ বছরের আহমেদ জানান, তিনি কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছেন না৷ পরিস্থিতি দিনদিন টিকে থাকার জন্য ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়ছে বলেও জানান তিনি৷
গেমের নাম ইউরোপ
21:26
This browser does not support the video element.
১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধের পর থেকে এখনো অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বসনিয়া৷ ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবেই পরিচিত বসনিয়া৷ তার ওপর হাজার হাজার অভিবাসীর চাপ দেশটিকে আরো বিপদে ফেলেছে৷
বসনিয়ার রাজনীতিবিদরাও একমত হতে না পারায় সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছে না দেশটির সরকার৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কেউই বসনিয়ায় থাকতে চান না৷ তাদের লক্ষ্য সীমান্তের ওপাড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ক্রোয়েশিয়া গিয়ে দেখান থেকে ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানির মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে যাওয়া৷
কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাদের ক্রোয়েশিয়া বা স্লোভেনিয়া থেকে বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
ক্রোয়েশিয়া পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ বারবার উঠলেও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
এডিকে/এসিবি (এপি)
২৭ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে নির্যাতনের শিকার যারা
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ অভিযোগ উঠেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ক্রোয়েশিয়া পুলিশ তাদের পিটিয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
ইইউর সীমান্তে নির্যাতন
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রবেশের চেষ্টাকালে সম্প্রতি ৭৫ জনেরও বেশি শরণার্থী এবং অভিবাসী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এভাবে প্রবেশ অবৈধ হলেও ইইউ আইনে কাউকে পেটানোর নিয়ম নেই৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে যিনি গত ১৩ অক্টোবর আরো কয়েকজনসহ সীমান্তে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন৷
ছবি: Danish Refugee Council
বাদ যাচ্ছে না কেউ
ইইউ বহিঃসীমান্তে নির্যাতনের শিকাররা অভিযোগ করেছেন কালো পোশাকের পুলিশ সদস্যরা কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই তাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটায়৷ বিশেষ করে কেউ ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করার পর তাদেরকে জোর করে বসনিয়াতে ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয়৷ অনেকক্ষেত্রে এই নির্যাতন পরিকল্পিত বলেও দাবি তাদের৷ ছবিতে একজন মরক্কোর নাগরিককে দেখা যাচ্ছে যাকে পিটিয়ে এই হাল করা হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
নিয়মিত ঘটছে নির্যাতন
বসনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্য রয়েছে এক হাজার কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত৷ ২০১৭ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রবেশের অন্যান্য রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসীরা ইইউতে প্রবেশের জন্য এই সীমান্ত বেছে নেয়৷ তারা সাধারণত তুরস্ক, গ্রিস হয়ে বসনিয়াতে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে যার হাত পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
অভিযোগ কালো পোশাকধারী পুলিশের বিরুদ্ধে
শরণার্থী ও অভিবাসীরা জানিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার একটি বিশেষ বাহিনী রয়েছে যারা কালো পোশাক এবং কালো মাস্ক পরে থাকে৷ শুধুমাত্র এই বাহিনী তাদের নির্যাতন করে বলে নির্যাতনের শিকার কয়েকজন জানিয়েছেন৷ ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনাগুলো যাচাই করছে সেদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Barukčić
ইইউ কি কোন উদ্যোগ নেবে?
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ এই বিষয়ে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইইউ এর ইলভা ইয়োহানসন৷ তবে, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সীমান্তে নির্যাতন বন্ধে এখন অবধি ক্রোয়েশিয়ার উপর কোন দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করেনি ইইউ৷