বাংলাদেশি তথ্যকল্যাণীদের বিশ্বজয়
৭ মে ২০১৩ ‘‘এই স্বীকৃতি একটি দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল, তাই খুবই আনন্দিত বোধ করছি৷ তবে কোনো পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই কাজ আমরা শুরু করি নি৷’’ – ডয়চে ভেলেকে একথা বলেন অনন্য রায়হান৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডি.নেট-এর নির্বাহী পরিচালক তিনি৷ বাংলাদেশে তথ্যকল্যাণীদের যাত্রা শুরু হয়েছে এই সংস্থার মাধ্যমে৷ দ্য বব্স ২০১৩-এর ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’ বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে তথ্যকল্যাণী প্রকল্প৷
তথ্যকল্যাণী কারা?
নাম থেকেই দুটি বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়৷ তথ্যকল্যাণী একজন নারী এবং মূলত তথ্যসেবা প্রদান করেন তিনি৷ একজন তথ্যকল্যাণী উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পর তাঁর নিজের এলাকায় কাজ করেন৷ তাঁর বাহন হিসেবে থাকে একটি বাইসাইকেল আর তথ্য সুবিধা প্রদানের জন্য ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন ছোটখাট চিকিৎসা উপকরণ৷ তথ্যকল্যাণী কৃষকদেরকে বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রদান থেকে শুরু করে নারীর আইনি অধিকার সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করা এবং স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবাও প্রদান করেন৷
অনন্য রায়হান জানান, বর্তমানে ৭৯ জন তথ্যকল্যাণী বাংলাদেশের ৭টি অঞ্চলে কর্মরত আছেন এবং এই তথ্যকলাণীদের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ তথ্যকল্যাণীদের সেবার আওতায় রয়েছে৷ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ২৫০ জন তথ্যকল্যাণীকে নির্বাচন করে মাঠে নামানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে৷
যেভাবে কাজ করেন তথ্যকল্যাণীরা
তথ্যকল্যাণীদের সহায়তায় ‘ইনফোসেন্টার’ রয়েছে, যেখান থেকে মোবাইল, ইন্টারনেট এবং ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে তথ্যকল্যাণীদেরকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা হয়৷ পাশাপাশি তাঁদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যভিত্তিক সিডি৷ আর সাইকেল হচ্ছে পল্লী অঞ্চলে তথ্যকল্যাণীদের যাতায়াতের মূল মাধ্যম৷ অনন্য রায়হান বলেন, ‘‘তথ্যকল্যাণী নিজের কর্ম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি তাঁর নিজের পরিচিত গণ্ডির মধ্যেই সেবা দিয়ে থাকেন৷’’
বাংলাদেশের যেসব এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা নেই, প্রাথমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা পাবার জন্য মানুষকে অনেক কষ্ট করতে হয় এবং সময়োপযোগী তথ্যের যথেষ্ট সরবরাহ নেই, মূলত সেসব জায়গাতেই তথ্যকল্যাণীরা কাজ করছেন৷
অনন্য বলেন, ‘‘তথ্যকল্যাণী একটি স্বাধীন পেশা, যেখানে তাঁকে কারও ওপর নির্ভর করতে হয় না এবং নিজ এলাকায় নিজের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে সেবা প্রদানও তাঁর জন্য অনেকটাই স্বস্তিকর বিষয়৷’’
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড
চলতি বছর গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের মূল উপজীব্য হচ্ছে ‘‘প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক শক্তির ভবিষ্যত এবং প্রচার মাধ্যম’’৷ দ্য বব্স প্রতিযোগিতার একটি বিভাগের নামও গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম, যার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয় ফোরামের মূল উপজীব্যকে ভিত্তি করে৷ এরকম সুনির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য প্রতিযোগী নির্ধারণ সহজ কাজ নয়৷ তবে বাংলা ভাষার বিচারক প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং ব্লগার ড. শহীদুল আলম এই কাজটি সফলতার সঙ্গেই করেছেন৷ আর তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেছে গত সপ্তাহে বার্লিনে অনুষ্ঠিত দ্য বব্স প্রতিযোগিতার বিচারকদের বৈঠকে৷ বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্পটি প্রতিযোগিতার ১৫ জন বিচারকের মধ্য থেকে নয়জনের সমর্থন অর্জনে সক্ষম হয়৷ ফলে আরো ১৩টি ভাষার বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগকে হারিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে নেয় তথ্যকল্যাণী প্রকল্প৷
স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষার এই অর্জনে সন্তুষ্ট শহীদুল আলম৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একটি প্রকল্প পুরস্কার পেয়েছে, তাতে তো মজা পাবোই৷ তথ্যকল্যাণীরা তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সুবিধা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন৷ আর এর মাধ্যমেই হচ্ছেন স্বনির্ভর৷’’
অন্যদিকে অনন্য রায়হান বলেন, ‘‘দিনে দিনে তথ্যকল্যাণীরা সমাজের সব মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মানুষে পরিণত হয়ে উঠছে৷ কাজেই অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে টেকসই প্রকল্প, সে কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়৷’’
উল্লেখ্য, আগামী ১৭ থেকে ১৯শে জুন জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে দ্য বব্স-এর জুরি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে৷ অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত পল্লীর এক তথ্যকল্যাণীও থাকবেন সেই অনুষ্ঠানে৷ বাংলাদেশের সংগ্রামী নারীদের প্রতিনিধি হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করবেন তিনি৷