ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশেকুর রহমানের সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এ যোগদানের খবর নিয়ে বাংলাদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Medyan Dairieh
বিজ্ঞাপন
তবে আশেকুর আদৌ আইএস-এ যোগ দিয়েছেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ যদি বিষয়টি নিশ্চিত হয় তাহলে তিনিই হবেন প্রথম বাংলাদেশি যিনি বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সরাসরি আইএস-এ যোগ দিলেন৷
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা বলে তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে যান আশেকুর রহমান৷ ২৭শে ফেব্রুয়ারি তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা ছিল৷ কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে ইস্তানবুল থেকে নিরুদ্দেশ হন৷
বলা হচ্ছে, তিনি সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ যোগ দেয়ার জন্যই টার্কিশ এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে তুরস্কে গিয়ে নিরুদ্দেশ হন৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ১১ই মার্চ চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো জানান হয়েছে৷ আর তার খোঁজ পেতে তুরস্ক সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে৷
এদিকে আশেকুর তুরস্কে যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদনের সঙ্গে যে কথিত সম্মেলনের কাগজপত্র দিয়েছে, তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ আর আশেকুর যে তুরস্ক গেছেন, তা পরিবারের সদস্যরা জানতেন না৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে আশেকুরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে তুরস্কের পার্শ্ববর্তী সিরিয়ায় জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগদানের জন্য ইস্তানবুল গিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরুদ্দেশ হয়েছে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
তবে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাংলাদেশি দূতাবাস এখনো আশেকুরের আইএস-এ যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি৷ তুরস্কও তার অবন্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এখনো কিছু জানায়নি৷ যদিও দূতাবাস একমাস আগে তাঁর খোঁজ চেয়ে চিঠি দিয়েছে৷
এদিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা গত বছর থেকেই এখানে আইএস-এর তত্পরতার কথা জানান৷ গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে আটক করেন গোয়েন্দারা৷ তখন তাদের সঙ্গে আইএস-এর যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়৷
এরপর মো. আসিফ আদনান ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারাও ‘জিহাদে' অংশ নিতে তুরস্ক ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে তখন জানান গোয়েন্দারা৷
আর সামিউন ওরফে ইবনে হামদান নামের আরো এক তরুণকে আটকের পর বাংলাদেশে আইএস-এর তত্পরতার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়৷ আটকের পর তার মোবাইল ফোন এবং কাগজপত্র থেকে আইএস-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক ইরাক ও সিরিয়া-ভিত্তিক আইএস-এর সঙ্গে জড়িত বলে বলে তখন পুলিশ দাবি করে৷ সেখানে অবস্থানের প্রমাণও পাওয়া যায় তার পাসপোর্ট থেকে৷ আর তখন গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘আইএস-এর টার্গেটে পড়েছে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশের জঙ্গিরা এখন আইএস-এর জঙ্গি তত্পরতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দিকে ঝুঁকছে৷''
তবে বাংলাদেশি যুবক আশেকুর রহমানের আইএস-এ যোগদানের খবর নিয়ে তাঁর মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া তাঁকে যায়নি৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আমরা কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করেছি আইএস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে৷ আর তাদের কাছ থেকে জানা গেছে আইএস বাংলাদেশে তত্পর৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে৷ আশেকুর রহমানের আইএস-এ যোগদানের খবর আমরা তদন্ত করে দেখছি৷ তবে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নয়৷''