বাংলাদেশে চলছে অস্থিরতা, সহিংসতা৷ কে পারেন এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে? কয়েক দিন ধরে অনেকেই আফসোস করে বলছেন, ‘আমাদেরও যদি একজন কেজরিওয়াল থাকতো!' সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও চলছে এ নিয়ে লেখালেখি৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের রাজনীতিতে অনেকটা ধূমকেতুর মতোই আগমন ঘটেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার আন্দোলনে শরিক হওয়ার পরই ভারতবাসী প্রথম তাঁর নাম শুনেছিল৷ দু বছর না যেতেই সেই মানুষ প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷ সাধারণ মানুষদের জন্য ‘আম আদমি পার্টি' নামে একটা দল গড়ে নেমে পড়েছিলেন দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেস আর প্রধান বিরোধী দল বিজেপি থাকতে আম আদমি পার্টি ভোটে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে, এমন আশা খুব কম লোকই করেছিলেন৷ অথচ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন থেকে এলো অভাবনীয় ফলাফল৷ নির্বাচনে তাঁর দল এতটা জনসমর্থন পেয়েছে যে ক'দিন আগেও যিনি ছিলেন অখ্যাত, অতি সাধারণ, সেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
বাংলাদেশে কি এমন কারো পক্ষে উঠে আসা সম্ভব? ঠিক এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই সামহয়্যার ইন ব্লগে একটি লেখা লিখেছেন আজমান আন্দালিব৷ লেখার শিরোনাম, ‘বাংলাদেশে একজন কেজরিওয়ালের আগমন সম্ভাবনা'৷
আজমান আন্দালিবও মনে করেন, দেশকে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক হানাহানি থেকে মুক্ত করার জন্য একজন কেজরিওয়াল দরকার৷ কিন্তু বাংলাদেশে কেউ চাইলেই কি পারবেন হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসে এমন আলোড়ন তুলতে? ব্লগার আন্দালিব লিখেছেন ছয়টি কারণে সেটা সম্ভব নয়৷
তাই লেখা পড়ে সবার হতাশই হওয়ার কথা৷ কিন্তু সুদিনের আশা কি কখনো ছেড়ে দিতে হয়? ছেড়ে দেয়া যায়? আজমান আন্দালিবও আশা ছাড়েননি৷ শেষে সবাইকেই কেজরিওয়াল বা আন্না হাজারের মতো এগিয়ে আসার কাজে উৎসাহিত করতে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ একটা ধারা সৃষ্টি করা দরকার৷ একজন আন্না হাজারে এবং কয়েকজন কেজরিওয়াল বাংলাদেশের জন্য খুবই দরকার৷ ''