1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বসনিয়ায় বৈধ বাংলাদেশি নির্মাণকর্মী, নতুন সম্ভাবনা

আরাফাতুল ইসলাম জেভরনিক, বসনিয়া থেকে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বসনিয়া-সার্বিয়া সীমান্তের জেভরনিকে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি৷ বৈধ ভিসাতে এখানে কাজ করতে এসেছেন তারা৷ দেশে পাঠাচ্ছেন লাখ টাকা৷

বসনিয়া-সার্বিয়া সীমান্তের জেভরনিকে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিছবি: Anupam Deb Kanunja

জার্মানি, ইটালি কিংবা হাঙ্গেরি–ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন না নির্মাণকর্মীরা৷ বরং বসনিয়ায় থাকতে আগ্রহী বাংলাদেশি এই নির্মাণকর্মীরা৷ কেউ অন্য দেশে কাজ করে তারপর বসনিয়ায় এসেছেন৷ কেউ বা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কয়েক মাস আগে বসনিয়া থেকে ইউরোপের অন্য দেশে যেতে চান না তারা, থেকে যেতে চান এ দেশেই৷ নানা শহরে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশিরা৷ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বসনিয়া-সার্বিয়া সীমান্তের জেভরনিকে ১২তলা একটি বিল্ডিং বানাচ্ছেন বাংলাদেশি নির্মাণকর্মীরা৷

বসনিয়ায় অভিবাসীদের কথা তুলে ধরেছেন ডয়চে ভেলে বাংলার প্রতিবেদকেরা৷ নির্মাণ সংস্থার তরফে এই কর্মীদের বৈধভাবে বসনিয়ায় নিয়ে আসতে সাহায্য করছেন মহিউদ্দীন তালুকদার মঈন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এখানে নির্মাণ কাজের জন্য দক্ষ লোক তেমনভাবে পাওয়া যায় না৷ বসনিয়ার তরুণেরাও অন্য দেশে চলে যাচ্ছে৷ এদিকে দক্ষিণ এশীয়রা অত্যন্ত পরিশ্রমী, দক্ষ৷ অভিজ্ঞ লোক চাইছে এই দেশও৷ সবমিলিয়ে কর্মসংস্থানের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে এখানে৷’’

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গড়া

মহিউদ্দীন বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাংলাদেশের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি এখানে৷ অভিবাসী হিসেবে নন, বৈধ ভিসা নিয়ে এখানে আসা সম্ভব, জানান তিনি৷ এখন তার এই নির্মাণ প্রকল্পে ১০৪ জন কর্মীর চাহিদা রয়েছে৷ ১৮ জন বাংলাদেশি এখানে কাজ করতে এসেছেন৷ আরো ৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক ভিসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে৷ তারা অপেক্ষা করছেন বৈধ ভিসার জন্য৷ বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে সাহায্যেরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি ডয়চে ভেলে বাংলার মাধ্যমে৷

তিন বছর আগে মহিউদ্দীনের সাহায্যে নোয়াখালি থেকে বসনিয়ায় এসেছিলেন সফিকুল ইসলাম৷ বৈধ ভিসায় এখানে রয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে পারি বাংলাদেশে৷ এখানে বসবাসের অভিজ্ঞতা বেশ ভাল৷ রান্নাবান্না করে নিজেরা খাওয়াদাওয়া করি৷ সংস্থাই ব্যবস্থাপনা করে আমাদের থাকা-খাওয়ার৷’’

বৈধভাবে বসনিয়ায় কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ পাঁচ বছর থেকে গেলে বসনিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পারেন, এমন কথাও বলেন সফিকুল৷ এক সময়ে তিনি শিক্ষকতা করতেন বাংলাদেশে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে স্পষ্ট জানান, ‘‘অন্য দেশে যাওয়ার ইচ্ছে নেই৷ অবৈধভাবে কেন যাব? বৈধ উপায়ে এখানেই ভবিষ্যৎ গড়ব৷ সৌদি আরবে নির্মাণ কাজ করেছি৷ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি৷’’

নোয়াখালি থেকে চার মাস আগে নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করতে বসনিয়ায় এসেছিলেন নূর হুসেন হাজি৷ তিনি বিল্ডিংয়ে প্লাম্বিংয়ের কাজ করছেন৷ আবার রঙের কাজ, নির্মাণ কাজও করছেন৷ তার কথায়, ‘‘এ শহরের মানুষেরা মিশুক, সৎ৷ তারা যথেষ্ট সাহায্য করছেন আমাদের৷ প্রথমে অনিয়মিত অভিবাসী ভাবতেন৷ পরে তারা বুঝতে পেরেছেন আমরা কাজ করতে এসেছি৷ তাই এখন সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন৷’’

ছবি: Anupam Deb Kanunja

সফিকুল, নূরের মতো অন্য দক্ষ কর্মীদের বসনিয়ায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লার জরুরি ভূমিকা রয়েছে, জানান মহিউদ্দীন৷ বসনিয়ার শিক্ষা বিভাগে কর্মরত মীর হক এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সহায়তার কথাও বলেন তিনি৷

মহিউদ্দীন বলেন, ‘‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্মাণ কর্মীদের বিষয়টি দেখলে খুব ভাল হয়৷ কাগজ জমা দিলে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হয়৷ শেখ হাসিনা স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ছেন, তাকে সমর্থন করি৷ দুবাই, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার রয়েছে৷ আশা করি বলকান রুটেও এমন ইতিবাচক কিছু হবে৷ বাংলাদেশের মানুষ এখানে কাজ পাবেন৷’’

বিল্ডিংয়ের ১০ তলায় পাইপ ফিল্টারের কাজ করছেন আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ সেলিম মাতব্বর৷ মাস চারেক আগে ভিসা পেয়ে এসেছিলেন তিনি৷ এখন মাসে ৫২ হাজার টাকা মাসে রোজগার করেন৷ বাড়িতে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে পারেন৷ নিয়মিত বেতন পেলে বসনিয়া ছেড়ে অন্য কোনও দেশে যেতে চান না, জানান মোহাম্মদ৷

মহিউদ্দীন জানান, জেভরনিক শহরের অন্য পারে সার্বিয়ার গ্রাম৷ মাঝে শুধু একটা নদী রয়েছে৷ রাতে অনেক অভিবাসী সাঁতরে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করেন৷ তবে নির্মাণের কাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রয়েছে, বৈধভাবে বসনিয়ায় আসা সম্ভব৷ বসনিয়ায় থাকতে আগ্রহী বাংলাদেশি নির্মাণকর্মীরাও৷

তার কথায়, পাঁচ বছর থাকলে বসনিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পারেন নির্মাণকর্মীরা৷ মিলবে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিও৷ তখন আইনিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ অন্য যে কোনো কাজও করতে পারবেন বাংলাদেশিরা৷ বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য পেলে বলকান রুটের দেশগুলিতে কর্মসংস্থানের নতুন দিশা খুলে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ