নগর সংকট
৫ এপ্রিল ২০১২কলম্বোর কথা দিয়েই শুরু করা যাক৷ শ্রীলঙ্কার রাজধানী এই শহরটিতে নাগরিক যারা বসবাস করেন, তাঁদের ৩৪ শতাংশই বাস করছেন বস্তিতে৷ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষ বাস করেন বস্তিতে, নেপালের মোট বাসিন্দার ২৫ শতাংশ শহরবাসী, আর তাদের আবার ৪০ শতাংশ বস্তিতে অধিষ্ঠিত৷ ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯৩ মিলিয়ন মানুষ বস্তিবাসী আর রাজধানী দিল্লির মোট বাসিন্দার অর্ধেকের বসবাস বস্তিতেই৷ পাকিস্তানের বড় শহরগুলিতে ৩৬ শতাংশ বস্তিবাসী৷ আর ভারতের বাণিজ্য রাজধানী বলে পরিচিত চিত্রতারকাদের ঝাঁ চকচকে শহর মুম্বই-এর শতকরা ৬০ শতাংশ মানুষের আবাস হল এই বস্তি৷
ওপরে যে সমস্ত হিসেবনিকেশ বলা হল, তাহল এশিয়ার বাস্তব ছবির কিছুটা৷ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার নগর উন্নয়ন দপ্তরের এক সেমিনারে দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর ইন্দু বীরাসুরিয়া একটি তথ্য দিয়ে বলেন, কলম্বোর ৪৩ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী৷ যে সমস্ত বস্তিতে মানুষের বসবাসের সুযোগ সুবিধা ভালো মাত্রায় অপ্রতুল৷ স্বাস্থ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে যেখানে বসবাস করা অসম্ভব৷ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে ঢাকা, নতুন দিল্লি, করাচি কিংবা মুম্বইয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ কারণ বস্তির জীবন আসলে বস্তিরই জীবন৷
এই বস্তিবাসীরা যেহারে বড় শহরগুলিতে ক্রমশ ভিড় বাড়াচ্ছে, তাতে বেশিদিন নয়, সময় লাগবে মাত্র আর ২৫টি বছর৷ তারপরেই দেখা যাবে, নগরবাসীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে এইসব শহরগুলিতে৷ আর তাদের শতকরা ৫০ শতাংশেরও বেশি হবে বস্তিবাসী৷ নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, পয়ঃপ্রণালী এবং পানীয় জলের অব্যবস্থা নিয়ে প্রতিটি শহরের বুকে আরও গেড়ে বসবে এইসব বস্তি৷ ফলে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে উঠবে বিষময়৷ শহরের সৌন্দর্যায়নের প্রসঙ্গে কোন কথা বলার আর সুযোগ থাকবে না৷ এ তথ্য জানাচ্ছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের নগর উন্নয়ন, জল পরিবহণ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের ম্যানেজার মিং ঝাং৷ ঝাং জানাচ্ছেন, ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার এইসব বড় শহরগুলোর নাগরিকদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন করে পড়ছেন সেই হিসাবের তালিকায়, যাদের ‘নাগরিক' তকমা দেওয়াটা ভুল৷ কারণ তাঁরা নগরে বাস করলেও, বাস করেন অব্যবস্থাপূর্ণ বস্তিতে৷ যাতে নাগরিক সুবিধাগুলির কিছুই মেলেনা৷
পরিস্থিতি যেখানে তাতে যেকোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেখা যায় এই বস্তিবাসী ‘নাগরিক'দের চরম দুর্গতি৷ যেমনটা হয়েছিল ২০১০ সালে কলম্বোর বন্যায়৷ তাই প্রয়োজন নাগরিক পরিকল্পনার৷ কিন্তু, ঢাকা, কলম্বো বা মুম্বই বা করাচির মত শহরে বস্তির সংখ্যা এত দ্রুতবেগে বাড়ছে যে প্রশাসন কার্যত অসহায়৷ আগামীর ভবিষ্যৎ তাই সত্যিই সংকটাপন্ন৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন