1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের অমুসলিমরা ভারতের নাগরিক হচ্ছেন

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১ নভেম্বর ২০১৮

সংসদে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব (‌সংশোধনী)‌ আইন পাসের সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ এ অবস্থায় ৭টি রাজ্যের মোট ১৬টি জেলাকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার৷

ছবি: Imago/Zuma Press/P. K. Verma

ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ এই লক্ষ্যে ছয় দশকের পুরোনো নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করতে ইতিমধ্যে সংসদে আনা হয়েছে ‘‌নাগরিকত্ব (‌সংশোধনী)‌ বিল ২০১৬’৷ কিন্তু সেই বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে৷ বর্তমান সরকারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই এই নাগরিকত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে মরিয়া মোদী সরকার৷ এজন্য সংসদের আসন্ন শীত অধিবেশনেই অধ্যাদেশ আনতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তবে নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে, তাই আপাতত দেশের ৭টি রাজ্যের ১৬টি জেলার কালেক্টরদের অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ ফলে এখন দেশজুড়ে চলছে বিতর্ক৷

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুযায়ী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, খ্রীষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ ও পারসি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে৷ ১৬টি জেলার মধ্যে রয়েছে ছত্তিশগড়ের রায়পুর, গুজরাটের আমেদাবাদ, গান্ধীনগর ও কচ্ছ, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও ইন্দোর, মহারাষ্ট্রের নাগপুর, পুনে, মুম্বাই ও থানে, রাজস্থানের যোধপুর, জয়সালমের ও জয়পুর, উত্তরপ্রদেশের লখনউ এবং দক্ষিণ দিল্লির জেলাশাসককে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ২০১১ পর্যন্ত মোট ১০৮৪টি আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক (‌৫২৬জন)‌ পাকিস্তান থেকে এসেছেন৷ বাকিদের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আসা ১০৩জন, ইরানের ৭২, বাংলাদেশের ৪১, মালয়েশিয়ার ৩০, ২৪ জন ব্রিটিশ, ৭জন তিব্বতি, ১৩ জন শ্রীলঙ্কা এবং ৮ জন চীনা উদ্বাস্তুর আবেদন বিচারাধীন রয়েছে৷

১৯‌৫৫-‌র পুরোনো নাগরিকত্ব আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুরা ১২ বছরের পরিবর্তে মাত্র ছয় ‌বছর এদেশে বসবাস করলেই নাগরিকত্ব পেতে পারেন৷ এমনকি উপযুক্ত নথি না থাকলেও নাগরিকত্ব পেতে পারেন৷ মোদী সরকারের এই বিলের বিরোধিতা করেছে আসাম-‌সহ উত্তর-‌পূর্বের রাজ্যগুলি৷ বিলটি খতিয়ে দেখছে যৌথ সংসদীয় কমিটি৷ কমিটির রিপোর্ট পেশের মেয়াদ সংসদের শীত অধিবেশনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিন৷ গত ২৩ অক্টোবর যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক বসেছিল৷ কিন্তু কোনো সমাধানসূত্র বেরোয়নি৷ কংগ্রেস প্রস্তাব দিয়েছে, উত্তর-‌পূর্বের রাজ্যগুলিকে এই বিলের আওতার বাইরে রাখা হোক৷ তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের এই বিলের আওতার বাইরে রাখা হোক৷ সিপিএম বিলের বিরোধিতা করেছে৷ কমিটির সদস্য হলেও আসামের দুই বিজেপি সাংসদ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকছেন৷

অসমে বাঙালিদের ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয়েছে: অধীররঞ্জন চৌধুরি

This browser does not support the audio element.

কংগ্রেস সাংসদ তথা নাগরিকত্ব( ‌সংশোধনী)‌ বিল ২০১৬ বিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য অধীররঞ্জন চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‌‘ভারতীয় জনতা পার্টির ভারত ‌সরকারের মূল বক্তব্য, প্রতিবেশী ৩টি দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার অমুসলিমদের এদেশে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ কিন্তু বিজেপি-‌শাসিত অসম সরকার বলছে, সে রাজ্যে বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে হবে৷ সেই লক্ষ্যে অসমে বাঙালিদের ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয়েছে৷ গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন৷ কিন্তু ভারতের সংবিধানের ১৪ ধারায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে৷ কোনো ধর্মের প্রতি বৈষম্যের অর্থ সংবিধানের অবমাননা৷’’

এই দেশগুলিতে মুসলিম ছাড়া বাকিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক: রাহুল সিনহা

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে, মুসলিমদের বাদ দিয়ে অমুসলিমদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, তা বোঝানোর চেষ্টা করলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এই ৩টি প্রতিবেশী দেশ ইসলামিক দেশ৷ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ৷ দেশ ভাগের সময় মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশ হিসেবে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল৷ মনে রাখতে হবে, এই দেশগুলিতে মুসলিম ছাড়া বাকিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক৷ সংখ্যালঘু৷ সেইসব ধর্মের মানুষরা নিজেদের জীবন-‌জীবিকা বাঁচাতে ভারতে এসেছে৷ তাই মানবিক কারণে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সেই জন্যই কেউ অনুপ্রবেশকারী, কেউ শরণার্থী৷’’

অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতায় ফুঁসছে বিরোধীরা৷ তাদের অভিযোগ, বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী ও বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ৷ এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি৷ স্বভাবতই সংসদের আগামী শীত অধিবেশনে উত্তাপ ছড়াতে পারে অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ইস্যু৷ সূত্রের খবর, এই ইস্যুতে বিজেপি'‌র অন্দরে বিরোধ দেখা দিয়েছে৷ আসাম‌সহ দলের উত্তর-‌পূর্বের নেতা, সাংসদরা কেউই সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে চিঠি লিখে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন কয়েকজন সাংসদ৷

বিজেপি‌র মূল লক্ষ্য হলো, ধর্মের রাজনীতি: সৌগত রায়

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বিলের বিরোধিতা করেছে সব বিরোধী দল৷ বিজেপি‌র মূল লক্ষ্য হলো, ধর্মের রাজনীতি৷ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হবে এমন কোনো বিল পাস হওয়া সম্ভব নয়৷ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে লোকসভায় বিলটি পাস করা সম্ভব হলেও, রাজ্যসভায় গিয়ে সেটা আটকে যাবে৷ সরকার সেটা বুঝেছে৷ তাই এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷ কিন্তু এই নির্দেশিকা অসাংবিধানিক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যায়৷’’‌

নির্বাচনের আগে ভোট-‌রাজনীতি, সেইসঙ্গে বিদেশনীতি নিয়ে টানাপোড়েনে সরকার৷ বিশেষত বন্ধু প্রতিবেশী ‌রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ৷ বিরোধীরা বিলের খসড়ায় আরো সংশোধনী চায়৷ বিজেপি‌র অন্দরে ভিন্নমত৷ আবার ভোটের তাগিদে তড়িঘড়ি অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে মোটেও দেরি করতে চাইছে না মোদী সরকার৷ সব মিলিয়ে নাগরকিত্ব নিয়ে রাজনীতি সরগরম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ