পরিবেশ তহবিলে অর্থ সরবরাহের জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৩৩টি উন্নয়নশীল দেশ৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, মিশর, কেনিয়া, লাইবেরিয়া ও ইউক্রেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ৩৩টি দেশের মন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ‘ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ (সিআইএফ) এর প্রধান মাফাল্ডা দুয়ার্তে জানান যে, ২০০৮ সালে গঠিত ৮.৩ বিলিয়ন ডলারের এ তহবিলটি পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে বড় বহুদেশীয় তহবিল৷ দশ বছর পর এ তহবিলে এখন ১ বিলিয়নেরও কম অর্থ বাকি রয়েছে৷
মূলত সবুজ প্রযুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ অর্থ প্রদান করা হয়৷ ৩৩টি দেশের বিবৃতিতে, এ পর্যন্ত নেয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়৷ সেখানে এ পর্যন্ত ৭২টি দেশে সিআইএফ-এর অর্থে নেয়া ৩০০টি প্রকল্পের অগ্রগতি ও বাস্তবায়নের স্বরূপ তুলে ধরা হয়৷ বলা হয়, ২৬.৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, ৮৫ লাখ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, ৪ কোটি ৫০ লাখ লোককে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা করা এবং ৩ কোটি ৬০ লাখ হেক্টর বনকে টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে৷ ‘‘আমরা মনে করি যে, এই সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং জলবায়ু মোকাবিলায় সিআইএফ-এর এই প্রমাণিত মডেলটি ধরে রাখতে হবে,'' ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর বসন্ত বৈঠকের আগে এমন বিবৃতি দিলেন দেশগুলোর মন্ত্রীরা৷
জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশ সপ্তম
পরিবেশবাদী সংগঠন জার্মানওয়াচ ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১৯’ প্রকাশ করেছে৷ সেখানে গত ১৯ বছরে চরম আবহাওয়ার শিকার দেশের তালিকা করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলাদেশ সপ্তম
জার্মানওয়াচ বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চরম আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে আছে৷ চরম আবহাওয়া বলতে ঝড়, বন্যা, তীব্র গরম এসবকে বুঝিয়েছে জার্মানওয়াচ৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুয়ের্টো রিকো
ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল পুয়ের্টো রিকোতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে হারিকেন মারিয়া আঘাত হেনেছিল৷ এতে সরকারি হিসেবে প্রাণ হারান ২,৯৭৫ জন৷ তবে শুধু ২০১৭ সালেই নয়, অঞ্চলটি প্রায়ই দুর্যোগের শিকার হয়৷ ফলে জার্মানওয়াচের তালিকায় গত ১৯ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পুয়ের্টো রিকোর নাম উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arduengo
স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেই ক্ষতি বেশি
বাংলাদেশ (৭) ও পুয়ের্টো রিকো (১) ছাড়া সূচকে শীর্ষ দশের অন্য দেশগুলো হচ্ছে হন্ডুরাস (২), মিয়ানমার (৩), হাইতি (৪), ফিলিপাইন্স (৫), নিকারাগুয়া (৬), পাকিস্তান (৮), ভিয়েতনাম (৯) এবং ডোমিনিকা (১০)৷ অতীত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জার্মানওয়াচ বলছে, সাধারণত শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোই চরম আবহাওয়ার কারণে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. K. Thu
আরেক সূচকে বাংলাদেশ নবম
এই সূচকটিও জার্মানওয়াচের করা৷ তবে এটি তৈরিতে শুধুমাত্র ২০১৭ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ঐ বছর বাংলাদেশে দুর্যোগে ৪০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৯০ কোটি ডলার৷
ছবি: bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ
২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা (২) ও নেপালের (৩) নাম আছে৷ ২০১৭ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কায় ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে দুশ’র বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতেও (১৪) বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছিল৷ ফলে ঐ তিন দেশের প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Paudel
ধনী দেশগুলোও টের পাচ্ছে
২০১৭ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট একের পর এক হারিকেনের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি যে দিন দিন সার্বজনীন সমস্যায় পরিণত হচ্ছে, তা ধনী দেশগুলো এখন বুঝতে পারছে বলে মনে করছে জার্মানওয়াচ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arduengo
6 ছবি1 | 6
তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সিআইএফ-ই একমাত্র তহবিল নয়, যারা এ বছর নতুন অর্থের যোগান নিশ্চিতে কাজ করছে৷ মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ‘গ্রিন ' (জিসিএফ)-ও চেষ্টা করছে অর্থের জন্য৷ তারা প্রাথমিকভাবে ১০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গড়ার চেষ্টা করে৷ কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুত ৩ বিলিয়ন ডলারের দুই তৃতীয়াংশই দিতে অস্বীকৃতি জানান৷ গত সপ্তাহে জিসিএফ ২৭ সম্ভাব্য দাতার সঙ্গে বৈঠক করেছে৷ নরওয়ে ও জার্মানি আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা তাদের পক্ষের অর্থের যোগান আরো বাড়াবে৷