বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ইউরো দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থ সাহায্য দেয়ার কথা জানিয়েছে৷ আজ জার্মান দূতাবাসের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে সম্প্রতি ২০১৮ সালের উন্নয়ন সহযোগিতা আলোচনা শেষ হয়েছে এই নতুন প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরো ২ কোটি ৯০ লাখ ইউরো অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি৷ এই অর্থ যোগ করলে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জার্মানি বাংলাদেশকে তিনশ' কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছে৷
বাংলাদেশ ও জার্মান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয় ১৯ নভেম্বর৷ সেই আলোচনার ভিত্তিতে আজ এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জার্মান দূতাবাস৷ প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন মো. খলিলুর রহমান খান, যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউরোপের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব৷
অন্যদিকে, জার্মান সরকারের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ছিলেন জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিভাগের দক্ষিণ এশীয় প্রধান ড. ভল্ফফ্রাম ক্লাইন৷ বাংলাদেশের জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহোলৎস বৈঠকে বক্তব্য রেখেছিলেন৷
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত খাত ও ভবিষ্যতের উন্নয়ন খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যাপারে দু' পক্ষের প্রতিনিধিরা মতবিনিময় করেছেন৷ আলোচনার ফলস্বরূপ জার্মানি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো, আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দিয়েছে৷ পাশাপাশি শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জার্মান প্রতিনিধিরা৷ এছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জার্মানি৷
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷