1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বহু জোটের শরিক ভারত কোনো সামরিক জোটে নেই

গৌতম হোড় দিল্লি
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

স্বাধীনতার পর ভারতের উদ্যোগে প্রথম আন্তর্জাতিক জোট হলো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। পরে একের পর পর এক জোটের সদস্য দিল্লি।

জি২০ মানে ১৯টা দেশ ও ইইউ-র জোট
জি২০ মানে ১৯টা দেশ ও ইইউ-র জোটছবি: Ajit Solanki/AP Photo/picture alliance

তখন ভারতের স্বাধীনতার সবে ১৪ বছর হয়েছে। বিশ্ব দুইটি জোটে বিভক্ত। অ্যামেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ। ঠান্ডা লড়াইয়ের দুনিয়ায় দেশগুলি কমবেশি এই দুই জোটের দিকে ঝুঁকে।

সেই অবস্থায় ১৯৬১ সালে বেলগ্রেডে জন্ম নিলো এক তৃতীয় বিকল্প। নির্জোট বা জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের। যারা ওয়ারশতে থাকবে না, ন্যাটোতেও নয়, তাদের নিয়ে গঠিত হলো নন-অ্যালায়েনড মুভমেন্ট বা নির্জোট আন্দোলন। প্রধান উদ্যোক্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসিপ ব্রোজ টিটো, মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দেল নাসের, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নো এবং ঘানার ঘানার প্রেসিডেন্ট কোয়ামে এনক্রুমা।  এর মধ্যে টিটো ও নাসেরের নামে দিল্লিতে এখনো দুইটি দুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আছে।

ওয়ারশ ও ন্যাটো ছিল সামরিক জোট। তাদের ঠান্ডা যুদ্ধের ফলে বিশ্ব দুইটি মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু নেহরু, টিটো, নাসেররা যে নির্জোট আন্দোলন গড়ে তুললেন, তা কোনো সামরিক জোট নয়। ১৯৭৯ সালে  কাস্ত্রোর তৈরি করা হাভানা ডিক্লারেশনে বলা হয়েছল, এই সংগঠন সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, বর্ণবৈষম্য, বিদেশি আগ্রাসনের বিরোধিতা করবে। অবশ্যই তারা ন্যাটো ও ওয়ারশতে যোগ দেবে না। প্রচুর দেশ এই আন্দোলনের শরিক হয়। ১৯৮৩ সালে দিল্লিতে কাস্ত্রোর কাছ থেকেই নির্জোট আন্দোলনের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন ইন্দিরা গান্ধী। সেবার ৯৭টি সদস্য দেশ, ১৮টি পর্যবেক্ষক দেশ এবং ২৪টি অতিথি দেশ যেগ দিয়েছিল। নির্জোটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শীর্ষবৈঠকগুলির মধ্যে একটি।

নির্জোট হলো সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক জোট, যেখানে ভারত নেতৃত্বের জায়গায় ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ওয়ারশ আর থাকলো না। ফলে বিশ্ব বাইপোলার থেকে ইউনিপোলার হয়ে গেল। নির্জোট আন্দোলনও উপযোগিতা হারিয়ে ফেললো।

১৯৮৫ সালে সার্ক বা সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন গঠিত হলো। এখানেও ভারতের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সার্কের আটটি সদস্যদেশ হলো, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভারত। এই দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিল ভারত।

সার্কের ১৯তম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে। কিন্তু উরির সেনা শিবিরে জঙ্গি হামলার পর ভারত জানিয়ে দেয়, তারা পাকিস্তানে যাবে না। ভারতের অভিযোগ ছিল, উরির হামলা করেছিল পাক প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা, কৌশলও পাকিস্তান ঠিক করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের মদতে এই আক্রমণ হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ফলে সার্ক তার গতি হারালো। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জোটের অভাব নেই। বিমস্টেক, জি২০,  কোয়াড, এসসিও, আশিয়ান, গঙ্গা মেকং কোঅপারেশন, ইস্ট এশিয়া সামিটেরও সদস্য দেশ ভারত। ভারত তো এবার জি২০-র চেয়ারম্যান। ফলে নায়াদিল্লিতে শীর্ষবৈঠকে বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের আসছেন।

জি২০ মানে ১৯টা দেশ ও ইইউ-র জোট। সেই ১৯ দেশের মধ্যে আছে অ্যামেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, জাপান, সৌদি আরব, দক্ষণ কোরিয়া, মেক্সিকো, তুরস্ক, ভারতের মতো দেশগুলির জোট। তবে এটাও মূলত অর্থনীতি, উন্নয়ন, পরিবেশ সংক্রান্ত জোট। এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র থাকার ফলে এই জোটের গুরুত্ব বেড়েছে। ১৯৯৯ সালে গঠিত এই জোট ক্রমশ শক্তিশালীহয়েছে। তার চেয়ারম্যানের পদ পাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী তানিয়ে দেশজুড়ে প্রচারের বন্য়া বইয়ে দিয়েছেন। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে বিভিন্ন বৈঠক রাখা হয়েছে। জি২০ অর্থমন্ত্রীদের, পরিবেশমন্ত্রীদের বৈঠক তো ছিলই, তাছাড়া বিভিন্ন স্তরের বৈঠক হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক বৈঠকগুলি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচুর আলোচনাও হয়েছে। বহুদিন পর একসঙ্গে এতজন রাষ্ট্রনেতা বারতে আসছেন। ফলে এর গুরুত্বও অপরিসীম।

গৌতম হোড়, সাংবাদিক, ডয়চে ভেলেছবি: privat

তুলনায় বিমস্টেক ছোট জোট। এখানে পাকিস্তান নেই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ-সহ সাতটি দেশ আছে। এর স্থায়ী সচিবালয় ঢাকায়। এটাও আর্থিক, বাণিজ্যিক, পর্যটন, প্রযুক্তি, কৃষি, পর্যটন, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার জন্য তৈরি জোট।

কোয়াডও ছোট ছোট, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ জোট। এর শরিক অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত। মূলত চীনকে ঠেকাতে একজোট হয়েছে এই চার দেশ। ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে কোয়াডের গুরুত্ব রয়েছে।  এছাড়া আছে বিমস্টেক। যার স্থায়ী সচিবালয় ঢাকায়।আছে ব্রিকস।  ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণআফ্রিকার জোট। ব্রিকসের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। আরো দেশকে সদস্য করা হচ্ছে। তবে ব্রিকসও হলো অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতার জন্য গঠিত জোট।

ফলে জাতিসংঘ ও নির্জোট দিয়ে যে যাত্রা শুরু, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা বেড়েছে। তবে এখনো সেভাবে কোনো সামরিক জোটের শরিক হয়নি ভারত। সামরিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার উপরই নির্ভর করেছে ভারত। সেখানেও তাদের ছুৎমার্গ নেই। অ্যামেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল-সহ অনেক দেশের কাছ থেকেই অস্ত্র কিনেছে বা কিনছে ভারত। এখনো ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্রসরবরাহকারী হলো রাশিয়া।

প্রশ্ন হলো, ভারত এতগুলি আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য কেন? এর জবাব হলো, ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থান, আর্থিক দিক থেকে ভালো জায়গায় চলে যাওয়া, বিশাল বাজার, ক্রমশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।  তাছাড়া  বাস্তব হলো, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোনো জোট ভারতকে ছাড়া সফল হতে পারে না।

সেই সঙ্গে ক্রমশ চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার লড়াই তীব্র হচ্ছে। আর চীনের মোকবিলা করার ক্ষেত্রে যে দেশটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে তা হলো ভারত। তাই অ্যামেরিকার কাছেও ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামরিক কারণে পাকিস্তান যখন চীনের উপর ক্রমশ বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তখন ভারতকে বাদ দিয়ে চলা মানে অ্যামেরিকারই লোকসান। সেজন্যই কোয়াডে ভারতকে নিতে হচ্ছে। সেজন্যই বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ ভারত একের পর এক জোটে থাকছে। আন্তর্জাতিক জোট রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ