1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বসনিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছে

২৩ অক্টোবর ২০১৩

বসনিয়া-হ্যারৎসেগভিনা এই প্রথমবার বিশ্বকাপে যাচ্ছে, দেশের ফুটবল সমিতির কাঠামোয় বৈপ্লবিক সংস্কার আনার পর৷ বছর দু'য়েক আগেও জাতিগত বিভাজনের ভিত্তিতে ফুটবল সমিতির প্রেসিডেন্ট বদল হতো প্রতি ১৬ মাস অন্তর৷

Bosnia-Herzegovina's Avdija Vrsajevic (L) vies for the ball with Lithuania's Egidijus Vaitkunas during the FIFA 2014 World Cup group G qualifying football match Lithuania vs Bosnia-Herzegovina in Kaunas, Lithuania on October 15, 2013. Bosnia won the match 0-1 to secure their place at the World Cup. AFP PHOTO / PETRAS MALUKAS (Photo credit should read PETRAS MALUKAS/AFP/Getty Images)
ছবি: picture-alliance/dpa

বসনিয়ার ফুটবল দল যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফাইনালে৷ অথচ মাত্র দু'বছর আগে বসনিয়াকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে স্বল্পসময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল – কেননা জাতিগত রাজনীতি খেলাধুলার জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছিল৷ সেই বসনিয়াই এবার যে রাত্রে বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করল, সে রাত্রে স্পেন, ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মতো ফুটবলের পরাশক্তি, মহাশক্তিরাও বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করেছে৷

বসনিয়ার মানুষ আনন্দে আত্মহারা৷ সারাইয়েভোয় সারা রাত ধরে বাজি পুড়িয়ে, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তারা এই আনন্দের মুহূর্তটি চেখেছে – কেননা বসনিয়া যুদ্ধের সেই বিভীষিকা তো বেশিদিন আগেকার কথা নয়, যখন মুসলিম, সার্ব আর ক্রোয়াটরা পরস্পরের সঙ্গে নির্মম, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত ছিল৷

আলোকবর্তিকা

বিশ্বকাপ যাত্রা: সে-ও তো এক ধরনের জয়৷ শুধু জয়ই নয়, আলোকবর্তিকাও বটে৷ দেশ তো আজও জাতি-আর-জাতির বিভাজনে জর্জরিত৷ দুর্নীতি আর অন্তর্দ্বন্দ্বে ডুবে রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রচেষ্টাও সেই টানে সাত বাঁও জলে৷ এমন একটি দেশে ফুটবল যদি প্রগতি আর ঐক্যের আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়ায়, তবে মানুষজন সেটা উপলব্ধি করতে পারে বৈকি, তা সেটা তারা স্বীকার করুক আর নাই করুক৷

বসনিয়া বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করার পরদিনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণ কমিশনার স্টেফান ফুলে বলেছেন: ‘‘বসনিয়ার রাজনীতিকদের প্রতি আমার বার্তা হলো, আপনাদের ফুটবলারদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের মানুষদের প্রত্যাশা পূরণ করুন৷'' যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারানোর পর ১৯৯৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী বসনিয়ায় যে রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়, তাতেও সেই জাতিগত বিভাজনের বীজ প্রোথিত রয়েছে৷ তিনটি জাতিগত গোষ্ঠী পরস্পরের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে নিয়েছে, বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও পালা করে বদল হয়৷ এভাবেই ‘শান্তি' রক্ষিত হয়েছে বসনিয়ায়৷

ছবি: picture-alliance/dpa

সর্ষের মধ্যে ভূত

কিন্তু এটা এমন একটা প্রণালী যে, এর ফলে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ আস্কারা পেতে বাধ্য৷ দু'বছর আগেও বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশন ঠিক রাষ্ট্রের আদর্শেই সংগঠিত ছিল: ফেডারেশনের প্রেসিডেন্সি যেত প্রতি ১৬ মাস অন্তর সার্ব থেকে ক্রোয়াট থেকে মুসলিমদের কাছে৷ প্রণালীটায় যে কাজ হচ্ছিল না, সেটা খেলোয়াড়রা এবং স্পোর্টস কর্মকর্তারা নিজেরাই বলতেন৷ কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হতো জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে, তাদের দক্ষতার কারণে নয়৷ ফলে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তগুলোও হতো সেইরকম৷

একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক৷ প্যারি স্যাঁ-জার্মাঁর হয়ে খেলেন স্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, নিঃসন্দেহে ইউরোপের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন, সেই সঙ্গে সুইডেনের ক্যাপ্টেন, যে দেশে তাঁর জন্ম৷ এই ইব্রাহিমোভিচ কিন্তু বসনিয়ার হয়ে খেলতে পারতেন, অন্তত তাঁর ক্যারিয়ারের সূচনায় তাঁর বাবা, যিনি বসনিয়ার লোক, তেমন প্রস্তাবই দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশনের কেউ তা-তে কর্ণপাত করেননি৷

ফিফা, উয়েফার চাপ

ওদিকে বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশন তখন দেউলিয়া হবার মুখে৷ গতবছর ফেডারেশনের তিন কর্মকর্তাকে তহবিল তছরুপ আর কর ফাঁকি দেওয়ার দায়ে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছে৷ প্রবাসী বসনীয় খেলোয়াড় ও ফ্যানরা খেলাধুলায় রাজনীতির হস্তক্ষেপের কারণে জাতীয় দলকে বয়কট করতে শুরু করেন৷ ফিফা এবং উয়েফা মিলে একত্রে দাবি করে যে, বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশনের একজন প্রেসিডেন্ট থাকতে হবে, পালাবদল করে তিনজন নয়৷ সেই অনুযায়ী গত ডিসেম্বর মাসে এলভেদিন বেজিচ ফুটবল ফেডারেশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে একটি চার বছরের কর্মকালের জন্য নির্বাচিত হন৷ সেই সঙ্গে একটি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ নিযুক্ত করা হয় বসনিয়ার দু'টি স্বশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে: মুসলিম বসনিয়াক আর ক্রোয়াটদের ফেডারেশন এবং তথাকথিত সার্ব রিপাবলিক৷

জাতীয় দলের এই সাফল্য – বিশ্বকাপের কোয়ালিফিকেশন – বসনিয়া-হ্যারৎসেগভিনার মানুষের মধ্যে একডাকে সম্প্রীতি এনে ফেলতে পারবে না বটে, কেননা সেটা রাজনীতিকদের কাজ৷ তবে রাজনীতির মাঠে ফুটবল একটা চমৎকার প্রদর্শনী ম্যাচ খেলল বৈকি৷

এসি/ডিজি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ