1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গারা বিদেশে গিয়ে দেশের দুর্নাম করছে

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৫ মে ২০১৮

বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে কাজ করেন৷ সেখানে বিপদেও পড়েন তাঁরা৷ কিন্তু প্রয়োজনে বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে কতটা সহযোগিতা পান প্রবাসী শ্রমিকরা? এ নিয়েই মালয়েশিয়া থেকে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন জোটন চন্দ্র দাস৷

Katar Doha Gastarbeiter
ছবি: imago/imagebroker

ডয়চে ভেলে: আপনি কতদিন ধরে মালয়েশিয়া আছেন?

জোটন চন্দ্র দাস: আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছি৷

কী ধরনের কাজ করছেন?

আমি এখন মুগরির ফার্ম করি৷

আপনি নিজেই ব্যবসা করছেন?

 আমাদের তো নিজের ব্যবসা করার সুযোগ থাকে না৷ আমি এখানকার একজনের লাইসেন্স ব্যবহার করে এই ব্যবসা করছি৷

এখান থেকে আপনি কেমন উপার্জন করেন?

খুব বেশি একটা আয় করতে পারি না৷ মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার রিঙ্গিত আয় করি৷

এটা বাংলাদেশি টাকায় কত হয়?

এই ধরেন মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা৷

বাংলাদেশে কি আপনাকে টাকা পাঠাতে হয়?

হ্যাঁ, নিয়মিতই টাকা পাঠাতে হয়৷

কীভাবে টাকা পাঠান?

আমি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাই, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমেও পাঠাই৷ 

Interview of Joton Chaondra Das for dwAlaap - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

আপনি যেহেতু বৈধভাবে টাকা পাঠান, সরকার তো এর ট্যাক্স পায়৷ মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে আপনারা কেমন সহযোগিতা পান?

নির্দিষ্ট করে কোনো ইস্যু ছাড়া এগিয়ে আসে না৷ গত প্রায় তিন বছর ধরে আমি মালয়েশিয়াতে লেখালেখি করি, গবেষণা করি এবং বিভিন্ন সংগঠন আমি নিজেই তৈরি করেছি৷ আমি বাংলাদেশ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় এসেছিলাম৷ এসে দেখলাম দালালরা আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে সাপ লুডু খেলার মতো খেলছে৷ তখন এগুলো আমি সহ্য করতে পারিনি৷ তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই, যে শিক্ষা মানুষের কাজে লাগবে না – আমার সেই শিক্ষার প্রয়োজন নেই৷ যতটুকু পারি নিজে মানুষের জন্য কাজ করব৷ তখন আমি ঐ শহর, ঐ পড়াশোনা রেখে অন্য শহরে চলে আসি এবং মানুষের জন্য কাজ করা শুরু করি৷

আপনার মতো অন্যদেরও অভিযোগ দূতাবাসে তারা সহযোগিতা পান না? এমনকি সেখানে প্রবেশ করাই খুব কঠিন৷ অনেকে সেখানে যেতে পারেন না৷ এর কারণ কী?

প্রথমত আমাদের দেশে যারা উচ্চশিক্ষিত তাদের দেশপ্রেম কম৷ আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে, যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মিশনে চাকরি নিয়ে বিদেশে এসেছেন তাঁরা কিন্তু যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন সেটা গরিবের বা বিদেশে শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থের ট্যাক্সের টাকায় পড়েছেন৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আর ফি দিতে হয় না৷ সরকারের অনুদানেই সেটা চলে৷ সরকার তো আমাদের টাকা থেকেই অনুদান দেয়৷ মিশনে যারা চাকরি নিয়ে আসে তাদের সাধারণ কর্তব্য এই প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করা৷ অথচ তারা সেটা করছেন না৷ কারণ তারা দেশপ্রেমিক না৷ বিভিন্ন সভা সেমিনারে তারা দেশপ্রেমের কথা বলেন৷ অথচ কাজেকর্মে তারা কিছুই করেন না৷

আপনারা ওখানে কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করেন?

একটা উদাহরণ দিয়ে বলি৷ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় মালায়ু ছাড়া আরো দুইটা জাতি বসবাস করে৷ একটা চাইনিজ এবং আরেকটা সাউথ ইন্ডিয়ান বা তামিল৷ এখানকার পত্রিকাগুলোর হিসেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক আছে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন, অর্থাৎ ২১ লাখের মতো৷ এই সংখ্যাটা তাদের তৃতীয় যে জাতি সাউথ ইন্ডিয়ান তাদের চেয়ে অনেক বেশি৷ মালয়েশিয়ায় সংখ্যার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থান বাংলাদেশিদের হয়ে গেছে৷ এই ২১ লাখের সবার বৈধতা নেই৷ আমার ধারণা, অর্ধেকের বেশি অবৈধ৷ এদের হাজারো সমস্যা মোকাবেলা করে থাকতে হচ্ছে৷

কিছুদিন আগে আমাদের সরকার জি প্লাস জি, অর্থাৎ গভমেন্ট টু গভমেন্ট পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করে৷ এর ভিসার মূল্য মাত্র ৩৫ হাজার টাকা৷ সবমিলিয়ে একজন শ্রমিকের খরচ হওয়ার কথা ৯৫ হাজার টাকা৷ অথচ দালাল চক্রের কারণে এই ভিসায় শ্রমিক আসতে তাদের দিতে হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা৷ মালয়েশিয়ায় এদের বেতন হবে ২০ হাজার টাকা বা ১ হাজার রিঙ্গিত৷ এখানে থেকে-খেয়েও তারা মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন৷ এই ভিসায় সাড়ে ৩ লাখ লোক আসার কথা ছিল৷ ইতিমধ্যে ৮৪ হাজার চলে এসেছে৷ এই শ্রমিকরা কিছুদিনের মধ্যে অবৈধ হয়ে যাবে৷ এখন এই ৩-৪ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে এখানে এসে দুই বছর পর চলে গেলে তো তার আসল টাকাই উঠবে না৷ কারণ এই টাকাটা তারা এনজিও বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে এসেছে৷ দেশে গেলেও তো তাকে টাকাটা শোধ করতে হবে৷ ফলে সে অবৈধ হয়ে এখানে থেকে যাচ্ছে৷

এদের ভিসার মেয়াদ কতদিন?

এক হাজার রিঙ্গিত বেতনে তাদের ভিসার মেয়াদ এক বছর৷ বেড়ে দুই বছর হতে পারে৷ কোম্পানি চাইলে আরো বাড়াতে পারে৷ কিন্তু সবার তো আর বাড়বে না৷ আমি গবেষণা করে দেখেছি, কিছু রাঘব বোয়াল নিজের পকেট ভারী করার জন্য এবং প্রবাসী রেমিটেন্সকে ধ্বংস করার জন্য এই কাজগুলো করছে৷

তাহলে দুই বছরে তো এদের খরচের টাকাই উঠছে না?

দেখেন এদের ভিসার মেয়াদ এক বছর৷ পরের বছর সেটা রিনিউ করতে আরো ৬০/৭০ হাজার টাকা দিতে হবে৷ এই টাকাই তো সে দিতে পারবে না৷ তাহলে খরচের টাকা উঠবে কীভাবে?

এই শ্রমিকরা বিপদে পড়লে কী করেন? কার শরণাপন্ন হন?

এখানে সবাই বিপদে পড়ে না৷ অনেকেই ভালো আছে৷ কিছু কিছু বৈধ হয়েছে৷ যদিও সেই সংখ্যা খুব একটা বেশি না৷ আর যারা বিপদে পড়বে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই৷ একটু শেল্টার নেবে, এমন কোনো জায়গা এখানে নেই৷ সর্বশেষ তাকে পরিশোধন কেন্দ্রে যেতে হয়৷ এখনো অসংখ্য বাংলাদেশি এই পরিশোধন কেন্দ্রে আছেন৷

পরিশোধন কেন্দ্রটা কী?

বাংলাদেশে যেটাকে জেলখানা বলে, সেটাই পরিশোধন কেন্দ্র৷ এখানে আরেকটু বলে রাখি, আমাদের দেশে এখন যে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী খুবই ভালো একটা কাজ করেছেন তাদের আশ্রয় দিয়ে, কিন্তু তারা কোনোভাবে কক্সবাজারের ভাষাটা শিখে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এখানে চলে আসছেন৷ তারা পাসপোর্ট নিচ্ছে বাংলাদেশের আর তাদের টাকা কিন্তু চলে যাচ্ছে মিয়ানমার৷ কোনো রেমিটেন্স বাংলাদেশে যাচ্ছে না৷ এটা তো একটা বিরাট সমস্যা৷ তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে৷

এমন কোনো রোহিঙ্গার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে?

অসংখ্য আছে৷ আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে৷ এখানে সমস্যা হলো, তারা এখানে এসে খারাপ কাজ করে ধরা পড়ার পর বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখাচ্ছে৷ ফলে এতে বাংলাদেশের বদনাম হচ্ছে৷ সরকারকে বলব তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে, না হরে আমাদের শ্রমবাজারে একটা ক্ষতি হবে৷ 

বাংলাদেশ থেকে বিএমইটি বা বায়রার মাধ্যমেই তো শ্রমিকরা যান? তারা কি আপনাদের খোঁজ খবর নেন?

বায়রার মহাসচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ সভা-সেমিনারে তাঁরা সুন্দর বক্তব্য দেন৷ তাঁরা যে শ্রমিকদের পাঠান তার বৈধ কাগজপত্রও আছে৷ সেটা সত্য৷ কিন্তু তারা দক্ষ শ্রমিক বলে যাদের পাঠাচ্ছেন, তারা আসলে কোনো কাজই জানেন না৷ ফলে এখানে এসে তারা খুব বিপদে পড়ে যাচ্ছে৷ আসলে তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না৷

আমি কিছুদিন হলো শ্রমিকরা বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করছি৷ এছাড়া কেউ মারা গেলে তার লাশ দেশে পাঠানো, কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও আমি করছি৷ এর জন্য আমি শ্রমিকদের সংগঠিত করছি৷ তাদের সঙ্গে নিয়েই আমি এই কাজ শুরু করেছি৷ এর জন্য আমি একটা সংগঠন তৈরি করেছি৷

আপনার সংগঠনের নাম কী?

আমার সংগঠনের নাম ‘বাংলার নতুন সেনা – কেএল'৷ এটা আমি নিজেই তৈরি করেছি৷ এখন অনেক নতুন ছেলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে৷ আমি তাদের শেখাচ্ছি, কীভাবে হাত ধুতে হয়, কীভাবে হাতের নক পরিষ্কার রাখতে হবে, এদেশের ভাষা কীভাবে বলতে হবে৷ আসলে যে কারণে আমাদের শ্রমিকরা অসুস্থ হয় এবং যে কারণে তারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায় সেগুলো তাদের শেখাচ্ছি৷ অনেকেই কাজ থেকে এসে হাত না ধুয়েই খেয়ে ফেলে৷ এখানে সপ্তাহে একদিন নক কাটতে হয়, সেটা তারা করে না৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা অনেকেই নিজের নামের ইংরেজি বানান জানে না৷

মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?

আমার শুধু একটাই কথা, আমাদের যে জনসংখ্যা সেটা কোনোদিনই অভিশাপ হবে না, বরং জনশক্তিতে পরিণত হবে, যদি তারা বিদেশে যেখানেই যাক যাওয়ার আগে নিজের কাজ, ভিসা এবং বিস্তারিত যাচাই করে জেনে আসেন৷ আমাদের প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র আছে৷ সেখানে গেলেই আপনি জানতে পারবেন আপনার ভিসাটা কী, কী কাজ করবেন, সেখানে বেতন কত – সবই৷ এক কোটি প্রবাসী শ্রমিকের কাছে বা যাঁরা আসতে চান, তাঁদের সবার কাছেই আমরা এই চাওয়া৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ