প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ বলেছেন বস্তুনিষ্ঠ এবং গঠনমূলক সাংবাদিকতার কথা৷ ওদিকে এক বছরে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানিমূলক নির্যাতন বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা ও অনুদান প্রদান' অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমরা দেশে বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা দেখতে চাই৷ স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিবর্গ সমাজে অপসাংবাদিকতা চর্চা করার চেষ্টা করছে৷ তাই পেশার স্বার্থে এ সব ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আপনাদেরই সোচ্চার হতে আহ্বান জানাচ্ছি৷''
সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকরা ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য' পরিবেশন করেন৷ সমালোচনা যেন না হয়, যেটা আমার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর৷''
প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে সহায়তা পাওয়া ১৭৭ জন সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে ৬৩ জনের হাতে চেক তুলে দেন৷ প্রত্যেক সাংবাদিক ন্যূনতম ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা ও অনুদান পান এ দিন৷ তাছাড়া অনুষ্ঠানে এ-ও জানানো হয় যে, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬২৩ জন সাংবাদিককে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে সরকার৷
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
অন্যদিকে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানিমূলক নির্যাতনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন আর্টিকেল ১৯-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷ চলতি বছরের মে মাসে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়৷
‘ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ-২০১৪' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ এর মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়৷ গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক৷ হয়রানির মধ্যে রয়েছে মানহানি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাও৷
২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ৷ এক বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে এই হার হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ৷ এর প্রায় ২৩ শতাংশ নির্যাতনই হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া ২০১৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৬৬ দশমিক ৩১ শতাংশ৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে অন্তত ১০৬ শতাংশ৷ ২০১৩ সালে হয়রানির ঘটনা যেখানে ছিল মাত্র ৩৩টি, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮টিতে৷
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১০টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে৷ আর ২০১৪ সালে সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতাসহ ১৭ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আদালত অবমাননার অভিযোগের শিকার হয়েছেন৷
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির খুনিদের নিশ্চিত করা যায়নি! তাই নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে চলছে ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷
ছবি: DW
ছবিতে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে সাগর-রুনির পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
ছবি: DW
স্থান পেয়েছে কবরের ‘এপিটাফ’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দুই দরজায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির কবরের এপিটাফ-এর একটি আলোকচিত্র৷
ছবি: DW
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে সাংবাদিক দম্পতির কর্মস্থলের পরিচয়-পত্র৷ ঢাকায় মাছরাঙা টেলিভিশনে যোগ দেয়ার আগে সাগর সরওয়ার কাজ করতেন ডয়চে ভেলেতে আর মেহেরুন রুনি কাজ করতেন বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ৷
ছবি: DW
ছোটবেলার সেই দিনগুলো...
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিচয়-পত্রের পাশে রুনির ছোটবেলার আলোকচিত্র৷ মেহেরুন রুনির পারিবারিক অ্যালবামের এ সব ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW
‘আজও বড় ভালোবাসি তোমায়’
সাগর-রুনি ও তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের একটি মর্মস্পর্শী ছবি৷ ছবিটির বামদিকে মেঘের আঁকা বাবার ছবি আর ডানে মায়ের ছবি৷ কোনো এক ‘মা দিবসে’ ছবিটি এঁকেছিল মেঘ, যার পাশে কাঁচা হাতে লেখা – ‘‘ভালোবাসি মা’’৷
ছবি: DW
চঞ্চল মেঘের প্রশ্নবিদ্ধ চোখ
প্রদর্শনী জুড়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাহির সরওয়ার মেঘের চঞ্চলতা৷ পুরো গ্যালারি জুড়ে আপন মনে খেলে চলা ছোট্ট এই শিশুটির দু’চোখেই যেন বাবা-মা হত্যার বিচারের আকুতি৷ মেঘ কি পাবে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার?
ছবি: DW
ছোট্ট মেঘের হাতের কাজ
ডয়চে ভেলেতে কাজের সূত্রে মেঘকে নিয়ে সাগর-রুনির বসবাস ছিল জার্মানিতে৷ সে সময়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা মেঘের একটি ছবির অ্যালবাম৷
ছবি: DW
সত্যি কি আমরা ভুলে যায়নি?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা৷ আর তার সামনে, দেয়ালে লেখা ‘Let’s Forget Sagar-Runi’ – ‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’৷
ছবি: DW
হারিয়ে যাওয়া বোনের জন্য...
প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনির ছোটবেলার একটি ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছেন ভাই নওশেদ আলম৷ চার ভাই-বোনের মধ্যে রুনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷
ছবি: DW
দোষীদের খোঁজ পাওয়া যাবে তো?
রুনির আরেক ভাই নওশের রোমান৷ তিনি জানান, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন৷ এতে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস রয়েছে৷’’
ছবি: DW
কোথায় গেল সাগরের ল্যাপটপ?
প্রদর্শনীতে সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত ল্যাপটপের পাশে তাঁরই লেখা একটি বই৷ মাঝে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে একটি খেলনার পিস্তল৷
ছবি: DW
চোখে চশমা, মুখে সেই অনবদ্য হাসি
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত চশমা৷ এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিক দম্পতির বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে৷
ছবি: DW
আজও কেমন জলজ্যান্ত!
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভিডিও ক্লিপও৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার ভিডিও-চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রজেক্টরে৷
ছবি: DW
নৃশংসতার প্রতীক
নিহত এই সাংবাদিক দম্পতির প্রতি সম্মান জানাতে এবং একই সাথে পুরো রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন৷ ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তাঁরা৷
ছবি: DW
নীরবে-নিভৃতে কাঁদে...
মেহেরুন রুনির পুরনো ছবির সামনে অশ্রুসজল মা নুরন নাহার মির্জা৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে চলছেন এই মা৷
ছবি: DW
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও মেঘের ছবির সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলছেন এক দর্শনার্থী৷ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি৷
ছবি: DW
16 ছবি1 | 16
আর্টিকেল ১৯-এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক তাহমিনা রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী অপসাংবাদিকতার বিপক্ষে এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পক্ষে কথা বলেছেন৷ আমরাও চাই সাংবাদিকতা হবে বস্তুনিষ্ঠ৷ এবং অপসাংবাদিকতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে৷ সাংবাদিকরা যেসব কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তার মধ্যে অপসাংবাদিকতা একটি৷''
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে৷ সাংবাদিকরা যাতে ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্রকে৷ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা যেমন দিতে হবে, তেমনি তাঁরা যাতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য আক্রমণ বা হয়রানির শিকার না হন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আলাদা কোনো আইন নেই৷ হয়রানিমূলক মামলা হলে তার প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ তাই আমার মনে হয়, উন্নত বিশ্বের অনুসরণে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করা যেতে পারে বাংলাদেশে৷''
এর সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, মানহানি ও আদালত অবমাননাসংক্রান্ত আইনকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার কথাও বলেন তাহমিনা রহমান৷
ওদিকে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০১৪' অনুযায়ী, সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬৷ অথচ ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৪ আর ২০১২ সালে ১২৯-তে৷ অর্থাৎ আগের তুলনায় বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে বৈ কমেনি৷