অসাধারণ কোনো অর্জনের পরও আমরা এরপর তার চেয়ে বড় কিছু প্রত্যাশা করি৷ এটাই মানবচরিত, এই ‘আরো অর্জনের’ নেশাই মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷ কিন্তু এই ‘আরো বড় অর্জন’ না পাওয়াটা আগের অর্জনকে ম্লান করে না৷ বরং অন্যদের সাহস জোগায়৷
বিজ্ঞাপন
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের পরিচালক বারবারই বলছিলেন, তার চলচ্চিত্র কানে প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অফিশিয়াল সিলেকশনে এসেছে, তাতেই তিনি খুশী৷ তবে একইসঙ্গে ‘কিছু একটা পেলে ভালো লাগবে’ এটাও জানিয়ে রেখেছিলেন৷
সবারই তাই শুক্রবার ফ্রান্সের কানে পালে দে ফেস্টিভালের দেবুসি থিয়েটারে চোখ ছিল৷ শেষ পর্যন্ত হলো না৷ ‘আঁ সার্তে রিগা’ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় সবকটি সিনেমার গল্পই বেশ শক্তিশালী ছিল৷ ফলে জুরি বোর্ডের যে ২০টি থেকে ছয়টিকে বেছে নিতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে, তা স্পষ্ট৷
কানে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা
এক নজরে দেখে নেয়া যাক আঁ সার্তে রিগা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর প্রতিদ্বন্দ্বী কারা!
ছবি: Zbaer Ahmed/DW
কী এই আঁ সার্তে রিগা?
আঁ সার্তে রিগা এর অর্থ 'অন্য দৃষ্টি থেকে'। নামের সঙ্গে মিল রেখেই অন্যভাবে যারা সিনেমা তৈরি করে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে চান, তাদের জন্যই এই ক্যাটাগরি। উৎসবের মূল পুরস্কার পাম দি'ওর এর জন্য কম্পিটিশন বিভাগে আসে বিশ্বনন্দিত পরিচালকদের ছবি। কিন্তু এর বাইরের ছবিগুলোর প্রতিযোগিতার জন্য এই ক্যাটাগরি চালু হয় ১৯৭৮ সালে। ২০টি চলচ্চিত্র স্থান পায় এখানে, পুরস্কার প্রায় ৩০ হাজার ইউরো বা প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
ছবি: Brynn Anderson/AP/picture alliance
বাংলাদেশের 'রেহানা মরিয়ম নূর'
মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূর। কলেজের এক অধ্যাপকের কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসতে দেখেন রেহানা। পরে তার ছয় বছরের মেয়ের অদ্ভুত আচরণ বিষয়ে স্কুল থেকেও অভিযোগ আসে। রেহানা সমাজের উন্মত্ততার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেন। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, প্রযোজনা করেছেন জেরেমি চুয়া। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরি হক বাঁধন।
ছবি: Potocol and Metro Video
যুক্তরাষ্ট্রের 'আফটার ইয়েং'
ছোট্ট মেয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু- অ্যান্ড্রয়েড রোবট ইয়েং একদিন যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়। বাবা জেইক তখন সেটিকে সারানোর উপায় খুঁজে বের করেন। এই প্রক্রিয়ার মধ দিয়ে যেতে গিয়ে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান তিনি। পরিচালক কোগোনাডার পরিচালনায় জেইকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলিন ফ্যারেল।
ছবি: A24 Films
তুরস্কের 'আগলিলিক হাসান'
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে চাষ করে জীবন ভালোই কাটছিল হাসানের। কিন্তু একদিন তার জমির মাঝখানেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। হাসান এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মক্কায় তীর্থযাত্রা সবকিছুকে নতুনভাবে তার সামনে উপস্থাপন করে। সেমিহ কাপলানোলুর পরিচালনায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উমুত কারাদাগ।
ছবি: Kaplan Film & Sinehane
যুক্তরাষ্ট্রের 'ব্লু বাইউ'
প্রেমিকা ও স্ত্রী ক্যাথি এবং সৎ মেয়ে জেসিকে নিয়ে সুখেই জীবনযাপন করছিলেন কোরিয়া থেকে দত্তক সন্তান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা আন্তোনিও লাব্লাংক। হঠাৎ একদিন লাব্লাংকের জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন, তাকে যেকোনো সময় কোরিয়া ফেরত পাঠানো হতে পারে। পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক-পরিচালক জাস্টিন চোন নিজেই অভিনয় করেছেন আন্তোনিও লাব্লাংক- এর ভূমিকায়।
ছবি: Entertainment One - MACRO/imago images
ফ্রান্সের 'বন মেরে' বা 'ভালো মা'
পঞ্চাশোর্ধ্ব পরিষ্কারকর্মী নোরা ছেলে এলিসকে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন। এলিস ডাকাতির দায়ে কয়েক মাস ধরে কারাগারে। এই অপেক্ষার সময়টা যতটা সম্ভব নিজের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করেন নোরা। হাফসিয়া হেরজির পরিচালনায় নোরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হালিমা বেনহামেদ।
ছবি: Guy Ferrandis/SBS Productions/Design: Benjamin Seznec TROIKA
রাশিয়ার 'ডেলো' বা 'গৃহবন্দী'
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ডেভিড সোশাল মিডিয়ায় শহর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা শুরু করেন। কিন্তু মেয়রের বিরুদ্ধের তদন্তের বদলে ডেভিডের বিরুদ্ধেই অর্থ কারচুপির অভিযোগ এনে তাকে গৃহবন্দী করা হয়। সব চাপ সত্ত্বেও ডেভিড তার বক্তব্যে অনড় থাকেন। আদালতের বিচারের তারিখ যত এগিয়ে আসতে থাকে, এই লড়াইয়ে কার জয় হবে, এ নিয়ে চিন্তাও বাড়তে থাকে। আলেকসেই জের্মান জুনিয়রের পরিচালনায় ডেভিডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মেরাব নিনিদজে।
ছবি: Daria Shumakova
অস্ট্রিয়া-জার্মানির 'ডি গ্রোসে ফ্রাইহাইট'
সিনেমাটির নামের অর্থ 'মহান স্বাধীনতা'। যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিতে সমকামী হওয়ার কারণে হান্সকে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৭৫ অনুচ্ছেদের কারণে তার স্বাধীনতা একেবারেই ক্ষুণ্ণ। তার জীবনে একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক হয় কারাগারে তার কক্ষে থাকা খুনি ভিক্টরের সঙ্গে। সেবাস্টিয়ান মাইজের পরিচালনায় হান্সের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফ্রানৎস রোগোভস্কি।
ছবি: reibeuterfilm_Rohfilm
হাইতি, ফ্রান্স, বেনিনের 'ফ্রেদা'
পোর্ত-অউ-প্রিন্সের দরিদ্র এলাকায় ফ্রেদার পরিবারের বাস। রাস্তার পাশের ছোট দোকান তাদের খাওয়াপড়ার জোগান দিলেও হাইতির চলমান সহিংসতা তাদের ধীরে ধীরে শঙ্কিত করে তুলছে। তবে ফ্রেদা তার দেশের ভবিষ্যতের ওপর ভরসা করতে চান। জেসিকা জেনেউস এর পরিচালনায় নেয়েমিয়া বাস্টিয়েন অভিনয় করেছেন ফ্রেদা চরিত্রে।
ছবি: SaNoSi Productions
চীনের 'গায়ে ওয়া'র'
এই শব্দের অর্থ 'রাস্তার জ্ঞানী'। ডংজি তার বাবার চিকিৎসার জন্য অন্যদের দেয়া ধারের টাকা ফেরত নেয়ার ওপর নির্ভর করে। অস্থির মানসিক অবস্থাতেও জিউওর নামের এক মেয়ে তার মনে স্বস্তি এনে দিতে পারে। কিন্তু ঘটনাক্রমে একইদিনে ডংজি তার বাবা এবং জিউওরকে হারায়। জিয়াঝৌ না এর পরিচালনায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিউচিয়াও লি।
ছবি: The Seventh Art Pictures
বেলজিয়াম, রোমানিয়া, মেক্সিকোর 'লা সিভিল'
সিয়েলোর মেয়েকে মাদকচক্রের লোকজন অপহরণ করেছে। কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হওয়ার পর সিয়েলো নিজের কাঁধেই মেয়ে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নেন। তদন্তে নেমে ভিন্ন ধারায় কাজ করা এক আর্মি মেজরের সঙ্গে পরিচয় হয় সিয়েলোর। এরপর এগিয়ে চলে ঘটনা। একের পর এক সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিয়েলো। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তিওডোরা আনা মিহাই। সিয়েলোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আর্সেলিয়া রামিরেজ।
ছবি: Menuetto - Agustin Paredes
আইসল্যান্ডের 'ল্যাম্ব'
আইসল্যান্ডের এক প্রেমিক জুটি মারিয়া এবং ইংভার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভেড়ার খামারে থাকেন। একদিন খামারে এক নবজাতককে কুড়িয়ে পান তারা। নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করে শুরুতে অসীম আনন্দ পেলেও পরবর্তীতে তা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধ্বংসের কারণ। ভালদিমির জোহানসনের পরিচালনায় মারিয়া চরিত্রে নুমি রাপাসে এবং ইংভার চরিত্রে হিলমির স্নায়ের গুডনাসন অভিনয় করেছেন।
ছবি: Go to Sheep, Black Spark Film & TV, Madants, Film i Vast, Chimney, Rabbit Hole, Helgi Jóhannsson
ফ্রান্সের 'মঁ ফ্রেঁ এ মোয়াঁ'
সিনেমার নামের অর্থ- আমার ভাই এবং আমি। চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ১৪ বছরের নোয়া। তাদের মা দীর্ঘদিন ধরে কোমায় আছেন। ভাইদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে মায়ের যত্ন নেয় নোয়া। মায়ের পছন্দের অপেরা শোনাতে গিয়ে নোয়া নিজেই পড়ে যায় অপেরার প্রেমে। একসময় তার সামনেও সুযোগ আসে খোলস ভেঙে বের হয়ে আসার। ইয়োহান মাংকার পরিচালনায় নোয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মায়েঁল রোয়িঁ-বেরান্দোঁ।
ছবি: David Koskas - Single Man Productions
তাইওয়ানের 'মানিবয়েজ'
তাইওয়ানের পাশাপাশি সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের প্রযোজকেরা। ফেই নামের এক সমকামী ছোটখাট অবৈধ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার পরিবার তার উপার্জনের টাকা নিলেও তার সমকামী হওয়াটাকে মেনে নিতে রাজি না, তখন তার সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। সি. বি. ইয়ি এর পরিচালনায় ফেই এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কাই কো।
ছবি: MONEYBOYS
মেক্সিকোর 'নচে দে ফুয়েগো'
সিনেমার নামের অর্থ- চুরি যাওয়াদের জন্য প্রার্থনা। সিনেমটিতে তুলে ধরা হয়েছে মেক্সিকোর পাহাড়ি শহরের তিন শিশুর কথা। পরিত্যক্ত বিভিন্ন বাড়িতে নিজেদের পালিয়ে থাকার জায়গা গড়ে তোলে তারা। কিন্তু একসময় তাদেরও শিকার হতে হয় নানা সহিংসতার। মেক্সিকোর পাশাপাশি জার্মানি, ব্রাজিল ও কাতারের সহপ্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তাতিয়ানা হুয়েৎসো।
ছবি: NOCHE DE FUEGO
জাপানের 'অনোডা'
১৯৪৪ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হারার পথে। রহস্যে ঘেরা মেজর তানিগুচির আদেশে তরুণ হিরু অনোডা অ্যামেরিকান সৈন্যদের আসার ঠিক আগে আগে ফিলিপিন্সের একটি দ্বীপে যান। সেখানে তারা জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। জাপানের জন্য যুদ্ধ শেষের দিকে হলেও অনোডার যুদ্ধ শেষ হয় ১০ হাজার রাত পর। আর্থার হারারির পরিচালনায় তরুণ আনোডার চরিত্রে ইউইয়া এন্দো এবং বৃদ্ধ আনোডার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাঞ্জি ৎসুদা।
ছবি: athysphere
রাশিয়ার 'রাজহিমায়া কুলাকি'
এই সিনেমার নামের অর্থ- মুঠি শিথিল করা। উত্তর ওসেটিয়ার খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক গ্রামে আদা নামে এক তরুণী বাস করেন। পরিবারকে ভালোবাসলেও তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই পালাতে হবে শিগগির। এ নিয়েই সিনেমার গল্প। কিরা কোভালেংকোর পরিচালনায় আদার ভূমিকায় করেছেন মিলানা আগুজারোভা।
ছবি: RAZZHIMAYA KULAKI
নরওয়ের 'দ্য ইনোসেন্টস'
নরওয়ের পাশাপাশি সুইডেন, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্যের প্রযোজকেরাও এই সিনেমার সহপ্রযোজনায় অংশ নিয়েছেন। নর্ডিক এলাকায় এক গ্রীষ্মকালে হঠাৎই এক দল শিশু বুঝতে পারে যে তাদের কিছু রহস্যময় ক্ষমতা রয়েছে। শুরুতে মজার খেলা হলেও একসময় অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটতে থাকে। সিনেমটাই পরিচালনা করেছেন এসকিল ফোগট।
ছবি: Mer Films
বেলজিয়ামের 'উন মন্দে'
সিনেমার নামের অর্থ- খেলার মাঠ। স্কুলে প্রায়ই আবেলকে অন্যান্য বাচ্চারা হেনস্তা করে। আবেলের সাত বছর বয়সি ছোট বোন নোরা তা সহ্য করতে না পেরে বাবকে জানাতে যায়। কিন্তু আবেল তাতে বাধা দেয়। নোরা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনকে বোঝার ফারাক নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে। লরা ওয়ানডেলের পরিচালনায় নোরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মায়া ভানডেরবেকুয়ে।
ছবি: Dragons Films
ইসরায়েলের 'ভায়েহি বোকার'
ফ্রান্সের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত সিনেমাটির নামের অর্থ- সকাল হতে দাও। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জেরুসালেমে বাস করেন সামি। ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে তিনি তার আরব অধ্যুষিত গ্রামে যেতে বাধ্য হন। বিয়ের পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ইসরায়েলি বাহিনি সে গ্রাম অবরুদ্ধ করে। সামির জীবন পালতে যেতে শুরু করে। এরান কলিরিনের পরিচালনায় সামির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আলেক্স বাকরি।
ছবি: DORI MEDIA/LES FILMS DU POISSON
বুলগেরিয়ার 'উইমেন ডু ক্রাই'
ফ্রান্সের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত সিনেমাটি সত্য ঘটোনা অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটিতে একটি বুলগেরিয়ান পরিবারের নারীদের মুখোমুখি হওয়া নানা সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নারীর সমতার বিরোধীদের সহিংসতার চিত্রও দেখানো হয়েছে পরিচালক মিনা মিলেভা নির্মিত সিনেমাটিতে।
ছবি: WOMEN DO CRY
21 ছবি1 | 21
জুরি বোর্ডের প্রধান আন্দ্রেয়া আর্নল্ড পুরস্কার বিতরণ শেষে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের আলোচনায় আমরা দুটো জিনিস বারবার বলছিলাম: ‘এই সিনেমটি খুব সাহসী' এবং ‘এই সিনেমাটি হৃদয় দিয়ে তৈরি করা’৷ অনেক সিনেমা খুব যত্ন দিয়ে তৈরি করা, আবার অনেক সিনেমা এমন সব বিষয়ে কথা বলেছে যা নিয়ে কথা বলাটা কঠিন৷ আমরা সব নির্মাতাকে সাহসী ও সুন্দর কাজের জন্য অভিনন্দন জানাই৷ তাদের সিনেমাগুলো ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷’’
সিনেমার নির্মাণশৈলী, অভিনয়, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন ইত্যাদি নিয়ে আর কথা বলার কিছু নেই৷ তাৎক্ষণিক রিভিউয়ে তার অনেকটা বলার চেষ্টা করেছি, বাকিটা আসলে প্রতিটি দর্শকের নিজের ওপরই দায়িত্ব হিসাবে বর্তায়৷
আজ বলতে চাই, বাংলাদেশের সিনেমার অর্জনে এই সিনেমার ভূমিকা নিয়ে৷
পুরস্কার না পেলেও কেবল অফিশিয়াল সিলেকশনে এসেই আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি স্টেপিং স্টোন স্থাপন করে গেলেন৷ কিভাবে? বলছি৷
বিশ্বে বাংলা সিনেমার অবস্থান অনেক আগে থেকেই শক্ত ছিল৷ ঢাকার ছেলে বিমল রায় ১৯৫৪ সালে ‘দো বিঘা জমিন’ নিয়ে প্রথম কানে গেলেও সেটি ছিল মূলত হিন্দি ভাষায় নির্মিত ছবি৷ এরপর আরো দুটি হিন্দি ছবি ‘সুজাতা’ ও ‘বিরাজ বহু’ নিয়েও কানে যান বিমল রায়৷
১৯৫৬ সালে থেকে সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালি’ প্রথম বাংলা ভাষায় নির্মীত ছবি হিসেবে কানে গিয়ে ‘Best human documentary’ বা ‘সেরা মানবদলিল’ স্বীকৃতি পায়৷ তারপর মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষরাও কান দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বাংলা সিনেমা নিয়ে৷
ফলে বিশ্বের বড় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ‘বাংলা’ নামটা পরিচতই ছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই টালিউড এবং ঢালিউড আলাদা যাত্রা শুরু করে৷ এ যাত্রায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুরু থেকেই দুই বাংলায় সাড়া জাগালেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরব উপস্থিতির জানান দিতে পারেনি৷
আমাদের এটাও ভুলে গেলে চলবে না, ‘সারেং বউ'’ ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ইত্যাদির পর ‘কাটপিস’ আর ‘এক টিকিটে দুই ছবি’র দৌরাত্ম্যও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়৷ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের পর বাংলাদেশি সিনেমা সেই চক্কর থেকে বের হলেও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা সবসময়ই ভুগে আসছেন৷ প্রোডাকশন থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউশন, পাবলিসিটি- সব জায়গাতেই পদে পদে লড়াই তাদের৷
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে সাদের এমন উত্থান নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া৷
জোরেশোরে ‘বাংলাদেশ’ নামটা ২০০২ সালে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিলেন তারেক মাসুদ৷ কানের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে তার ‘মাটির ময়না’ কেবল আমন্ত্রণই পায়নি, জিতেছিল সম্মানজনক ফিপ্রেসকি পুরস্কারও৷ তারপর আবার প্রায় দুই দশকের অপেক্ষা৷ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ প্রথমবারের মতো কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে নিয়ে এলেন বাংলাদেশের সিনেমা৷
এই অর্জন যেমন ঈর্ষা জাগানোর মতো, আবার অনেকের জন্য উৎসাহব্যঞ্জকও৷ গুপী-বাঘা প্রোডাকশন্সের নির্মাতা-প্রযোজক আরিফুর রহমান বলছিলেন, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর অফিশিয়াল সিলেকশনে আসাটাই তরুণ নির্মাতাদের জন্য একটা ‘কিক’ হিসাবে কাজ করছে৷ তারা অনেকে এখন নতুন কাজে উদ্যম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন আরো বড় অর্জনের তাগিদে৷ আর এটাই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের টিমের সাফল্য৷
করোনা মহামারি যদি আবার সব ভণ্ডুল না করে দেয়, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ৭২তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব৷ হয়তো এবার বার্লিনালেতেই প্রতিযোগিতা বিভাগে অন্য কোনো নির্মাতা হাজির হবেন আনকোরা আইডিয়ার সিনেমা নিয়ে৷ হয়তো হবে আরো বড় কোনো অর্জন৷