1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বহু মানুষের আধার কার্ড বাতিল, বিতর্ক তুঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে অনেক মানুষ আধার কার্ড বাতিলের চিঠি পেয়েছেন। সংশয় দূর করতে অভয় দিয়েছেন আধার কর্তৃপক্ষ।

ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ডের নমুনা।
কেন এত মানুষের আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া য়ায়নি। ছবি: Aamir Ansari/DW

ভারতীয় নাগরিকদের কাছে আধার কার্ড এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় পরিচয়পত্র। শুধু পরিচয় নয়, সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোনো ধরনের কাজে আধার কার্ড লাগে। সেই কার্ড নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে লোকসভা ভোটের মুখে।

গত কয়েকদিন ধরেই আধার কার্ড বাতিলের খবর সামনে আসছে। পূর্ব বর্ধমানে ৮০ জনের আধার কর্ড বাতিল হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার বনগাঁর কয়েকজন আধার কার্ড বাতিলের চিঠি পান। মঙ্গলবার বাগদার হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৩ জনের কাছে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি এসেছে।

হেলেঞ্চায় মহানন্দ বিশ্বাসের আধার কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘আধার কার্ড বাতিল হয়ে গেছে বলে আমি রেশন পাচ্ছি না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও তুলতে পারছি না। বহু পরিষেবা থেকে আমরা বঞ্চিত। অবিলম্বে আমার আধার কার্ড চালুর দাবি জানাচ্ছি।''

হেলেঞ্চাতে যাদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে, তারা অধিকাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।

আধার বাতিল

পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষের কাছে আধার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিঠি এসেছে। তাতে লেখা হয়েছে, তাদের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হলো। এ ধরনের চিঠি পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন মানুষজন। প্রশ্ন উঠেছে, আধার বাতিল হয়ে গেলে তারা কী করে বিভিন্ন পরিষেবা বা ভাতা পাবেন?

ভারতে  স্কুল-কলেজ থেকে হাসপাতালে ভর্তি, নতুন চাকরিতে নিয়োগ বা মোবাইলের নতুন সংযোগ কিংবা সরকারি ভাতা গ্রহণ, সব ক্ষেত্রেই আধার লাগে। ১২ সংখ্যার এই নম্বর, বায়োমেট্রিক প্রমাণ সহ প্রত্যেক নাগরিকের পরিচিতিকে নিশ্চিত করে। সেই কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার অর্থ সব পরিষেবার পথে বাধা তৈরি হওয়া।

আধার বাতিলের খবর সামনে আসার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হওয়ায় বিবৃতি জারি করেছে আধার কর্তৃপক্ষ। সোমবার তারা জানিয়েছে, কারো আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে না। এনিয়ে যদি কারো অভিযোগ থাকে, তা হলে সেটা আধার কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। দ্রুত অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

‘আধার বাতিলের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখা যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যদি আধার বাতিলের সিদ্ধান্ত না-ই হয়, তা হলে কীভাবে এ ধরনের চিঠি প্রাপকদের ঠিকানায় পৌঁছল? সূত্রের খবর, আধার কর্তৃপক্ষের রাঁচি কার্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের কাজকর্ম পরিচালিত হয়। সেখান থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তাদের বক্তব্য, আধার নথিতে কোনো অসামঞ্জস্য বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা আপডেট করতে হয়। কিন্তু বাতিলের প্রশ্ন নেই।

অর্থাৎ, আধার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকেও পরিষ্কার নয়, কেন কার্ড নিষ্ক্রিয় করার বার্তা চিঠির মাধ্যমে পেলেন দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা!

অস্বস্তি বিজেপির

লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আধার নিয়ে এই সংশয় ও বিতর্ক কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। সমস্যার মোকাবিলা করতে তড়িঘড়ি দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।

তিনি এই বিভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে ইমেল আইডি ও ফোন নম্বাlর দিয়েছেন, যেখানে আধার সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাবে। এমনকি দলীয় স্তরে উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যা কাটানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন শান্তনু।

রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী রাঁচির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেছেন, দ্রুত সবকিছু ঠিক করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আধার বিতর্কে তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ''ভোটের আগে কেন হাজার হাজার নাম কাটা হচ্ছে? রাজ্য বা জেলা প্রশাসন এর কিছুই জানে না। অথচ আধার তৈরি করতে নেয়া হয়েছে এক হাজার টাকা। দলিত, সংখ্যালঘু, অনগ্রসরদের উপর বিজেপি অত্যাচার করছে। এভাবে ভোটে জেতা যায় না।''

সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি যত সুর চড়াচ্ছে, ততই তৃণমূল আধার নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার এর পিছনে তৃণমূলের চক্রান্ত দেখছেন। তার মন্তব্য, ''রাঁচির এজেন্টদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী এ কাজ করিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজ্য পুলিশের ডিজিও থাকতে পারেন।''

রাঁচি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজধানী। সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। এই দল ও তৃণমূল উভয়ই বিজেপি বিরোধী । সেই সূত্রেই শুভেন্দুর এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে।

আধার কার্ড বাতিল হওয়ার ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্য বিকল্প কার্ড তৈরি করে দেবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে আধার কার্ড হলো কেন্দ্রীয় সরকারের দেয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। রাজ্য সরকারের দেয়া কোনো পরিচয়পত্র তার জায়গা নিতে পারে কিনা, তানিয়ে সন্দেহ আছে। শুভেন্দু বলেছেন, ''একটি সার্বভৌম দেশের মধ্যে থেকে কোনো রাজ্য এ ধরনের কাজ করতে পারে না। আধার দিয়ে যে পরিষেবা পাওয়া যায়, সেটা অন্য কোনো কার্ডের দ্বারা সম্ভব নয়। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।''

ভোটে প্রভাব পড়বে?

লোকসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে? পর্যবেক্ষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। আধার কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়েছে। এতে ধোঁয়াশা কেটে যাবে।''


রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ''মতুয়াদের বড় সংখ্যক ভোট আছে। তাই আধার বাতিলের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখা যাচ্ছে। অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে আধার বাতিলের চিঠি পৌঁছলেও যে ভীতি তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব বৃহত্তর জনসমষ্টিতে পড়তে পারে। তবে দ্রুত আধার কর্তৃপক্ষ এতে হস্তক্ষেপ করেছেন। তারা তদন্ত করলে বোঝা যাবে, কেন এমনটা হল।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ