বাংলাদেশের অস্তিত্ব কি সত্যিই বিপন্ন ?
১৫ আগস্ট ২০০৮পরিবেশ বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাষ অনুযায়ী উষ্ণায়নের ফলে গোটা বিশ্বে সমুদ্রের জলের স্তর বেড়েই চলেছে৷ ফলে মালদ্বীপের মত দেশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে -বাংলাদেশের মত দেশের অনেক অংশ জলের নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের এক গবেষণা কেন্দ্রের দাবি, একদিকে যেমন জলের স্তর বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে তেমন নদীর স্রোতের সঙ্গে আসা পলিমাটির পরিমাণও বেড়ে চলেছে৷ তাহলে কি বাংলাদেশের অস্তিত্ব ততটা বিপন্ন নয়, যেমনটা এতদিন ধরে নেওয়া হত ?
ঢাকার Center for Environment and Geographic Information Services বা CEGIS স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে, যে প্রতি বছর বাংলাদেশে ২০ বড় কিলোমিটার বাড়তি ভূমি যোগ হচ্ছে৷ ৩২ বছর ধরে তোলা ছবির ভিত্তিতেই তাদের এই ধারণা হয়েছে৷ ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মামিনুল হক সরকারের মতে, মূলত পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের মত নদী এই প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী৷ এই দুই নদীর উত্স হিমালয় পর্বত৷ প্রায় ১০০ টন পলিমাটি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সেই পলিমাটি মূলত দেশের দক্ষিণে ছড়িয়ে দেয় এই দুই নদী৷ এই পলিমাটির কারণে বঙ্গোপসাগর উপকূলে নিত্য-নতুন চর জেগে উঠছে৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান IPCC-র পূর্বাভাষ অনুযায়ী আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ জলের নিচে তলিয়ে যাবে৷ উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলের স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা ঘটবে বলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ধারণা৷ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে এবং দেশের খাদ্য উত্পাদন ৩০ শতাংশ কমে যাবে৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা NASA-র মতে, ২০৫০ সালের চিত্র হবে আরও ভয়াবহ৷ তাদের মতে চলতি শতাব্দীর শেষে গোটা বাংলাদেশ জলের নিচে তলিয়ে যাবে৷
বাংলাদেশের CEGIS গবেষণা কেন্দ্র এই দুই সম্ভাব্য চিত্রই ভুল বলে মনে করছে৷ তাদের মতে, জলের স্তর বেড়ে যাওয়া এবং নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশে ভূমিক্ষয় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কোনো পূর্বাভাষ করার সময় নতুন করে চর জেগে ওঠার প্রবণতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ ১৯৭৩ সাল থেকে তোলা স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে প্রায় ১,০০০ বর্গ কিলোমিটার চর সমুদ্রের নিচ থেকে জেগে উঠেছে৷ CEGIS-এর মতে, আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশে আরও প্রায় ১,০০০ বর্গ কিলোমিটার চর উঠে আসবে৷ বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান মাহফুজুর রহমানও এবিষয়ে মোটামুটি একমত৷ শুধু তাই নয়, তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ বন্যার মোকাবিলা করতে বেশ কিছুকাল ধরে যে বাঁধ তৈরী করা হচ্ছে, সেই প্রবণতা চালিয়ে গেলে আরও জমি ভূমিক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব৷ এখন দেখতে হবে, হরেদরে কে জেতে - জলের স্তর বাড়ার ফলে ভূমিক্ষয় না নতুন পলিমাটি জমে তৈরী চর?