1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের ভিসা কঠিন হচ্ছে

২৭ জুন ২০১৭

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসাপ্রক্রিয়া আরো কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার আগ্রহ না দেখানোয় এই সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷

ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Palacios

তবে অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ভিসা না পেলে অস্বাভাবিক পথে অভিবাসন বাড়বে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসাপ্রক্রিয়া আরো কঠোর করারসিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার আগ্রহ না দেখানোয় এই সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তবে অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ভিসা না পেলে অস্বাভাবিক পথে অভিবাসন বাড়বে৷

গত শুক্রবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ২৮টি সদস্য দেশের নেতারা দুই দিনের এক বৈঠক করেন৷ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেসব দেশে ইউরোপে অবৈধভাবে থাকা নিজেদের নাগরিকদের দেশ ফেরত নেবে না, সেসব দেশের জন্য ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করা হবে৷

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে অবৈধভাবে থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর হয়ে উঠেছে ইউ ভুক্ত দেশগুলো৷ ২৮ দেশের এই জোট বলছে, বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার মতো কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷

২০১৪ সাল থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয় ইউরোপের দেশগুলো৷ শুক্রবার ব্রাসেলস বৈঠকে ইইউ নেতারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ভিসানীতি পর্যালোচনাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের প্রধান প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে ইটালি৷ বিশেষ করে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে পাচারকারীদের নৌকায় চড়ে লোকজন ইউরোপের সাগরতীরে পৌঁছাচ্ছে৷ এদের বেশিরভাগ অবৈধ শ্রম অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত৷

ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্রপথে দেশটিতে পৌঁছানো শরণার্থীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে নাইজেরিয়ার পরেই রয়েছেন বাংলাদেশিরা

২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে মাত্র একজন বাংলাদেশি ইটালিতে প্রবেশ করলেও ২০১৭ সালে একই সময়ের মধ্যে এই সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছায়৷ এটি যে কোনও দেশ থেকে ইউরোপে প্রবেশকারীদের সংখ্যার হিসেবে সর্বোচ্চ৷ লিবিয়া থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি৷

ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীরা উদ্ধারকর্মীদের জানিয়েছেন, ‘‘ঢাকা থেকে লিবিয়া বা তুরস্ক যেতে এক জনকে দশ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দিতে হয়৷একটি ‘এজেন্সি' তাদের লিবিয়া পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেয়৷ ওয়ার্কিং ভিসার জন্য এজেন্সিকে ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার দিতে হয়৷''

ছবি: Getty Images/AFP/M.Longari

আইওএম-এর এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে প্রথমে অভিবাসীদের দুবাই ও তুরস্কে নেয়া হয়৷ এরপর বিমানে করে তারা লিবিয়া পৌঁছান৷ বিমানবন্দরের কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং কাগজপত্র নিয়ে যান৷''

অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন লিবিয়াতে বাস করার পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন৷ আবার অনেকেই আছেন যারা কিছুদিন আগে সেখানে পৌঁছেছেন৷ তারা সরাসরি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ আইওএম-র তথ্য অনুসারে, একজন বাংলাদেশি অভিবাসীকে লিবিয়া যেতে ১০ হাজার ডলার এবং ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য নৌকা খরচ দিতে হয় ৭০০ ডলার৷

জনশক্তি বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ইওরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীদের সেসব দেশ থেকে ফেরত আনার একটি সময়ও বেঁধে দিয়েছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয় নাই৷ তারা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিরপত্তার প্রশ্নে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে৷''

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত: হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘শুধু ইউরোপ নয়, সৌদি আরবও অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেয়ার সময় বেঁধে দিয়েছে৷ এর আগে সিংগাপুরে কয়েকজন বাংলাদেশিকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ এখন সিংগাপুরের স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় কাজ করতে বাংলাদেশিরা অনুমতি পায় না৷ তাই এসব ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত৷''

অন্যদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন ড. তাসনিম সিদ্দিকী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভিসা কড়াকড়ি করার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটাকে আমি অন্যায় এবং বিশ্বায়নবিরোধী মনে করি৷ আর এটা করে অবৈধ অভিবাসন ঠোকানো যাবে না৷ বরং যাদের পড়াশুনাসহ নানা কাজে ইউরোপের দেশে যেতে হয়, তারা হয়রানির মুখে পড়বেন৷''

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়: ড. তাসনিম সিদ্দিকী

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘যারা অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারাই এর জন্য দায়ী৷ বিশ্বব্যাপী যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, তার কারণেই অবৈধ অভিবাসন বাড়ছে৷ বৈধভাবে ভিসা পাওয়া কঠিন বলেই মানুষ জীবনের প্রয়োজনে অবৈধ অভিবাসনের দিকে হাঁটছে৷ কাতারকে এখন একঘরে করা হচ্ছে৷ এখন কাতার থেকে কেউ যদি অন্যদেশে যেতে চান, তাহলে তাকে কিভাবে দায়ী করা যাবে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে৷ শিক্ষা, গবেষণা , ব্যবসা এবং উন্নয়ন বিষয়ক কাজে এই সিদ্ধান্ত বাধার সৃষ্টি করবে৷ বাংলাদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান ক্ষতির মুখে পড়বে৷ বাংলাদেশের উচিত জোরের সাথে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ