যুক্তরাজ্যে সমলিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মুসলিম তরুণের বিয়ে হয়েছে৷ বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানায়, ব্রিটিশ মুসলিম জনগোষ্ঠীতে এটিই প্রথম সমকামী বিয়ের ঘটনা৷ এই বিয়ের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের ওয়ালসালে শহরের বিবাহ নিবন্ধন কার্যালয়ে বন্ধু-স্বজনদের উপস্থিতিতে বিয়ে করেন জাহেদ চৌধুরী ও সেয়ান রোগান৷ জাহেদ চৌধুরীর বয়স ২৪ বছর৷ রোগান ১৯ বছরের তরুণ৷
বাংলাদেশি বাবা-মা আর তিন ভাই-বোনের সঙ্গে ইসলাম বিশ্বাসী পরিবারে বেড়ে ওঠা জাহেদ চৌধুরী জানান, পারিবারিকভাবে ‘কুলাঙ্গার' হিসেবে বেড়ে উঠেছেন তিনি৷ সমকামী হওয়ার কারণে বেড়ে উঠতে হয়েছে অনেকটা একঘরে হয়ে৷ দৈহিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের চেষ্টায় পরিবার থেকে হজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় জমায়েতেও পাঠানো হয় তাকে৷
নানা তিরস্কার, অপমান আর নির্যাতন সইতে না পেরে দুই বছর আগে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন জাহেদ৷ আর তখনই দেখা মেলে রোগানের৷ জাহেদ জানান, তাকে বেঞ্চে বসে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন রোগান৷ আত্মহত্যা থেকে তাকে রক্ষা করেন৷ এরপর শুরু হয় দু'জনের একসঙ্গে বসবাস৷
নূর খান
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই তরুণ আরও জানান, ১৫ বছর ধরে যে মসজিদে যেতেন সেখানে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, অন্য মুসলিম বালকরা তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করতো৷ এমন অবস্থায় পড়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি৷ এরপরই রোগানের সঙ্গে দেখা হয়৷ আর গত জুনে রোগানের জন্মদিনে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন জাহেদ৷
জাহেদ বলেন, ‘‘আমার পরিবারের কেউ কেউ মনে করে এটি একটি রোগ এবং এর থেকে আরোগ্য লাভ সম্ভব৷ কেউ কেউ এখনও মনে করেন এটি গ্রহের দশা৷ আমি মানুষকে বলতে চাই যে, আমি এ সব পরোয়া করি না৷''
তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে লোকজন আমার ওপর থুথু দিতো, আবর্জনার বাক্স ছুড়ে মারতো, শূকর বলে গালাগালি দিতো এবং মুসলিম লোকজন ‘হারাম' বলে চিৎকার করতো – যা ছিল খুবই অপমানজনক৷''
এদিকে বাংলাদেশেও এলজিবিটি কমিউনির লোক থাকলেও তারা এখনও ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি'৷ বিশেষ করে গত বছরের ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগান এলাকায় সমকামীদের অধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘রূপবান'-এর সম্পাদক জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যার পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি৷ উলটে সমকামীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আরো কঠোর অবস্থানে গেছে৷
সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ায় বদলে যাবে তাঁদের জীবন
তাইওয়ানের সাংবিধানিক আদালত সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এশিয়ার মধ্যে এই দেশটিই সর্বপ্রথম সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিল৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু যুগলের কথা, এই আইনের ফলে যাদের জীবন বদলে যেতে চলেছে৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ডাফনে এবং কেনি
ডাফনে এবং কেনি’র পরিকল্পনা এ বছরের শেষে বিয়ে করার৷ সমকামী, তৃতীয় লিঙ্গ যুগলদের একটি সমাবেশে কেনি ডাফনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এখন তারা বিয়ের পোশাক-আশাক কী হবে তাই নিয়ে ব্যস্ত৷ তবে নতুন আইন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাইওয়ানে সমকামীরা ‘পার্টনার’ হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারতো৷
ছবি: Reuters/T.Siu
ড্যানিয়েল চো এবং চিন সাই
....তবে তখন তাদের অধিকার সীমিত ছিল৷ এই যুগল জানিয়েছে, ‘‘যতদিন তাইওয়ান সরকার আমাদের সম্পর্ককে বৈধতা দিতে রাজি হয়নি ড্যানিয়েল নিউইয়র্কে চাকরির জন্য গিয়েছিল৷ তবে আমি স্পাউস ভিসার আবেদন করতে পারিনি৷ এই আইন পাস হলে আমরাও বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হেয়ার লিন এবং চো চিয়া-লিন
হেয়ার লিন একজন প্রকাশক এবং চো চিয়া-লিন একজন লেখক৷ দু’জনই এমন পৃথিবী চান, যা হবে মুক্তচিন্তার মানুষের অভয়ারণ্য৷ লিন বলেছেন, ‘‘২০০৩ সালে আমি যখন প্রথম ‘গে প্যারেডে’ অংশ নেই, তখন কেবল এক হাজার মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ এতে যোগ দেন৷’’ ‘‘এছাড়া সমকামী শিল্পী, রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও রয়েছেন৷ তাই এ পৃথিবী পরিবর্তন হবে বলে আমার বিশ্বাস-’’ বললেন লিন৷
ছবি: Reuters/T.Siu
সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন, যার মন্ত্রিসভায় তৃতীয় লিঙ্গের একজন মন্ত্রী রয়েছেন৷ তিনি টুইটারে জানালেন, ‘‘বৈষম্য দূরীকরণ কেবল একটি সূত্রপাত, এখন প্রয়োজন আলোচনা এবং এ বিষয়ে বোধ জাগ্রত করা৷ সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই বললেন, ‘‘তাইওয়ান যদি এই ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না দেখায় তাহলে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখব এবং দেশকে ‘রংধনু’ দেশে পরিণত করবো৷ এমনকি প্রয়োজনে বিপ্লবও করবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
ওয়াং ই এবং মেং উ-মেই
বার্ষিক ‘গে প্যারেডের’ জন্য তাইওয়ান বিখ্যাত৷ শিল্পী ওয়াং ই বললেন, ‘‘আপনার কি মনে হয় আমরা এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছি? বাবা-মা’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই জটিল ছিল৷ কিন্তু আমার মনে হয়, সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে নিয়ে আলোচনা এমন একটা বিষয়, যা একটা মুক্ত দেশে হওয়া প্রয়োজন৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান এর মতে, ‘‘বিপরীতকামী আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ বৈষ্যমের অনেক ধরণ রয়েছে৷ আগে ছিল বর্ণবৈষম্য৷ যে কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর এখন হচ্ছে লিঙ্গের কারণে বৈষম্য, কিন্তু সবাই তো এক, মানুষ৷’’ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ সমলিঙ্গের বিয়েকে সমর্থন করে৷
ছবি: Reuters/T.Siu
লেবের লি এবং এমিলি চেন
লেবের লি তার সঙ্গী এমিলি এবং তাদের ছেলে মর্ক-কে নিয়ে ইলেনে থাকেন৷ চেন বললেন, ‘‘আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা সন্তানের৷ তাই কৃত্রিম পদ্ধতিতে আমরা এই সন্তান নিয়েছি৷ কিন্তু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিল, কেননা, কেবল একজন শুধু সন্তানের মা হিসেবে নিজেকে নিবন্ধিত করতে পারে৷ শিশুটি দুই মায়ের স্নেহে বেড়ে উঠছে৷ একটা পরিবার কীভাবে গড়ে উঠছে সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্ব রয়েছে ভালোবাসার৷’’
ছবি: Reuters/T. Siu
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন শিক্ষার্থী৷ তাদের এই সেল্ফি তাওউয়ানে তোলা৷ জি-নিং জানালেন, ‘‘সমলিঙ্গে বিয়ের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, তাদের বিরোধিতা করার কারণ হলো, পরবর্তী প্রজন্মকে তারা এর কবল থেকে রক্ষা করতে চায়৷ কিন্তু আমিই তো পরবর্তী প্রজন্ম৷ যারা এখন মৃতপ্রায়, আমাদের কথা না শুনে কেন তাদের কথা কেউ শুনবে ? তাই আমাদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Reuters/T. Siu
8 ছবি1 | 8
জুলাহাজ মান্নানসহ দু'জনের হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে গত বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ, অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের দিন ‘রংধনু' র্যালি বের করার চেষ্টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এলাকা থেকে চারজন সমকমীকে আটক করে পুলিশ৷ তাঁদের র্যালিও করতে দেওয়া হয়নি৷
চলতি বছরের ১৯ মে ভোররাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের আটিবাজার ছায়ানীড় কমিউনিটি সেন্টার থেকে ২৭ জন সমকামীকে আটক করে৷ তাঁরা ওই কমিউনিটি সেন্টারে একত্রিত হয়েছিলেন৷ পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে তাদের পুলিশ রিমান্ডেও নেয়া হয়৷
জুলহাজ মান্নানসহ দু'জনকে হত্যার আগে বাংলাদেশে এলজিবিটি কমিউনিটির কিছু কার্যক্রমের খবর পাওয়া যেত৷ ২০১৫ সালের জুন মাসে তাঁরা ঢাকায় ঘরোয়াভাবে ‘ধী-এর গল্প' নামে সমকামীদের একটি কমিক স্ট্রিপ প্রদর্শন করেন৷ এর আগেও সমকামীরা ‘রূপবান' নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন৷ প্রকাশ করা হয় সমপ্রেমী কবিতার বই ‘রুপঙতি'৷
সমকামী এক ইমামের কথা
দক্ষিণ আফ্রিকার এক মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস গত ২০ বছর ধরে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁদের জন্য একটি মসজিদও নির্মাণ করেছেন তিনি৷
ছবি: The Inner Circle
সমকামীদের জন্য মসজিদ
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের ভিনবার্গ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস৷ বছর পাঁচেক আগে তিনি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ হেন্ড্রিকস একজন সমকামী৷ তাঁর মসজিদে ২৫ জন নিয়মিত নামাজ আদায়কারী আছেন৷ মাঝেমধ্যে সমকামীদের মধ্যে বিয়েও পড়ানো হয় ঐ মসজিদে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch
সমকামী মুসলিমদের সহায়তা
নিজে সমকামী হওয়ায় কেপটাউনের সমকামী মুসলিমদের অসহায়ত্বের কথা জানতেন হেন্ড্রিকস৷ তাই তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে ১৯৯৬ সালে ‘দ্য ইনার সার্কেল’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি৷ এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: The Inner Circle
বিয়ে করেছিলেন হেন্ড্রিকস
অল্প বয়সেই নিজের সমকামিতার বিষয়টি অনুভব করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু তাঁর দাদা ইমাম ছিলেন৷ তিনি তাঁকে বলেছিলেন, সমকামীরা দোযখে যাবে৷ এছাড়া সেই সময় সমকামিতা বিষয়ে মুসলিম সমাজে মনে করা হত যে, বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সে কারণে এক নারীকে বিয়েও করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারেন, বিরাট ভুল করেছেন৷ তবুও সেভাবে ছয় বছর কেটে যায়৷ দুই সন্তানের জন্মও হয়৷ পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R.Bosch
সমকামিতা প্রসঙ্গে কোরান
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হেন্ড্রিকস বলেন, ‘‘কোরান সমকামিতার বিরুদ্ধে নয়৷ ইসলামি অনেক পন্ডিতও এখন সেটি বুঝতে শুরু করেছেন৷ এমনকি মহানবির (সা:) বাড়িতে এমন ব্যক্তিরা কাজ করতেন যাঁরা নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন না৷ মহানবি (সা:) এর বাড়িতে সমকামী চাকর থাকার মানে সমকামীদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল৷’’
ছবি: Imago/B. Strenske
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বে প্রথম
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সে দেশের ১৯৯৬ সালের সংবিধানে সমকামীদের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে সেখানে সমলিঙ্গ বিয়ের বৈধতা রয়েছে৷
ছবি: Johann Hattingh/AFP/Getty Images
আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সমকামীবান্ধব অনেক রেস্তোরাঁ, বার, হোটেল ও ক্লাব আছে৷ সেজন্য এই শহরটি আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’ বলেও পরিচিত৷
ছবি: dapd
আছে তিন লক্ষ মুসলিম
কেপটাউনে প্রায় তিন লক্ষ মুসলিমের বাস৷ সেখানকার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম সমকামিতার বিরুদ্ধে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে সমকামীদের গৃহবন্দি করে রাখার পক্ষে৷ হেন্ড্রিকসের মসজিদ থেকে ১০ কিমি দূরের একটি মসজিদের ইমাম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘সমকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটি নিষিদ্ধ৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
পরিবর্তন আনছেন হেন্ড্রিকস
সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় কয়েকবারই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু থেমে যাননি তিনি৷ বরং তাঁর দৃঢ়তার কারণে সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে৷ তাইতো তাঁর মসজিদের দুই কিলোমিটারের এর মধ্যে আরেকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে যেখানে সমকামীদেরও নামাজ পড়ার অধিকার রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
8 ছবি1 | 8
বাংলাদেশে সমকামীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ' (বিওবি)৷ বাংলাদেশে ‘গে বাংলাদেশ' নামে আরো একটি সমকামী গ্রুপের নাম জানা যায়৷ এই গ্রুপ দু'টি অনলাইন ভিত্তিক৷ তবে তাঁদের এখন আর সক্রিয় দেখা যায়না গ্রুপগুলোতে৷
বাংলাদেশে সমকামীদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে৷ এই গবেষণার শিরোনাম ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি'৷ এই গবেষণা করেছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি)৷ ২০১৫ সালের ১৭ই জুন প্রকাশিত ওই গবেষণাটি করা হয় বাংলাদেশের ৫০ জন সমকামী এবং সমকামী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে৷ সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সমকামীদের ব্যাপারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক৷ আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
প্রতিবেদনে সমকামীরা তাঁদের প্রতি নির্যাতন এবং হুমকির কথাও বলেন৷ বলেন আইনি বৈষম্য এবং মানবাধিকার লংঘনের কথা৷ এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সমকামীর সংখ্যা কত, তা বলা হয়নি৷ এছাড়া এ নিয়ে কোনো জরিপের খোঁজও পাওয়া যায়নি৷ তবে জানা গেছে ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ' গ্রপের নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি৷ এই গ্রুপের সদস্যরা শিক্ষিত, এমনকি এঁদের মধ্যে পিএইজডি ডিগ্রিধারীও আছেন৷
সমকামিতা বৈধ এমন কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ
বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হলেও, তারা বৈষম্যের শিকার হন৷ ছবিঘরে থাকছে এমনই আটটি দেশের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্ক
১৮৫৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য সমকামিতাকে বৈধতা দেয়৷ এরপর তুরস্ক স্বাধীন হলে সেই আইন বলবৎ রাখে৷ তবে সে দেশের সংবিধানে সমকামীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন তেমনি সামাজিকভাবেও সমকামীদের এখনও বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. O. Sandal
মালি
পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সংবিধানে সমকামী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ তবে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সমকামিতা পছন্দ করে না৷ তাই বৈধ হলেও মালির সমকামীরা বেশ ভালোই বৈষম্যের শিকার হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Saget
জর্ডান
১৯৫১ সালে দেশটিতে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়৷ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের তুলনায় সেখানকার সমকামীরা বেশ ভালোই আছে৷ সরকারও আইন করে সমকামীদের ‘অনার কিলিং’-এর হাত থেকে রক্ষা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস এই দেশটিতে৷ সেখানকার আইনে সমকামিতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়নি৷ ২০০৩ সালে একবার সেরকম উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Rudianto
আলবেনিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সমকামিতা বৈধ৷ এমনকি আইন করে সমকামীদের বৈষম্যের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: SWR/DW
বাহরাইন
১৯৭৬ সালে সেখানে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়৷ তবে দেশটিতে এখনও প্রকাশ্যে ছেলেরা মেয়েদের, কিংবা মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরতে পারে না৷
ছবি: Getty Images
ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর)
পশ্চিম তীরের জর্ডান অংশে ১৯৫১ সাল থেকে সমকামিতা বৈধ৷ তবে গাজাতে নয়৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, গাজায় যে আইনের কারণে সমকামিতা নিষিদ্ধ সেটা বলবৎ হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে৷
ছবি: Shadi Hatem
ইরাক
দেশটি সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও বিষয়টি এখনও সেখানে ‘ট্যাবু’ হয়েই আছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Safin Hamed
8 ছবি1 | 8
নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি অধিকার সংক্রান্ত তৎপরতা থমকে গেছে৷ তাঁদের ওপর পুলিশের নজরদারি এবং চাপও বেড়েছে৷ যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের একাংশ দেশের বাইরে চলে গেছেন৷ আর যাঁরা আছেন, তাঁরা এখন আর প্রকাশ্য কোনো তৎপরতা চালাচ্ছেন না৷
বুধবার এলজিবিটি কমিউনিটির একজনকে সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব দেয়া হলেও, তিনি বা তাঁর মাধ্যমে কেউ রাজি হননি সাক্ষাৎকার দিতে৷ এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁরা যে চাপ এবং ভয়ের মধ্যে আছেন, তা স্পষ্ট৷ তাছাড়া এঁদের সংখ্যাও জানা কঠিন৷ তাঁদের কথা হলো, ‘ইনভিজিবল আইডেনটিটি'-র সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে কীভাবে?'
তবে ১৯ মে কেরানীগঞ্জে ২৭ জন সমকামীকে আটকের কয়েকদিন পর, এলজিবিটি কমিউনিটির নামে ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগকে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও রাষ্ট্রযন্ত্র সমকামীদের কলঙ্কিত করছে এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে৷'
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধরায় সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনে কী আছে, তা নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে৷ আমাদের সামাজিক বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে৷ তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, যৌন জীবনের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না৷ আর সেটা আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌন জীবন থেকে আলাদাও হতে পারে৷ বিশ্বে এখন পরিবর্তিত চিন্তার দিকে যাচ্ছে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ সমকামীদের সমবেত হতে দিচ্ছে না৷ তাঁদের মত প্রকাশ করতে দিচ্ছে না৷ এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷ আইন প্রয়োগের নামে তাঁদের মৌলিক অধিকারগুলোকে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে৷ যে কোনোভাবেই আইন প্রয়োগ করা হোক না কেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মত প্রকাশ করতে দিতে হবে সকলকে৷ ব্যভিচার বা অসুস্থতা বলে তাঁদের অধিকার থেকে দূরে রাখার কাজ পৃথিবীতে এখন ক্রমান্বয়ে কমে আসছে৷''
নূর খানের কথায়, ‘‘জুলহাস মান্নানসহ দু'জনকে হত্যার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশে তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে৷ অন্যদিকে পুলিশ সমকামী বা ভিন্নভাবে জীবনযাপনকারীদের ওপর কোনো কোনো সময় এমন আচরণ করছে, এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর আঘাত করছে৷
যেসব দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৩টি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৪টি দেশ ইউরোপের৷ তালিকায় এশিয়ার কোনো দেশ নেই৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নেদারল্যান্ডস
২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নেদারল্যান্ডসে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ছবিতে সমকামী দম্পতিকে বিয়ের পর কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার ১০ বছর পূর্তিতে তাঁরা বিয়ে করেন৷
ছবি: Evert Elzinga/AFP/Getty Images
ইংল্যান্ড
২০১৩ সালের জুলাইতে সমকামী বিয়ে বৈধ করে আইন পাস হয়৷ এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এলটন জন তাঁর সঙ্গীকে বিয়ে করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
ফ্রান্স
দেখছেন দেশটির প্রথম সমকামী জুটির বিয়ের ছবি৷ ২০১৩ সালের মে মাসে ফ্রান্সে এই বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters
লুক্সেমবুর্গ
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেয়া হয়৷ এর চার মাস পর সঙ্গীকে বিয়ে করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাভিয়ের বেটেল (ডানে)৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ড
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আয়ারল্যান্ডে ২০১৫ সালের মে মাসে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Crawley
ইউরোপের অন্যান্য দেশ
২০০৩ সালে বেলজিয়াম, ২০০৫ সালে স্পেন, ২০০৯ সালে নরওয়ে, একই বছর সুইডেন, ২০১০ সালে পর্তুগাল, একই সময়ে আইসল্যান্ড, ২০১২ সালে ডেনমার্ক, ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ড এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গ্রিসে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Blackwood
দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৬ সালে থেকে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ একই সময় থেকেই তাঁরা সন্তানেরও অভিভাবক হওয়ার অনুমতি পায়৷
ছবি: dapd
আর্জেন্টিনা
ল্যাটিন অ্যামেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ২০১০ সালে এরকম বিয়ের বৈধতা দেয় আর্জেন্টিনা৷ এরপর ঐ মহাদেশের ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও কলম্বিয়ায় সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রাজিল
ল্যাটিন অ্যামেরিকার তৃতীয় দেশ হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ব্রাজিলে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ ছবিটি ঐ বছরের ৮ ডিসেম্বর তোলা৷ সেদিন প্রায় ১৩০ সমকামী জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ এক অনুষ্ঠানে এতজন সমকামীর বিয়ে করার ওটিই ছিল তখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্র
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করে৷ উত্তর অ্যামেরিকার ক্যানাডা ও মেক্সিকোর পাঁচটি রাজ্যেও এখন এই বিয়ে বৈধ৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নিউজিল্যান্ড
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের একমাত্র দেশ যেখানে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ছবিতে নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন থেকে অকল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইটে এমন একটি বিয়ে পড়ানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷