গ্রিসের একটি স্ট্রবেরি বাগানে কর্মরত বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়েছে দেশটির আদালত৷ তবে যে খামারে শ্রমিকরা কাজ করছিল সেটির মালিক এবং শ্রমিকদের প্রধান রেহাই পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
গত বছরের এপ্রিলের ঘটনা৷ প্রায় ছয় মাস বেতন না পাওয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা৷ কিন্তু ন্যায্য দাবি পূরণের বদলে মালিক পক্ষের লোকেরা গুলি চালান শ্রমিকদের উপর৷ এতে আহত হন ২৮ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক৷ গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে ম্যানোলাডায় এই ঘটনা ঘটে৷ বিষয়টি সেসময় ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
আদালতের দেয়া রায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ১৪ বছর সাত মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অপর ব্যক্তির শাস্তি আট বছর সাত মাস৷ গুলি চালানো এবং আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ ব্যবহারের জন্য এই শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদের৷ তবে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি এই মুহূর্তে মুক্ত রয়েছেন এবং তাদের আপিলের সুযোগ রয়েছে৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
আলোচিত ফার্মটির মালিক এবং শ্রমিকদের প্রধানের কোনো অপরাধ অবশ্য খুঁজে পায়নি আদালত৷ তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিও ঘোষণা করা হয়নি৷ তবে গ্রিসের অনেকেই মালিককে রেহাই দিয়ে আদালতের রায় মানতে পারছেন না৷ গুলিতে আহত শ্রমিকদের পক্ষের আইনজীবী ময়সিস ক্যারাবেইডিস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘গ্রিক হিসেবে আমি লজ্জিত৷''
গ্রিসের রাজনীতিবিদের মধ্যে যাঁরা বিষয়টি জানেন, তাঁরাও রায়ের সমালোচনা করেছেন৷ এটি এক ক্ষতিকারক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন তাঁরা৷ সেদেশের প্রধান বিরোধী দল সিরিজা পার্টির সংসদ সদস্য ভাসিলিকি কাটরিভানাও এই বিষয়ে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, ‘‘এটা (রায়) যে বার্তা বহন করছে তাহচ্ছে, বিদেশি শ্রমিকরা ফলের বাগানে কুকুরের মতো মরতে পারে৷''
উল্লেখ্য, গ্রিসে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন৷ এদের একটি বড় অংশ দেশটিতে অবৈধভাবে কাজ করছেন৷