বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা পর্যালোচনা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩তারা বলছেন, মার্কিন চাপের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
আরো বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে অংশগ্রণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে র্যাব পুলিশের কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতি ঘোষণার পর সম্প্রতি (১৪ সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাস করা হয়। প্রস্তাবে আগামী বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও মুক্ত পরিবেশে হয় তার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেয়া, মানবাধিকার কর্মী ও সংখ্যালঘুদের স্বাভাবিক জীবনের পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়। সেখানে মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খানকে কারাদণ্ড দেয়ায় নিন্দাও জানানো হয়।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই আমাদের বড় পার্টনার। তাই তারা চাইলে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। আজ বিশ্বব্যাংক ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটারি সাপোর্ট দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা যদি তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা না করি, তাহলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেন আর আইএমএফ, কারোই লোন রিলিজ না-ও হতে পারে। তাদেরকে অ্যাড্রেস করতে হবে।”
তার কথা, "সার্বিক পরিস্থিতি এটা ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা আরো আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুসারী অনেক। তারা একই নীতি অনুসরণ করবে। আমরা যদি মনে করি, যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, সেটা ঠিক না। আমাদের আগেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সেটা না হলে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। ”
তিনি আরো বলেন, "তারা যা বলছেন, তাদের যৌক্তিক কথাগুলো আমরা যদি বিবেচনায় না নিই, তাহলে বাইরের বিশ্বে আমাদের নিন্দিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সবাই আমাদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলবে।”
আর সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবির বলেন, "যৌক্তিকভাবেই তাদের কথাগুলো আমরা ভেবে দেখতে পারি। তাদের কথা যে আমাদের মানতে হবে, তা নয়। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। এখানে অর্থনীতি আছে, রাজনীতি আছে। সব দিক দেখেই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। ”
"কোনো একটা নির্বাচন হয়ে গেলেই যে সব পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, তা নয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবেই ফলো করে। আগের নির্বাচনগুলো গ্রহণযোগ্য হয়নি বলেই তো তারা এখন কথা বলছেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের স্বার্থেই এখন সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার,” বলেন এই কূটনীতিক।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, "ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে, সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিষয়গুলো আমলে নেয়া দরকার। কয়েক বছর ধরেই তারা আমাদের সতর্ক-বার্তা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কর্ম পরিবেশ, শ্রমিকের অধিকার- এসব বিষয়ে। ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের তিন বছর পরও জিএসপি সুবিধা পাবো। এখন তারা নানা অধিকার , বাক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলছে। এখন তারা যদি এগুলো ইউরোপীয় কমিশনে নিয়ে যায়, তাহলে জিএসপি সাসপেনশনের একটা ঝুঁকি আছে।”
তার কথা, "আমরা শুনতে পাই, আইএমফফের ঋণ পেতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে। কারণ, পাকিস্তান তাদের অনুরোধে ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। তাহলে তাদের একটা প্রভাব বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর উপরে আছে। সেটাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। তবে আইএএফ যে শর্ত দিয়েছে, তা আমরা কি পুরণ করতে পেরেছি? রিজার্ভ কি যথেষ্ট? বাংক খাতে সংস্কার, রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা বাড়ানো- এসব রয়েছে। তবে আমার মনে হয়, আমাদের নীতিনির্ধারকরা বুঝাতে সক্ষম হবেন যে, বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার ফল পেতে সময় লাগবে। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পেতে সমস্যা হবে বলে মনে করি না।”