মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷ প্রতীকী ছবিছবি: Morteza Nikoubazl/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের এনজিওগুলো প্রায় ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পেয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি৷
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুদানের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৬০১ কোটি টাকা৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বছর জানুয়ারিতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান বেড়েছে৷
ট্রাম্পের ঘোষণার পর বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টি বন্ধ হয়ে যায়৷ এতে করে দেশ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহায়তা হারায়৷
অনুদান বাড়ার কারণ
এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আসলে আমাদের এনজিওগুলো নতুন ডোনার খুঁজছে এবং তারা সফল হচ্ছে৷ এক দিক বন্ধ হয়ে গেলে অন্য দিক খুঁজে নিতে হয়৷ আরেকটি বিষয় হলো যে প্রকল্পগুলো চার-পাঁচ বছর মেয়াদের তাদের অনুদান হয়তো চলতি বছরে বেশি৷ আসলে আমাদের সঙ্গে এনজিওগুলো এইসব বিষয় শেয়ার করে না৷ আমরা ধারণা করতে পারি৷''
তিনি বলেন, ‘‘গত সরকারের আমলে এনজিওগুলোর ফান্ড নিয়ে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছিলো৷ বিদেশি অনুদান আনায় অনেক জটিলতা তৈরি করা হতো৷ কিন্তু এখন আর সেটা নেই৷ আমাদের কথা হলো, বিদেশি অনুদান তো ডলারে আসে৷ এতে তো আমাদের রিজার্ভ স্ট্রং হয়, উন্নয়ন হয়৷ তাহলে আমরা বাধা দেব কেন৷''
আনোয়ার হোসেন জানান, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রোহিঙ্গা ত্রাণও স্যানিটেশন খাতে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো থেকে অর্থ এসেছে৷
‘‘এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত অর্থ আসছে,'' বলেন জানান তিনি৷
খাতভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে শীর্ষে স্বাস্থ্য খাত আছে বলে জানিয়েছে এনজিও ব্যুরো৷ এরপরে পর্যাক্রমে আছেশিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, ত্রাণও পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পানি ও স্যানিটেশন, নারীর উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ এবং কৃষি খাত৷
বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি অর্থায়নে কাজ করছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ নিবন্ধিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও৷ এর মধ্যে নিয়মিত অর্থায়ন পাওয়া সক্রিয় এনজিওর সংখ্যা প্রায় এক হাজার৷ আন্তর্জাতিক এনজিওর সংখ্যা ২৮৭টি বলে জানিয়েছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো৷
ইউক্রেন যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনে মানবিক সংকটের কারণে দাতা সংস্থাগুলো তাদের অনুদান ওইসব এলাকায় ব্যবহারের নির্দেশ দেয়ার কারণেও বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে বরাদ্দ কমে গিয়েছিল৷
ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের আশা-আশঙ্কার কথা
সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করায় বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতে রপ্তানি খাতের আশঙ্কা ও সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা।
ছবি: Mohammed Shajahan/AFP/Getty Images
গার্মেন্টস বাদেও অন্যান্য বিকাশমান শিল্পগুলোকে উঠে দাঁড়াতে হবে: অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, অর্থনীতিবিদ ও উপ-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অতিরিক্ত ট্যারিফ চাপের সৃষ্টি করে। আমাদের অবকাঠামোগত জটিলতা আছে। ব্যবসা করার খরচ বেশি। গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতে সমস্যা হয়। সার্ভিস ডেলিভারি স্মুথ করতে হবে। বিশেষভাবে পোর্টে নজর দেওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য ফি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট এবং বিজনেস কর্পোরেশন ব্লক থেকে আরো সুবিধা নেওয়ার জায়গা আছে। গার্মেন্টস বাদেও অন্যান্য বিকাশমান শিল্পগুলোকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
ছবি: privat
আমাদের নতুন নতুন মার্কেটও দেখতে হবে: ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ
আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১৬.৮০ শতাংশ শুল্ক ছিল। এখন শুল্ক ৩৭ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে। বায়াররা চাপ দিয়ে দাম কমাচ্ছে। শুধু গার্মেন্টস পণ্য না সবকিছুর ওপরে শুল্ক বেড়ে গেছে। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি হবে এবং চাহিদা কমে যাবে।এর ফলে অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের নতুন নতুন মার্কেটও দেখতে হবে। পলিসি সাপোর্ট দরকার, সুদের হার কমানো দরকার।
ছবি: Joy Saha/ZUMA Press Wire/picture alliance
আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে: এম এ রাজ্জাক, গবেষণা পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)
পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক মানে পণ্যের চাহিদা কমতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সবগুলো দেশেই ট্যারিফ বসিয়েছে, সবার পণ্যের চাহিদা কমবে। উচ্চহারে ট্যারিফের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হবে। এটি বাংলাদেশের মতো সাপ্লায়িং দেশের জন্য চিন্তার। যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্য বাজারগুলোতে দামের ওপর চাপ পড়বে। আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷
ছবি: Privat
কমন আইটেম বাদ দিয়ে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের দিকে যেতে হবে: মীর নাসির হোসেন, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ট্যারিফ কিছু কম থাকায় আমি মনে করি আমাদের তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবো। চীন ও ভারতের শুল্ক আমাদের থেকে বেশি। সেই সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আসবে। এ অবস্থায় কমন আইটেম বাদ দিয়ে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের দিকে যেতে হবে। চট্টগ্রাম পোর্টে ফ্যাসিলিটি কস্ট ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ এটা এই সময়ে বোঝার মতো। ঢাকা ও সিলেট এয়ারপোর্টের কস্ট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনতে হবে।
ছবি: Privat
ভারতের থেকে আমাদের শুল্ক কম হওয়া আমাদের জন্য ভালো : কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেজিইএ)
পাটজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। সিনথেটিক বা পলিপ্রোপিলিনের কারণে পাটপণ্যের চাহিদাও কমেছে। এরপরে যদি নতুন শুল্কের মধ্যে পাটপণ্যও থাকে, তাহলে এই খাতের জন্য এটি ভালো সংবাদ না। কারণ, দাম কম হওয়ায় সিনথেটিকের কাছে পাটপণ্য এমনিতেই পিছিয়ে গেছে। তবে ভারতের থেকে আমাদের শুল্ক কম হওয়া আমাদের জন্য ভালো।
ছবি: Privat
শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিতে অবশ্যই পড়বে: মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী
৩৫ শতাংশ শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিতে অবশ্যই পড়বে। বাংলাদেশ থেকে সব থেকে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। যারা এসব রপ্তানি করেন, তাদের অর্ডার কমতে পারে। কারণ, নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। জিনিসের দাম বেড়ে গেলে তো মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশ থেকে যারা পোশাক স্লাপাই দিচ্ছেন, অর্থাৎ, গার্মেন্টে মার্কিন শুল্কের প্রভাব সব থেকে বেশি পড়বে।
ছবি: Shahidul Islam
6 ছবি1 | 6
বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা স্থানীয় এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের পাওয়া অনুদান গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে৷ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ‘‘সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ফেনীর বন্যা, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও টেকনাফে জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় বাংলাদেশে সহযোগিতা বেড়েছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ডোনারদের আগ্রহ বাড়ছে৷''
‘‘দাতারা এখন ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন' বা প্রত্যাশামূলক পদক্ষেপের জন্য অর্থ দিচ্ছেন৷ যেমন কোনো এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকলে তার আগেই সাইক্লোন শেল্টার মেরামত বা যাতায়াতের রাস্তা ঠিক করার জন্য তহবিল দেওয়া হচ্ছে,'' বলে জানান তিনি৷
তহবিল বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক দাতাদের স্থানীয় এনজিওগুলোর প্রতি আস্থা বাড়ার কথা বলছেন রেজাউল করিম চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে সরাসরি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওগুলোর কাছে তহবিল পৌঁছে দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷''
ইউএসএআইডির অনুদান কমলেও অনেক দাতা সংস্থা বিশেষ করে মার্কিন ফাউন্ডেশনগুলো সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে বলে জানান রেজাউল করিম চৌধুরী৷ ‘‘এমনকি ফান্ড কাটার পরপরই তারা আমাদের সরাসরি ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়েছিল,'' বলেন তিনি৷
এনজিওদের সংগঠন এডাব এর কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘‘অনেকে ধারণা করছে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করলে ফান্ডের সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু আমরা মনে করছি সেটা হবে না৷ তখন আমাদের নতুন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে৷ তারও প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা৷''
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনুদান অনুমোদন প্রক্রিয়াসহ এনজিও খাতের অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে৷ ‘‘আগের সরকার এনজিওর বিদেশি ফান্ড ছাড়ের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলো, সেগুলো এখন আর নেই৷ আর আমরা নতুন নতুন ডোনার খুঁজছি৷ যে-কোনো পরিবর্তন নতুন সুযোগও তৈরি করে৷ আমরা সেটাও নেয়ার চেষ্টা করছি,'' বলেন জসীম উদ্দিন৷
এদিকে, অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘‘এনজিও খাতে যে অনুদান প্রবাহ বাড়ার কথা বলা হচ্ছে সেটা বুঝতে আরো সময় লাগবে৷ কী কারণে বাড়ছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে এর মাধ্যমে ওই খাতে যে নতুন চাকরির সুযোগ হবে তার জন্য দরকার নতুন প্রকল্প৷ আমাদের কাছে নতুন প্রকল্পের কোনো তথ্য এখনো নেই৷''
বিজ্ঞাপন
চাকরি হারানোদের কী অবস্থা?
ইউএসএআইডির অনুদান কমে যাওয়ায়কয়েক হাজার লোক চাকরি হারান৷ এই সংখ্যা ২০ হাজারের কম হবে না বলে মনে করছে এনজিওদের সংগঠন এডাব (এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ)৷ তবে এসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (এইউডিপি) বলছে এই সংখ্যা ৫০ হাজার৷
এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘‘আমরা তখনই বলেছিলাম ইউএসএআইডির প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ায় যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের যেন এনজিওগুলো চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়৷ এখন যেহেতু নতুন ডোনার আসছে, ফান্ড বাড়ছে তাদের একটি অংশ হয়তোবা চাকরি পেয়েছেন৷ আমাদের কাছে পরিসংখ্যান নেই৷''
এডাব-এর পরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘‘যারা ইউএসএআইডির প্রকল্পে কাজ করতেন তারা দক্ষ৷ তারা সরাসরি নতুন কোনো এনজিওতে যুক্ত না হলেও তাদের একটি অংশ অন্যান্য এনজিওতে পরামর্শক বা বাইরে থেকে সেবা দিচ্ছেন৷''
এদিকে বেকার হয়ে যাওয়া এনজিও কর্মীদের ব্যাপারে এডাবের জসিম উদ্দীন বলেন, ‘‘ফান্ড বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুদান ব্যবহারের দক্ষতা বেড়েছে৷ আগে ফান্ড ছাড় করতে খরচ করতে হতো৷ এখন আর সেটা করতে হয় না৷ এখন ১০০ টাকার পুরোটাই পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায়৷ নতুন প্রজেক্টও হচ্ছে৷ ফলে নতুন কাজের সুযোগ তো কিছু হচ্ছে৷''
তবে এসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (এইউডিপি)-এর আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এনজিও ব্যুরো এবং বিডার কাছে স্মারক লিপি দিয়েছি৷ কিন্তু আমাদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ বা সাড়া দেখতে পাচ্ছি না৷ সরকারি কাজে, নানা প্রকল্পেও সরকার চাইলে আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে৷'' ‘‘এখন যেটা হয়েছে অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন৷ কেউ হয়তোবা একটা বুটিক শপ দিয়েছেন৷ কেউ গ্রামে চলে গিয়েছেন৷ তাদেরকে তো টিকে থাকতে হবে৷ পরিবার পরিজন নিয়ে তো বাঁচতে হবে৷ আমরা এনজিও ব্যুরোর বাইরে আইএনজিওর সাথেও কথা বলেছি৷ আমি তাদের সাথে বৈঠকও করেছি৷ তবে কেউই আমাদের জন্য তেমন কিছু করছে না,'' বলেন তিনি৷
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি
চীনের পরই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারতের কাছ থেকে৷ ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি সেই তুলনায় অনেক কম হলেও চলতি অর্থবছরে তা বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক টানাপোড়েনে সেই ধারাবাহিকতা কি ধরে রাখা যাবে?
ছবি: Amlan Biswas/Pacific Press/picture alliance
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ (জুলাই-জুন) অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে৷ এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ কম৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭১ কোটি ডলার৷ গত বছরের জুলাই থেকে এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৫১.৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে৷ আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩১.৭ কোটি ডলার৷ ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ৷
ছবি: BM Ahmed
বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি
বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি আমদানি করে৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯৪৯ কোটি ডলার৷ বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, এটি তার ১৪ দশমিক তিন শতাংশ৷ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) বাংলাদেশে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১০৬ কোটি ডলার৷
ছবি: BM Ahmed
বাংলাদেশের ১০১২টি, ভারতের ৫৬২০টি
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিশাল ব্যবধান রয়েছে পণ্যের পসরাতেও৷ বাণিজ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের পণ্যের সম্ভার পাঁচগুণ বেশি৷ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকুইটি ফাউন্ডেশন’ জানাচ্ছে ভারত বাংলাদেশ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ১০১২ ধরনের পণ্য আমদানি করেছে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারত রপ্তানি করেছে ৫ হাজার ৬২০ রকমের পণ্য৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাংলাদেশের পোশাক, ভারতের তুলা
বাংলাদেশের প্রধাণ রপ্তানিপণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, মাছ, হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য৷ তবে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ কোটি ডলার৷ ভারত থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে তুলা৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তুলা আমদানির পরিমাণ ছিল ২৩৬.৮ কোটি ডলার, যা মোট আমদানির এক চতুর্থাংশ৷ এছাড়াও আছে খনিজ, পশুখাদ্য, পরমাণু রিয়্যাক্টর, বয়লার ও মেশিনারি, সবজি ইত্যাদিও৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
অভ্যুত্থানের পরের চিত্র
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পরে দুই দেশের বাণিজ্য তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি৷ গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে ভারত বাংলাদেশে ৬৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের একই সময়ে ছিল ৬৬৯ কোটি ডলার৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে গত আগস্ট-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১২২ কোটি ডলার, যা আগের একই সময়ে ছিল ১০৫ কোটি ডলার৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দুই দেশের ট্রানজিট সুবিধা
দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশ আরেক দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা পাবে৷৷ ২০১৬ সালে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে অনুমতি দেয়া হয়৷ ২০২০ সালে ভারতের সমুদ্র এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে বাণিজ্যের সুবিধা দেয় দিল্লি৷
ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images
তৃতীয় দেশের সুবিধা বাতিল ভারতের
২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল ভারত৷ বলা হয়েছিল, ভারতের সমুদ্র এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ৷ গত ৮ এপ্রিল সেই সুযোগ বাতিল করে ভারত৷ তবে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালু হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ চারটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়৷ এরপর ভারত বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে৷ ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ তবে বাংলাদেশ এই বিষয়ে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়েছে৷