1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বহিষ্কার করলেই দায় এড়ানো যাবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শুধু যুবলীগ নেতা নয়, ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত আওয়ামী লীগের আরো অনেক অঙ্গ সংগঠনের নেতা। আটক দুই শীর্ষ যুবলীগ নেতার ঘনিষ্ট ছবি আছে মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ নেতাদের সাথে। সেক্ষেত্রে দল কিভাবে দায় এড়ায়?

Bangladesch Aktion gegen illegale Casinos in Dhaka
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin

সর্বশেষ শনিবার আটক যুবলীগ সমবায় সম্পাদক নেতা জিকে শামীমকে১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তার নিকেতনের অফিস থেকে  এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর-এর কাগজপত্র  এবং মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। মাদক, অস্ত্র ও মানিলন্ডরিং আইনে তিনটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকায় সরকারি বিভিন্ন কাজের দরপত্রের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত তিনি। একই দিনে আটক কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ফিরোজ দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

এদিকে যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবী করেছেন, জিকে শামীম যুবলীগের কেউ নন। সে যুবলীগের নাম ভাঙিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা তা বলছেনা। ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে শামীমের অনেক ঘনিষ্ট ছবি এরইমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু যুবলীগ সভাপতি নয়, আওয়ামী লীগের আরো শীর্ষ নেতা এবং এমপিদের সঙ্গেও তার ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

বুধবার যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক  ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে আটকের পর সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে দুইটি মামলা হয়েছে। খালেদকে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। যুবলীগ সভাপতি বলেছেন, ‘‘যাকে গ্রেপ্তার করা হবে তাকেই সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হবে।''

তবে প্রধানমন্ত্রী ১৪ সেপ্টেম্বর গণভবন যাদের নাম ধরে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তাদের অনেকেই এখনও আটক হয়নি। বিশেষ করে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এখানো বহাল তবিয়তে আছেন। বুধবার খালেদকে আটকের রাতে সম্রাট তার কাকরাইলের অফিসে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে অবস্থান করে ক্ষমতা দেখান।

ড. শান্তনু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

তবে তাকে এখনও আটক না করে প্রমাণের অপেক্ষায় আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি শনিবার বলেছেন, ‘‘প্রমাণ পেলে সম্রাটকেও গ্রেপ্তার করা হবে। অথচ কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের নতুন ভবন নির্মাণ থেকে তার চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। তদন্ত আর তথ্য প্রমাণে স্পষ্ট যে যুবলীগ নেতাদের ক্যাসিনো ব্যবসার মাঠ পর্যায়ের তদারককারী হলো সম্রাট।

বিশ্লেষকরা বলছেন , আসলে এখন আরো বড় অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে যুবলীগ সভাপতির নানা কথায় তা স্পষ্ট। তিনি প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের পর বলেছেন, ‘‘আমাদের ধরলে আমরা বসে থাকবোনা। পুলিশ কি এতদিন আঙ্গুল চুষছিলো?  ৬০ থানাকে অ্যারেস্ট করতে হবে।‘‘

তবে সেখান থেকে সরে এসে ওমর ফারুক চৌধুরী এখন বলছেন, ‘‘ওরা আমাদের কেউ নয়। ওরা বহিরাগত।'' সেইসঙ্গে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিস্কার করেই দায় এড়াতে চান তিনি। জানিয়েছেন যাকে গ্রেপ্তার করা হবে তাকেই সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে অবস্থান নিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু যুবলীগ বা দলের একটি অংশ এখন পানি ঘোলা করে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তারা  নানা কৌশলে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে।'' 

নূর খান

This browser does not support the audio element.

শীর্ষ পর্যায়ের যারা এই অপরাধে জড়িত তারা কিন্তু তাদের কথার মাধ্যমেই প্রমাণ দিচ্ছেন বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান। তিনি বলেন, ‘‘শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া এটা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যাদের নাম ধরে বলেছেন তারাই এখন সুর পরিবর্তন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে এই সব অপরাধীদের ঘনিষ্ট ছবি আমরা দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও তারা উল্টো হুমকি দিয়েছেন।‘‘ তিনি বলেন, ‘‘এখন বহিস্কার বা অন্যদল থেকে অনুপ্রবেশকারী বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। দায় নিয়ে যার যতটুকু সংশ্লিষ্টতা তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।'' 

আটক যুবলীগ নেতাদের ঘনিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কতিপয় প্রভাবশালী সাংবাদিকের সঙ্গেও। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘‘পুলিশের সহায়তা ছাড়া এতদিন এই ক্যাসিনো ব্যবসা চলতে পারেনা। আর যুবলীগের শীর্ষ নেতারা পারিবারিক কারণেই অনেক প্রভাবশালী। ফলে দুই পক্ষ মিলে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়েছে। পুলিশ কমিশনার কোনাভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।''

রাজনীতির আদর্শহীনতা ও দুর্বৃত্তায়ন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের আইন, প্রশাসন, পুলিশ যদি সঠিক নিয়মে চলতো তাহলো তো এই পরিস্থিতি হতো না। রাজনীতি যদি আদর্শ ভিত্তিক হতো তাহলেতো এই যুবলীগ নেতারা চাঁদবাজি বা ক্যাসিনো ব্যবসা করতে পারত না। জিন্দাবাদের লোক জয়বাংলা বলে ঢুকে পড়েছে এটা বলেতো এখন দায় এড়ানো যাবেনা।''

তিনি বলেন, ‘‘তবে আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।''

হারুন উর রশীদ স্বপন(ঢাকা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ