1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশি সিনেমার আরেকটি স্টেপিং স্টোন হোক- রেহানা মরিয়ম নূর

১৭ জুলাই ২০২১

অসাধারণ কোনো অর্জনের পরও আমরা এরপর তার চেয়ে বড় কিছু প্রত্যাশা করি৷ এটাই মানবচরিত, এই ‘আরো অর্জনের’ নেশাই মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷ কিন্তু এই ‘আরো বড় অর্জন’ না পাওয়াটা আগের অর্জনকে ম্লান করে না৷ বরং অন্যদের সাহস জোগায়৷

Cannes | Filmfestspiele | Film Rehana Maryam Noor
ছবি: Zbaer Ahmed/DW

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের পরিচালক বারবারই বলছিলেন, তার চলচ্চিত্র কানে প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অফিশিয়াল সিলেকশনে এসেছে, তাতেই তিনি খুশী৷ তবে একইসঙ্গে ‘কিছু একটা পেলে ভালো লাগবে’ এটাও জানিয়ে রেখেছিলেন৷

সবারই তাই শুক্রবার ফ্রান্সের কানে পালে দে ফেস্টিভালের দেবুসি থিয়েটারে চোখ ছিল৷ শেষ পর্যন্ত হলো না৷ ‘আঁ সার্তে রিগা’ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় সবকটি সিনেমার গল্পই বেশ শক্তিশালী ছিল৷ ফলে জুরি বোর্ডের যে ২০টি থেকে ছয়টিকে বেছে নিতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে, তা স্পষ্ট৷

জুরি বোর্ডের প্রধান আন্দ্রেয়া আর্নল্ড পুরস্কার বিতরণ শেষে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের আলোচনায় আমরা দুটো জিনিস বারবার বলছিলাম: ‘এই সিনেমটি খুব সাহসী' এবং ‘এই সিনেমাটি হৃদয় দিয়ে তৈরি করা’৷ অনেক সিনেমা খুব যত্ন দিয়ে তৈরি করা, আবার অনেক সিনেমা এমন সব বিষয়ে কথা বলেছে যা নিয়ে কথা বলাটা কঠিন৷ আমরা সব নির্মাতাকে সাহসী ও সুন্দর কাজের জন্য অভিনন্দন জানাই৷ তাদের সিনেমাগুলো ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷’’

সিনেমার নির্মাণশৈলী, অভিনয়, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন ইত্যাদি নিয়ে আর কথা বলার কিছু নেই৷ তাৎক্ষণিক রিভিউয়ে তার অনেকটা বলার চেষ্টা করেছি, বাকিটা আসলে প্রতিটি দর্শকের নিজের ওপরই দায়িত্ব হিসাবে বর্তায়৷

আজ বলতে চাই, বাংলাদেশের সিনেমার অর্জনে এই সিনেমার ভূমিকা নিয়ে৷

পুরস্কার না পেলেও কেবল অফিশিয়াল সিলেকশনে এসেই আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি স্টেপিং স্টোন স্থাপন করে গেলেন৷ কিভাবে? বলছি৷

বিশ্বে বাংলা সিনেমার অবস্থান অনেক আগে থেকেই শক্ত ছিল৷ ঢাকার ছেলে বিমল রায় ১৯৫৪ সালে ‘দো বিঘা জমিন’ নিয়ে প্রথম কানে গেলেও সেটি ছিল মূলত হিন্দি ভাষায় নির্মিত ছবি৷ এরপর আরো দুটি হিন্দি ছবি ‘সুজাতা’ ও ‘বিরাজ বহু’ নিয়েও কানে যান বিমল রায়৷

১৯৫৬ সালে থেকে সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালি’ প্রথম বাংলা ভাষায় নির্মীত ছবি হিসেবে কানে গিয়ে ‘Best human documentary’ বা ‘সেরা মানবদলিল’ স্বীকৃতি পায়৷ তারপর মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষরাও কান দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বাংলা সিনেমা নিয়ে৷

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

ফলে বিশ্বের বড় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ‘বাংলা’ নামটা পরিচতই ছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই টালিউড এবং ঢালিউড আলাদা যাত্রা শুরু করে৷ এ যাত্রায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুরু থেকেই দুই বাংলায় সাড়া জাগালেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরব উপস্থিতির জানান দিতে পারেনি৷

আমাদের এটাও ভুলে গেলে চলবে না, ‘সারেং বউ'’ ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ইত্যাদির পর ‘কাটপিস’ আর ‘এক টিকিটে দুই ছবি’র দৌরাত্ম্যও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়৷ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের পর বাংলাদেশি সিনেমা সেই চক্কর থেকে বের হলেও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা সবসময়ই ভুগে আসছেন৷ প্রোডাকশন থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউশন, পাবলিসিটি- সব জায়গাতেই পদে পদে লড়াই তাদের৷

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে সাদের এমন উত্থান নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া৷ 

জোরেশোরে ‘বাংলাদেশ’ নামটা ২০০২ সালে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিলেন তারেক মাসুদ৷ কানের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে তার ‘মাটির ময়না’ কেবল আমন্ত্রণই পায়নি, জিতেছিল সম্মানজনক ফিপ্রেসকি পুরস্কারও৷ তারপর আবার প্রায় দুই দশকের অপেক্ষা৷ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ প্রথমবারের মতো কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে নিয়ে এলেন বাংলাদেশের সিনেমা৷

এই অর্জন যেমন ঈর্ষা জাগানোর মতো, আবার অনেকের জন্য উৎসাহব্যঞ্জকও৷ গুপী-বাঘা প্রোডাকশন্সের নির্মাতা-প্রযোজক আরিফুর রহমান বলছিলেন, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর অফিশিয়াল সিলেকশনে আসাটাই তরুণ নির্মাতাদের জন্য একটা ‘কিক’ হিসাবে কাজ করছে৷ তারা অনেকে এখন নতুন কাজে উদ্যম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন আরো বড় অর্জনের তাগিদে৷ আর এটাই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের টিমের সাফল্য৷

করোনা মহামারি যদি আবার সব ভণ্ডুল না করে দেয়, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ৭২তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব৷ হয়তো এবার বার্লিনালেতেই প্রতিযোগিতা বিভাগে অন্য কোনো নির্মাতা হাজির হবেন আনকোরা আইডিয়ার সিনেমা নিয়ে৷ হয়তো হবে আরো বড় কোনো অর্জন৷

আবারও ২০ বছরের অপেক্ষা চাই না৷ 

মুখোমুখি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্মাতা

14:44

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ