বাংলাদেশি অনুপ্রেবশকারীদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রকে এবিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। আটক বাংলাদেশিদের সংখ্যাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দুর্বিসহ অবস্থা বলে অভিযোগছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলাটিকে ধরেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুললো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার এবং জেলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কেন আটকে রাখা হয়েছে, কেন তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না, এই মর্মে কেন্দ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রকে সমস্ত তথ্য জানাতে হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে এই মামলাটি হয়েছিল, ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করণীয় বিষয়েও জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শুধু তা-ই নয়, সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ আরেকটি মামলার প্রেক্ষিতে আসাম সরকারকে জানিয়েছে, তাদের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা ৬৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে অবিলম্বে দেশে পাঠাতে হবে।
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিদেশি সন্দেহে কোনো ব্যক্তিকে আটক করার পর তার পরিচয় যাচাই করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে প্রত্যার্পণের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
নদিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বাঙ্কার, ভিতরে ভর্তি ফেনসিডিলের শিশি
নদিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে তিনটি বাঙ্কার উদ্ধার। সেই বাঙ্কারে ভর্তি ছিল কাশির সিরাপ ফেনসিডিলের শিশি।
ছবি: Prajit Bhadra
সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে নদিয়ায় তিনটি বাঙ্কারের খোঁজ পায় বিএসএফ। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তারা তল্লাশি করছিল। তখন তারা এই বাঙ্কার উদ্ধার করে। এছাড়া আরেকটি বাঙ্কার তৈরি করা হচ্ছিল। সেখানে মেটাল শিটও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ছবি: Prajit Bhadra
কীরকম বাঙ্কার?
মাটি কেটে এই বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছিল। তারপর তার ভিতরে রাখা হয় ধাতুর তৈরি বাক্স। আর তাতে রাখা ছিল বাক্সভর্তি শিশি।
ছবি: Prajit Bhadra
এক কোটি ৪০ লাখের কাশির ওষুধ
এই বাঙ্কারে ধাতুর কাঠামোর মধ্যে ছিল ৬২ হাজার কাশির ওষুধ ফেনসিডিলের বোতল। এই ওষুধ মাদক হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলের চোরাবারবারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
ছবি: Prajit Bhadra
কী করে উদ্ধার হলো বাঙ্কার?
বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, প্রতিটি বাঙ্কার ছিল ১৫ ফুট গভীর। সবমিলিয়ে ৬২ হাজার ফেনসিডিলের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে, যার মূল্য এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো। এই বাঙ্কারগুলি চোরাকারবারীরা জিনিস মজুত করার কাজে ব্যবহার করতো বলে তাদের মনে হয়েছে। বিএসএফ মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
ছবি: Prajit Bhadra
পুলিশ-বিএসএফের অগোচরে কী করে বাঙ্কার?
সীমান্তের এত কাছে পুলিশ ও বিএসএফের চোখ এড়িয়ে কী করে এই বাঙ্কার তৈরি হলো, তার জবাব পাওয়া যায়নি। যে তিনটি বাঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে দুইটি ছিল জঙ্গলের মধ্যে, একটি চালাঘরের তলায়। সেখানে মাটি সরানো হয়েছে, ধাতুর কাঠামো বসানো হয়েছে, অথচ, পুলিশ বা বিএসএফ তা টের পায়নি। বিএসএফ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এই বাঙ্কারগুলিকে নাশকতার কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছবি: Prajit Bhadra
সুশান্ত ঘোষের খোঁজে পুলিশ
পুলিশ এখন সুশান্ত ঘোষের খোঁজ করছে। এই সুশান্ত ঘোষের নামে মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ সামনে আসার পর মাসখানেকের উপর সে ফেরার। সুশান্ত ঘেোষের জমিতেই এই বাঙ্কার তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, সুশান্ত কিছুদিন আগে ওই জমি কিনেছিল।
ছবি: Prajit Bhadra
অভিযোগ-পাল্টা অভিযেোগ
বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেছেন, বিএসএফের গোয়েন্দারা খবর দেয়ায় পর তারা এই বাঙ্কার উদ্ধার করতে পেরেছে। সীমান্তের এত কাছে বাঙ্কার হচ্ছিল, অথচ, পুলিশ কিছুই করেনি। তণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, সীমান্ত ও তার কাছের এলাকা নিরাপদ রাখার কাজ বিএসএফের। বিএসএফের কম্যান্ড জোনেই বাঙ্কার উদ্ধার হয়েছে। এখানে পুলিশ যেতে পারে না।
ছবি: Prajit Bhadra
7 ছবি1 | 7
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে যে মামলাটি হয়, তাতে অভিযোগ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দুর্বিসহ অবস্থা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করে। পরবর্তীকালে যা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মহাদেবন জানিয়েছেন, গত ১২ বছরে এই মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। মামলা যখন হয়েছিল, তখন আদালতকে জানানো হয়েছিল, ৮৫০ জন বাংলাদেশি অনির্দিষ্টকাল ধরে আটক। কেন্দ্রের কাছে নতুন করে এই সংখ্যাটি জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার যা আদালতকে জানানোর কথা কেন্দ্রের। সুপ্রিম কোর্টের অভিযোগ, কেন্দ্র নিজেই নিজের আইন লঙ্ঘন করছে। দ্রুত এই সমস্যার সুরাহা হওয়া দরকার।
আসামের যে গ্রামে বাড়ি ভারতে, উঠোন বাংলাদেশে
আসামের গোবিন্দপুর গ্রাম। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যে গ্রামের বাড়ি ভারতে, কিন্তু উঠোনের সিংহভাগ বাংলাদেশে।
ছবি: Goutam Hore/DW
সীমান্তের আশ্চর্য গ্রাম
গ্রামের নাম গোবিন্দপুর। এই গ্রাম কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পড়েছে। জায়গা ছিল না বলে গ্রামের বাড়িগুলির পিছন দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া সেসময় দেয়া যায়নি। ফলে এই গ্রামের মানুষরা বসবাস করেন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে।
ছবি: Goutam Hore/DW
গেট খুললে ঢোকা যায় ভারতে
সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে গেট। তখন পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রুটিরুজির জন্য আসতে হয় কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে ভারতে। আবার সময়ে ঘরে ফিরে যেতে হয়। ছয়টার পরে শরীর খারাপ বা জরুরি প্রয়োজন হলে বিএসএফকে জানাতে হয়। তারা তখন গ্রামবাসীদের পৌঁছে দেয় হাসপাতালে।
ছবি: Goutam Hore/DW
ঘর হতে যার আঙিনা বিদেশ
গোবিন্দপুর গ্রামের এই বাড়ির উঠোন একটু শুরু হতেই পড়ে যাচ্ছে বাাংলাদেশের সীমানা। সেখানে সাদা পাথর বসানো আছে, যার একদিকে লেখা ভারত, অন্যদিকে বাংলা।
ছবি: Goutam Hore/DW
কাঁঠাল গাছ পড়ে্ছে বাংলাদেশে
জবাবালা বিশ্বাসের উঠোনে দুই দেশের সীমানায় রয়েছে একটা কাঁঠাল গাছ। তুলসীমঞ্চের পিছনে ওই গাছে ভর্তি কাঁঠাল হয়ে আছে। কিছু কাঁঠাল হেলে আছে ভারতের দিকে, কিছু বাংলাদেশের দিকে।
ছবি: Goutam Hore/DW
কী বলছেন জবাবালা
এই বাড়িটি জবাবালা বিশ্বাস ও তার পরিবারের। বাড়িটি ভারতে, আঙিনার অনেকটাই বাংলাদেশে। জবাবালা বললেন, তাদের বাড়ির এটাই বিশেষত্ব। উঠোনের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সীমান্ত। তবে তারা এই জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
ছবি: Goutam Hore/DW
গ্রামের মধ্যে দিয়ে সীমান্ত
গ্রামের মধ্যে দিয়ে সীমান্ত চলে গেছে। ভারতের দিকে সেই পাথরে লেখা রয়েছে 'ইন্ডিয়া'। এই পাথরই বলে দিচ্ছে, গ্রামের কোনদিকটা ভারতে পড়েছে। এখান থেকে কাঁটাতারের বেড়ার গেটে যেতে সময় লাগে হেঁটে মিনিট চারেক।
ছবি: Goutam Hore/DW
পাথরের অন্যদিকে লেখা 'বাংলা'
ওই পাথরের অন্যদিকে লেখা 'বাংলা'। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জমি শুরু বা শেষ হচ্ছে ওখানেই। সেই সীমানায় পড়েছে ওই গ্রামে।
ছবি: Goutam Hore/DW
৪২ ঘর, ২১১ জন মানুষ
গোবিন্দপুরে আছে মোট ৪২টি ঘর। তাতে বসবাস করেন ২১১ জন। তাদের বাচ্চারা কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে স্কুলে যায়। পড়াশুনো করে। গ্রামে কেউ চাষ করেন, কেউ মাছ ধরেন, কেউ বা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত।
ছবি: Goutam Hore/DW
বাংলাদেশের মানুষ
মাঠ পেরিয়ে দূরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাস্তা। সেখানে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছেন। গোবিন্দপুর গ্রামে ও তার আশপাশের এলাকা পুকুর, জলাশয় ভর্তি।
ছবি: Goutam Hore/DW
কী বলছেন গ্রামবাসীরা
গ্রামবাসীদের একটাই দাবি, তাদের গ্রামও কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে চলে আসুক। তাহলেই তারা ঢুকে যাবেন মূল ভূখণ্ডে। তাদের বক্তব্য, বিএসএফ তাদের সঙ্গে সবসময় সহযোগিতা করে । কোনো অসুবিধা হলে সাহায্য করে।
ছবি: Goutam Hore/DW
অসুবিধা একটাই
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একটাই অসুবিধা আছে তাদের। এই গ্রামের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের পরিবার অনেক সময় পিছিয়ে যায়। কাঁটাতারের ওপারের গ্রামে বিয়ে দেবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করে। তবে তাই বলে এমন নয় যে, কাউকে এর জন্য অবিবাহিত থাকতে হয়। বিয়ে ঠিকই হয়।
ছবি: Goutam Hore/DW
ভোট দেবেন তারা
প্রাপ্তবয়স্ক গ্রামবাসীদের কাছে ভোটার আই কার্ড আছে। তারা গেট পেরিয়ে ভোট দিতে যাবেন। কিছুটা হাঁটতে হবে এই যা। তবে তাদের অভিযোগ, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল তাদের গ্রামে এসে প্রচার করে না। ফলে তারাও তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন না।
ছবি: Goutam Hore/DW
প্রচুর পুকুর
গ্রামের মধ্যে আছেএকাধিক পুকুর বা জলা জায়গা। প্রায় সকলের বাড়িতেই আছে, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ। যা পুকুরে, জলা জায়গায় রেখে দিলে মাছ ভিতরে ঢুকে পড়ে, আর বেরোতে পারে না। তারা নিয়মিত এভাবেই মাছ ধরেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
কাঁটাতারের বেড়ার পাশে চাষের জমি
গ্রামের পাশেই আছে চাষের জমি। এই এলাকার অন্য গ্রামের মতো গোবিন্দপুরও সবুজে ভরা। তফাতের মধ্যে কেবল ওই কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে তাদের অবস্থান।
ছবি: Goutam Hore/DW
চণ্ডীমণ্ডপও আছে
গ্রামের মধ্যেই আছে চণ্ডীমণ্ডপ। সেখানে পুজো হয়., হয় ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান। মানুষ আসেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
সবমিলিয়ে নয়টি গ্রাম
গোবিন্দপুর একা নয়, এখানে এরকম নয়টি গ্রাম আছে, যা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে। এই গ্রামগুলোর মানুষের জীবন এভাবেই কাটে।
ছবি: Goutam Hore/DW
16 ছবি1 | 16
আসামে বিদেশি ঘোষিত হওয়া ব্যক্তি এবং এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কমল চক্রবর্তী। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, এই নথি যাদের কাছে আছে, তাদের ফেরত পাঠানো সহজ। কিন্তু এমন বহু মানুষ আছেন, যাদের কাছে সেই নথি নেই। বাংলাদেশে তাদের কীভাবে পাঠানো হবে? বাংলাদেশ তাদের গ্রহণই বা কেন করবে?'' বস্তুত, আসামে এমন অনেক মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল, যার ফরেনার্স ট্রাইবুনাল বিদেশি ঘোষণা করেছে, কিন্তু তারা যে বাংলাদেশ থেকে এসেছে, এমন কোনো নথি নেই। তাদের জন্মও হয়েছে ভারতে। কিন্তু পারিবারিক কাগজ না থাকার কারণে তাদের বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে। কমলের প্রশ্ন, এই ধরনের মানুষদের কীভাবে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হবে? সুপ্রিম কোর্টকে বৃহস্পতিবার কেন্দ্র কী বলে তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কমল। পাশাপাশি, উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার বলেও মনে করেন তিনি।