1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বাণিজ্যবাংলাদেশ

বাংলাদেশের এনজিওদের অনুদান প্রাপ্তি ২১ শতাংশ বেড়েছে

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷

হাতে ডলার নিয়ে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷ প্রতীকী ছবিছবি: Morteza Nikoubazl/NurPhoto/picture alliance

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের এনজিওগুলো প্রায় ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পেয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি৷

২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুদানের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৬০১ কোটি টাকা৷

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷

ট্রাম্পের ঘোষণার পর বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টি বন্ধ হয়ে যায়৷ এতে করে দেশ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহায়তা হারায়৷

অনুদান বাড়ার কারণ

এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আসলে আমাদের এনজিওগুলো নতুন ডোনার খুঁজছে এবং তারা সফল হচ্ছে৷ এক দিক বন্ধ হয়ে গেলে অন্য দিক খুঁজে নিতে হয়৷ আরেকটি বিষয় হলো যে প্রকল্পগুলো চার-পাঁচ বছর মেয়াদের তাদের অনুদান হয়তো চলতি বছরে বেশি৷ আসলে আমাদের সঙ্গে এনজিওগুলো এইসব বিষয় শেয়ার করে না৷ আমরা ধারণা করতে পারি৷''

তিনি বলেন, ‘‘গত সরকারের আমলে এনজিওগুলোর ফান্ড নিয়ে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছিলো৷ বিদেশি অনুদান আনায় অনেক জটিলতা তৈরি করা হতো৷ কিন্তু এখন আর সেটা নেই৷ আমাদের কথা হলো, বিদেশি অনুদান তো ডলারে আসে৷ এতে তো আমাদের রিজার্ভ স্ট্রং হয়, উন্নয়ন হয়৷ তাহলে আমরা বাধা দেব কেন৷''

আনোয়ার হোসেন জানান, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রোহিঙ্গা ত্রাণও স্যানিটেশন খাতে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো থেকে অর্থ এসেছে৷

‘‘এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত অর্থ আসছে,'' বলেন জানান তিনি৷

খাতভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে শীর্ষে স্বাস্থ্য খাত আছে বলে জানিয়েছে এনজিও ব্যুরো৷ এরপরে পর্যাক্রমে আছেশিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, ত্রাণও পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পানি ও স্যানিটেশন, নারীর উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ এবং কৃষি খাত৷

বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি অর্থায়নে কাজ করছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ নিবন্ধিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও৷ এর মধ্যে নিয়মিত অর্থায়ন পাওয়া সক্রিয় এনজিওর সংখ্যা প্রায় এক হাজার৷ আন্তর্জাতিক এনজিওর সংখ্যা ২৮৭টি বলে জানিয়েছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো৷

ইউক্রেন যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনে মানবিক সংকটের কারণে দাতা সংস্থাগুলো তাদের অনুদান ওইসব এলাকায় ব্যবহারের নির্দেশ দেয়ার কারণেও বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে বরাদ্দ কমে গিয়েছিল৷

বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা স্থানীয় এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের পাওয়া অনুদান গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে৷ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ‘‘সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ফেনীর বন্যা, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও টেকনাফে জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় বাংলাদেশে সহযোগিতা বেড়েছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ডোনারদের আগ্রহ বাড়ছে৷''

‘‘দাতারা এখন ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন' বা প্রত্যাশামূলক পদক্ষেপের জন্য অর্থ দিচ্ছেন৷ যেমন কোনো এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকলে তার আগেই সাইক্লোন শেল্টার মেরামত বা যাতায়াতের রাস্তা ঠিক করার জন্য তহবিল দেওয়া হচ্ছে,'' বলে জানান তিনি৷

তহবিল বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক দাতাদের স্থানীয় এনজিওগুলোর প্রতি আস্থা বাড়ার কথা বলছেন রেজাউল করিম চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে সরাসরি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওগুলোর কাছে তহবিল পৌঁছে দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷''

ইউএসএআইডির অনুদান কমলেও অনেক দাতা সংস্থা বিশেষ করে মার্কিন ফাউন্ডেশনগুলো সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে বলে জানান রেজাউল করিম চৌধুরী৷ ‘‘এমনকি ফান্ড কাটার পরপরই তারা আমাদের সরাসরি ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়েছিল,'' বলেন তিনি৷

এনজিওদের সংগঠন এডাব এর কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘‘অনেকে ধারণা করছে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করলে ফান্ডের সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু আমরা মনে করছি সেটা হবে না৷ তখন আমাদের নতুন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে৷ তারও প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা৷''

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনুদান অনুমোদন প্রক্রিয়াসহ এনজিও খাতের অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে৷ ‘‘আগের সরকার এনজিওর বিদেশি ফান্ড ছাড়ের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলো, সেগুলো এখন আর নেই৷ আর আমরা নতুন নতুন ডোনার খুঁজছি৷ যে-কোনো পরিবর্তন নতুন সুযোগও তৈরি করে৷ আমরা সেটাও নেয়ার চেষ্টা করছি,'' বলেন জসীম উদ্দিন৷

এদিকে, অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘‘এনজিও খাতে যে অনুদান প্রবাহ বাড়ার কথা বলা হচ্ছে সেটা বুঝতে আরো সময় লাগবে৷ কী কারণে বাড়ছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে এর মাধ্যমে ওই খাতে যে নতুন চাকরির সুযোগ হবে তার জন্য দরকার নতুন প্রকল্প৷ আমাদের কাছে নতুন প্রকল্পের কোনো তথ্য এখনো নেই৷''

চাকরি হারানোদের কী অবস্থা?

ইউএসএআইডির অনুদান কমে যাওয়ায়কয়েক হাজার লোক চাকরি হারান৷ এই সংখ্যা ২০ হাজারের কম হবে না বলে মনে করছে এনজিওদের সংগঠন এডাব (এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ)৷ তবে এসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (এইউডিপি) বলছে এই সংখ্যা ৫০ হাজার৷

এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘‘আমরা তখনই বলেছিলাম ইউএসএআইডির প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ায় যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের যেন এনজিওগুলো চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়৷ এখন যেহেতু নতুন ডোনার আসছে, ফান্ড বাড়ছে তাদের একটি অংশ হয়তোবা চাকরি পেয়েছেন৷ আমাদের কাছে পরিসংখ্যান নেই৷''

এডাব-এর পরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘‘যারা ইউএসএআইডির প্রকল্পে কাজ করতেন তারা দক্ষ৷ তারা সরাসরি নতুন কোনো এনজিওতে যুক্ত না হলেও তাদের একটি অংশ অন্যান্য এনজিওতে পরামর্শক বা বাইরে থেকে সেবা দিচ্ছেন৷''

এদিকে বেকার হয়ে যাওয়া এনজিও কর্মীদের ব্যাপারে এডাবের জসিম উদ্দীন  বলেন, ‘‘ফান্ড বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুদান ব্যবহারের দক্ষতা বেড়েছে৷ আগে ফান্ড ছাড় করতে খরচ করতে হতো৷ এখন আর সেটা করতে হয় না৷ এখন ১০০ টাকার পুরোটাই পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায়৷ নতুন প্রজেক্টও হচ্ছে৷ ফলে নতুন কাজের সুযোগ তো কিছু হচ্ছে৷''

তবে এসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (এইউডিপি)-এর আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এনজিও ব্যুরো এবং বিডার কাছে স্মারক লিপি দিয়েছি৷ কিন্তু আমাদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ বা সাড়া দেখতে পাচ্ছি না৷ সরকারি কাজে, নানা প্রকল্পেও সরকার চাইলে আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে৷'' ‘‘এখন যেটা হয়েছে অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন৷ কেউ হয়তোবা একটা বুটিক শপ দিয়েছেন৷ কেউ গ্রামে চলে গিয়েছেন৷ তাদেরকে তো টিকে থাকতে হবে৷ পরিবার পরিজন নিয়ে তো বাঁচতে হবে৷ আমরা এনজিও ব্যুরোর বাইরে আইএনজিওর সাথেও কথা বলেছি৷ আমি তাদের সাথে বৈঠকও করেছি৷ তবে কেউই আমাদের জন্য তেমন কিছু করছে না,'' বলেন তিনি৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ