নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যার থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সেই সৌম্য সরকার করলেন রেকর্ডময় এক সেঞ্চুরি৷ পেছনে ফেললেন কিংবদন্তি টেন্ডুলকারের রেকর্ডও৷ তবে তারপরও ম্যাচ ও সিরিজে হার এড়াতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল৷
বিজ্ঞাপন
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ নেলসনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সৌম্যের ব্যাট উপহার দিয়েছে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস৷ ওপেন করতে নেমে আউট হয়েছেন একদম শেষ ওভারে৷ তাই দল হারলেও চোখ ধাঁধানো ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সৌম্য৷
দল না জেতায় ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেও হতাশায় পুড়ছেন সৌম্য৷ এই অর্জন উপভোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে৷ বলেছেন, ‘‘সেঞ্চুরি করতে পারায় খুশি, কিন্তু দল না জেতায় হতাশ৷ যদি জিততে পারতাম, তাহলে এটা অনেক বেশি স্পেশাল হতো৷''
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্য সেঞ্চুরির দেখা পেলেন পাঁচ বছর পর৷ ২০১৮ সালে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩০ বছর বয়সি ব্যাটার৷ এর মাঝে ছিলেন দলে আসা-যাওয়ার মাঝে৷ গত চার বছরে খেলেছেন কেবল ৭ ওয়ানডে, তা-ও একটানা না৷ তবে সেসবে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ৷ ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধুঁকছিলেন তিনি৷ তবে সর্বশেষ জাতীয় লিগে রেখেছিলেন ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত, প্রায় পঞ্চাশ গড়ে চারশর বেশি রান করেছিলেন বাঁ হাতি এই ব্যাটার৷
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের কিছু মুহূর্ত
ভারতের বিপক্ষে আটটি টি-টোয়েন্টি হারার পর নবম ম্যাচে এলো বহু প্রতিক্ষীত জয়৷ দেখে নিন সাকিব-তামিমবিহীন ম্যাচে টাইগারদের জয়ের কিছু ছবি৷
ছবি: AFP/J. Samad
দ্রুত উইকেট পতন
ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রোহিত শর্মাকে ফেরায় বাংলাদেশ৷ শফিউল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ৯ রান করেন রোহিত৷ এরপর সপ্তম ওভারে কান্নুর লোকেশ রাহুলকে ফেরান আমিনুল ইসলাম৷ ভারতের দলীয় রান তখন ২ উইকেটে ৩৬৷
ছবি: AFP/J. Samad
আবার উইকেট
একাদশ ওভারে আবার আমিনুলের ধাক্কা৷ ধাওয়ানের সঙ্গে ইনিংস মেরামত করার পথে কিছুটা এগিয়েছিলেন শ্রেয়াস আয়ার৷ দুই ছক্কা এক চারে মাত্র ১৩ বলে ২২ রান করে ফেলেছিলেন শ্রেয়াস৷ তবে আমিনুলের ঘূর্ণিতে কাবু হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাকে৷ দলীয় স্কোর তখন তিন উইকেট হারিয়ে ১০.২ ওভারে ৭০৷
ছবি: AFP/J. Samad
রান আউট ধাওয়ান
তিন উইকেট পরার পরও এক পর্যায়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন শিখর ধাওয়ান৷ ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া ধাওয়ান এক ছক্কা আর তিন চারে করে ফেলেছেন ৪২ বলে ৪১ রান৷ ধীরে ধীরে হাত খুলে মারতেও শুরু করেছেন কিন্তু মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকের দারুণ বোঝাপড়ায় সে ইনিংস আর বড় হয়নি৷ ১৪.৫ ওভারে রানআউট হয়ে ধাওয়ান যখন ফেরেন, রান তখন ৯৫৷
ছবি: AFP/J. Samad
শুরুতেই নেই লিটন
শুরুতে বোলাররা বেঁধে রাখলেও শেষ দুই ওভারে রানের গতি বেশ বাড়িয়ে নেন পান্ডিয়া আর ওয়াশিংটন সুন্দর৷ বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৯৷ ওপেনারদের কাছে বড় স্কোরের প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম ওভারেই দীপক চাহারের বলে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ রান করা লিটন দাস৷
ছবি: AFP/J. Samad
ধাক্কা সামলে সামনে টাইগাররা
টিটোয়েন্টি অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ নাইম অবশ্য লিটনের পতন বেশ সামলেই নিয়েছিলেন৷ অষ্টম ওভারে ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের বলে কট আউট হওয়ার আগে এক ছক্কা দুই চারে ২৮ বলে ২৬ রান করেন নাইম৷ বাংলাদেশের স্কোর ততক্ষণে ৫৪৷
ছবি: AFP/J. Samad
জয়ের পথে জুটি
ভারতীয় বোলারদের ভালোই সামলেছেন সৌম্য আর মুশফিক৷ একদিকে দ্রুত গতির সিঙ্গেলস আর ডাবলসে যেভাবে রানের গতি চালু রেখেছেন দুই ব্যাটসম্যান, মাঝেমধ্যে বাজে বলে চার-ছয় মেরে কমিয়েছেন বল আর রানের পার্থক্যও৷ ১৭তম ওভারের শেষ বলে খলীল আহমেদ বোল্ড করার আগেই ৩৯ রান করেছেন সৌম্য৷
ছবি: AFP/J. Samad
এবার আর ভুল নয়
সৌম্য আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ৷ তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৮ বলে ৩৫ রান৷ অসম্ভব না হলেও একেবারেই সহজ নয় এ টার্গেট৷ কিন্তু সে কাজটিই শেষ পর্যন্ত সহজে করে দেখালেন মুশফিক৷ ১৯তম ওভারে খলিলের শেষ চার বলে চারটি চার মেরে ম্যাচ পুরোপুরি বাংলাদেশের কব্জায় নিয়ে আসেন মুশফিক৷ শেষ ওভারে দরকার ছিল কেবল চার রান৷ ফলে এবার আর ছক্কা মেরে জয় এনে দিতে বেগ পেতে হয়নি মাহমুদুল্লাহকে৷
ছবি: AFP/J. Samad
7 ছবি1 | 7
ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাঠে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এখন বাংলাদেশের সৌম্য সরকারের৷ সৌম্য ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের ১৬৩ রানের রেকর্ড৷ ২০০৯ সালে শচিনের করা ১৬৩ রান এখন নেমে গেছে দুইয়ে৷ সফরকারী ব্যাটারদের বিপক্ষে কিউইদের মাঠে সব মিলিয়ে সৌম্যের এ ইনিংস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ সর্বোচ্চ হ্যামিল্টনে ২০০৭ সালে খেলা ম্যাথু হেইডেনের ১৮১ রান৷
সৌম্যের এমন দিনেও বাকিদের ব্যর্থতায় বিশাল স্কোর পুঁজি পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের৷ প্রথম পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে সৌম্যের ১৬৯ ছাড়া আর কেউ ১২ রানের বেশি করেননি৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়ে নামা মুশফিকুর রহিমের ৪৫৷ এই দুজন ছাড়া ২০ রানের বেশিও করতে পারেননি আর কেউ৷ এনামুল হক বিজয়, শান্ত আর লিটন দাস ফেরেন দুই অঙ্কের আগে৷ তাওহিদ হৃদয় রান আউট হন ১২ রান করে৷
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে সৌম্যর ৯১ রানের জুটিতে দলের ভিত আসে৷ ৫৮ বলে ফিফটি পেরুনোর পর জীবন পেয়েছিলেন, তবে সামলে নিয়ে পরে এক-দুই করে এগিয়েছেন৷ ৯২ রানে গিয়ে আরেকবার বাঁচেন৷ এরপর তোলেন ঝড়৷ মুশফিক কাজ অসমাপ্ত রেখে বিদায় নিলেও বাকিটা সময় দলকে একা টানতে থাকেন তিনি৷ ১১৬ বলে সেঞ্চুরি পেলেও বাকি ৩৫ বলে সৌম্য যোগ করেন আরো ৬৯ রান৷ ২২ চার, ২ ছক্কায় দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি৷
আগামী ২৩ ডিসেম্বর হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ৷