খেলার মাঠে ভিনদেশি পতাকা ওড়ানো নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তোলপাড় চলছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশি নাগরিকরা যাতে মাঠে অন্য দেশের পতাকা বহন না করে সেব্যাপারে ফেসবুক, ব্লগে চলছে ব্যাপক প্রচারণা৷
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ এশিয়া কাপকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত৷ খেলার মাঠে বাংলাদেশিদের হাতে পাকিস্তানি পতাকা দেখে ফেসবুকে হতাশা প্রকাশ করেন অনেকে৷ এরপর মাঠে ভারতের পতাকা নিয়ে প্রবেশেরও বিরোধিতা শুরু হয়৷ খেলার মাঠে বাংলাদেশিদের হাতে ভিন্ন দেশের পতাকা নিষিদ্ধের দাবিও ওঠে৷
‘বাংলা কমিউনিটি ব্লগ অ্যালায়েন্স' এই বিষয়ে লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশের মাটিতে আমরা ৩০ লাখ বাঙালির খুনীদের পতাকা হাতে ‘নামে বাংলাদেশের নাগরিক, কামে মনেপ্রাণে পাকিস্তানি' এজেন্টদের উল্লাস দেখতে চাই না৷ আমরা ফেলানি হত্যার ন্যায়বিচার পাইনি৷ ফেলানির রক্তে ভেজা বাংলাদেশের মাটিতে আমরা ভারতের পতাকা হাতে ভারতপ্রেমীর উল্লাস দেখতে চাই না৷''
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার মন্তব্যের ঘরে জেড রহমান লিখেছেন, ‘‘উপমহাদেশে পাকিস্তানের বোলিং আর ভারতের ব্যাটিং-ভক্ত অনেক ক্রিকেটপাগল মানুষ৷ এটা নিয়ে রাজনীতি না করলেই ভালো হয়৷ ভারত-পাকিস্তান খেলায় কেউ ভারতকে, কেউ পাকিস্তানকে সমর্থন করতেই পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে খেলায় যদি কেউ নিজ মাতৃভূমিকে না করে অন্য দলকে সাপোর্ট করে, তাহলে তাকে রাজাকার বলা চলে৷''
ক্রিকেট ঈশ্বরের অবসর, শেষ শচীন যুগ
দীর্ঘ দুই যুগে ব্যাট হাতে ২২ গজ কাঁপিয়েছেন তিনি৷ হতাশা, দুঃখ ভুলে যেত একজনের ব্যাটিং-এর মধ্য দিয়ে৷ টানা ২৪ বছর ধরে বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দে মাতিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার৷ বিদায় বেলায় তাই বেদনাতুর তাঁর ভক্তকূল৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
শচীন যুগের অবসান (১৯৮৯-২০১৩)
গত দুই যুগে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের ২৪ বছর কেটে গেলেও তাঁকে নিয়ে কমেনি ভক্তদের মাতামাতি৷ ভবিষ্যতেও হয়ত তাঁকে নিয়ে এই উন্মাদনা এমনই থাকবে৷ কিন্তু ক্রিকেট ব্যাট হাতে আর দেখা যাবে না শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
শুরু এবং শেষ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের পথচলা শুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে৷ অভিষেক ইনিংসে সংগ্রহ মাত্র ১৫ রান৷ ১৯৯৪ সালের ক্রিকেট জীবনের প্রথম শতকের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷ ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট খেলে ঘরের মাঠ মুম্বই থেকেই বিদায় এই ক্রিকেট মহানায়কের৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
পরিবার যেখানে অনুপ্রেরণা
১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বইতে জন্ম শচীনের৷ বাবা ঔপন্যাসিক রমেশ টেন্ডুলকার বরাবরই ছিলেন ক্রিকেটের প্রেরণা৷ ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক অঞ্জলি মেহতাকে বিয়ে করেন ক্রিকেটের মহানায়ক, যিনি বরাবরই ক্রিকেটে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁকে৷ তাঁদের দুই সন্তান সারা এবং অর্জুন টেন্ডুলকার৷
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images
দুঃখে ভারক্রান্ত ভক্তরা
কেবল ভারত নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই যেন কিছুদিন ধরে দুঃখ ভারাক্রান্ত শচীনের এই বিদায় বেলায়৷ একটা টেস্ট সিরিজের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে একজনের বিদায়কে এমন আড়ম্বর করে তোলাও শচীনের অন্য রেকর্ডগুলোর মতোই বিরল৷ মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে তাই সব সেলিব্রেটিরা উপস্থিত ‘লিটিল মাস্টার’-কে বিদায় জানাতে৷
ছবি: LawrenceGriffiths/Allsport
যত রেকর্ড
দীর্ঘ ২৪ বছরে কত রেকর্ড গড়েছেন টেন্ডুলকার তার হিসাব দেয়া মুশকিল৷ তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ২০০তম টেস্ট খেলছেন৷ টেস্টে ১৫ হাজারের বেশি এবং ৪৬৩টি ওয়ানডেতে ১৮ হাজারেরও বেশি রানের মালিক তিনি৷ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও অর্ধশতকের রেকর্ডগুলোও তাঁর দখলে৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতক, সর্বপ্রথম ওয়ানডেতে দ্বিশতক হাকানোর রেকর্ডটিও তাঁর৷ গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই কিংবদন্তি৷
ছবি: Adrian Murrell/ALLSPORT
প্রিয় সতীর্থ
শুধু মাঠের ভেতর নয়, বাইরেও তিনি অনন্য সাধারণ এক ব্যক্তিত্ব৷ সতীর্থদের কাছে বরাবরই প্রিয় বন্ধু এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি তিনি৷ অভিষেকের সময় অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেব ছিলেন সতীর্থ৷ কপিল থেকে শুরু করে ভারতীয় দলের বর্তমান নবীনতম সদস্যটি পর্যন্ত শচীনের গুণমুগ্ধ৷ তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নেই বললেই চলে৷ পুরো ক্রিকেট জীবনেই টেন্ডুলকারের আম্পায়ারের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা দেখা গেছে বারবার৷
ছবি: Hamish Blair/Getty Images
ভারতীয়দের ক্রিকেট ঈশ্বর
ভারতীয়দের কাছে তিনি ক্রিকেটের ঈশ্বর, তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী৷ দেশের বাইরেও তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয়তা৷ যেখানেই খেলতে গেছেন পেয়েছেন মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা৷ সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ভীষণ প্রিয় ছিলেন তিনি৷ বলতেন, শচীনের খেলার ধরন ঠিক তাঁর মতো৷ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারকে আখ্যায়িত করেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা৷ বলেছেন, শচীন ক্রিকেটের মোহাম্মদ আলী৷
ছবি: dapd
ভারতের সম্মাননা
টেন্ডুলকার তাঁর দেশকে যেমন সম্মান এনে দিয়েছেন, তেমনি দেশেও পেয়েছেন অজস্র সম্মান৷ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ, সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, ভারতীয় রাজ্যসভার সম্মানসূচক সদস্য পদসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি৷
ছবি: dapd
কয়েন
শচীনকে সম্মান জানাতে এ বছরের মে মাসে শচীনের ছবি সম্বলিত ১০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়৷ ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের ঐ মুদ্রাটির মূল্য ২৪ হাজার রুপি৷ ভ্যালুমার্ট গোল্ড অ্যার্ড জুয়েলস কোম্পানি এটি বাজারে আনে৷
ছবি: INDRANIL MUKHERJEE/AFP/Getty Images
উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি
ক্রিকেটের সফলতম ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের নিখাঁদ ভালোবাসা, যার কারণে তাঁর বিদায় বেলায় ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমত হাহাকার৷ অসাধারণ কাভার ড্রাইভ, নিখুঁত স্কয়ার কাট, ছক্কা মারা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যগুলো আর দেখা যাবে না কখনো৷ শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের অবসর তাই ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
একই বিষয়ে ফাহাম আব্দুস সালাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ক্রিকেট একটা খেলার নাম, রাজনীতির মাঠের অক্ষমতার বদলা নেয়ার যুদ্ধক্ষেত্র না; এবং দর্শকের জন্য এটা হওয়া উচিত একটা উৎসব৷ আপনার যাকে ইচ্ছা তাকে সাপোর্ট করেন, সরকার বলার কে? নাকি বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশকে সমর্থন করা যাবে না - এই মর্মেও আইন করবেন৷''
এদিকে, ‘মাজেল মি নট' নামক একটি ফেসবুক পাতা থেকে সোমবার জানানো হয়েছে, ‘‘বাংলা কমিউনিটি ব্লগ অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে সমন্বিত দাবি জানানোর পর সারা দেশে বাংলাদেশি নাগরিকের হাতে ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর আপত্তিকর চর্চার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ অবগত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ বাংলা কমিউনিটি ব্লগ অ্যালায়েন্স এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে সক্রিয় সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে৷''
ব্লগার সুশান্ত দাসগুপ্ত এসংক্রান্ত একটি সংবাদ থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন, ‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলছেন, টি-২০ বিশ্বকাপে এখন থেকে কোনো বাংলাদেশি অন্য কোনো দেশের পতাকা বহন বা প্রদর্শন করতে পারবেন না, বা তা নিয়ে মাঠে ঢুকতে পারবেন না৷''