প্রতিশ্রুতি রাখল ভারত। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বংলাদেশকে আপাতত ৩ কোটি করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দুই দেশের সংস্থার মধ্যে সমঝোতাপত্রে সইও হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলে এসেছিলেন, বাংলাদেশকে করোনা ভ্যাকসিন দেবে ভারত। এ বার সেই ভ্যাকসিন দেয়া নিয়ে সমঝোতাপত্রে সই করল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। ঢাকায় এই সমঝোতাপত্র সই হয়েছে।
এর ফলে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনবাজারে এলেই তিন কোটি ডোজ পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। প্রত্যেককে দুইটি করে ডোজ নিতে হবে। ফলে বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে পাঁচ ডলার। অর্থাৎ, মাথাপিছু দশ ডলার খরচ হবে। তার মানে এক হাজার টাকার কমেই একেক জনের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
বাংলাদেশই প্রথম প্রতিবেশী দেশ, যাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন দেয়ার চুক্তি হলো ভারতের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, এতে বাংলাদেশকে যে ভারত কতটা গুরুত্ব দেয়, তা পরিষ্কার হলো। ভারত বাকি প্রতিবেশী দেশের অনেককেই ভ্যাকসিন দেবে। এর জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছিল। তাঁরা গত মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। ভ্যাকসিন কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে তা তাঁরা বুঝিয়ে দিয়ে এসেছেন।
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
প্রশ্ন হলো, কবে বাজারে আসবে এই ভ্যাকসিন? সিরাম ইন্সস্টিটিউটের প্রধান আদার পুনেওয়ালা সম্প্রতি মিন্ট সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, ভারতে আগামী জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন এসে যাবে। তা হলে সেই সময় বাংলাদেশেরও তা পাওয়ার কথা। কিন্তু অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন সিরামের সঙ্গে যৌথভাবে বানাচ্ছে ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তারা জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বাজারে আসতে সামান্য একটু দেরি হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ৩০০ কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে এই ব্রিটিশ সংস্থার। পুনেওয়ালা আগে বলেছিলেন, চলতি বছরের মধ্যেই ভ্যাকসিন এসে যাবে। এখন তিনি জানুয়ারির কথা বলছেন। তাই এই সময়সীমা বাড়তেও পারে।
বিহার নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সবাইকে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা শুধু বিহার নয়, সারা দেশেই কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নিতে কারও কোনো পয়সা লাগবে না।
আগামী বছরের গোড়ায় অ্যামেরিকা ও চীনের ভ্যাকসিনও বাজারে এসে যেতে পারে। ভারতের আরো দুইটি ভ্যাকসিনেরও তৃতীয় পর্য়ায়ের ট্রায়াল চলছে। সেই দুটিও কিছুদিনের মধ্যে বাজারে এসে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে।