বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মার্চ ২০২০
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের দিকেই যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ তাদের মতে, করোনা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকদের কথা, একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে করোনা আক্রান্তরা কার সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তা আর এখন নির্ণয় করা যাচ্ছে না, যা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের লক্ষণ৷ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) অল্প কিছু মানুষকে পরীক্ষার আওতায় নিচ্ছেন৷ বড় অংশটিই এর বাইরে থেকে যাচ্ছে৷ তাদের সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা গেলে বাস্তব পরিস্থতি বোঝা যেতো৷ নো টেস্ট, নো করোনা- এই নীতি কোনেভাবেই ঠিক না৷ সংবাদমাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশে করোনা কমিউিনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে পৌছে গেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ তারা বলেন্, সরকারের সাঠিক নীতির অভাবে লাখ লাখ লোক যে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেলেন, তাতে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় বলা মুশকিল৷
ডা. জাহিদুর রহমান খান
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর জানায় আইইডিসিআর৷ বুধবার পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫ জনে৷ আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৯ জন৷ গত ৪৮ ঘন্টায় করোনায় নতুন কেউ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হননি৷
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান খান বলেন, ‘‘এখানেই আসলে ভুল করা হচ্ছে৷ কারণ, তারা যে বলছেন করোনায় নতুন কেউ আক্রান্ত হননি, কিভাবে বলছেন? তারা কতজনকে পরীক্ষা করছেন? অধিকাংশ সন্দেহজনকেই তো পরীক্ষা করা হচ্ছে না৷ আপনি পরীক্ষা না করলে কিভাবে বুঝবেন আক্রান্ত হয়নি? এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ মানুষকে পরীক্ষা করা দরকার৷ কিন্তু পরীক্ষা করা হচ্ছে ৭০-৮০ জনকে৷ তাহলে তো বলা যায় পরীক্ষা না করে করোনা গোপন করা হচ্ছে৷’’
আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বুধবারের ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এই পরীক্ষা শুরু হয় গত ২১ জানুয়ারি থেকে৷ এই সময়ে করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে চার লাখ ৪৯ হাজার৷ গত ২৪ ঘন্টায় টেলিফোন কল এসেছে ৪৮ হাজার৷ এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় অতি সামান্যই পরীক্ষার আওতায় আসছে৷
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এরই মধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের লক্ষণ পেয়েছে৷ ঢাকার টোলারবাগে যিনি মারা গেছেন, তিনি বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি৷ আইইডিসিআর বলছে, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গেছেন, তারা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন৷ এই তথ্য সঠিক নয়৷ এর বাইরেও আক্রান্ত হওয়ার বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে৷ আর এটাই হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন৷’’ ডা, জাহিদ বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরে আমরা দেখেছি হোম কোয়ারান্টিনে থাকা অকস্থায় মারা গেছেন৷ মৃত্যুর আগে তার পরীক্ষাও হয়নি৷ এটা থেকেই বাস্তব পরিস্থতি বোঝা যায়৷’’
আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিজেও এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ে বিভ্রান্ত৷ তিনি বুধবারের ব্রিফিংয়ে একবার বলেছেন, ‘‘সীমিত পর্যায়ে কমিমিউিনিটি ট্রান্সশন হচ্ছে৷’’ আরেক বার বলেছেন, ‘‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তা এখনো বলা যাবে না৷’’
ডা. লেলিন চৌধুরী
ডা. জাহিদুর রহমান মনে করেন পরিকল্পনার অভাবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘গণপরিবহণ বন্ধ না করেই তিন দিন আগে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো৷ গণপরিবহণ বন্ধ হবে ২৬ মার্চ থেকে৷ তাই সাধারণ ছুটির যে উদ্দেশ্য মানুষকে ঘরে রাখা, তা ব্যর্থ হলো৷ লাখ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে চলে গেল৷ ঢাকায়ই আক্রান্ত বেশি৷ এখন তাদের একটি অংশ যদি করোনা ভাইরাস নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে পরিস্থিতি কী হবে?’’
সরকার দু-একটি এলাকা লকডাউন করেছে৷ পুরো ঢাকাকে লক ডাউন করেনি৷ এর মধ্যে মানুষকে আবার রাস্তায় চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে৷ আর্মি এবং পুলিশ পেটাচ্ছে৷ এ প্রসঙ্গে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে সরকারের নির্দেশনা পরিস্কার নয়৷ সরকার কী চায়, তা পরিস্কার করা হচ্ছে না৷ প্রয়োজন লকডাউন, সেখানে লকডাউন করা হচ্ছে না৷ ফলে খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আমরা৷’’
করেনা পরিস্থতিকে সামাল দিতে গিয়ে রোগের সামনে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে, পেছনে পেছনে দৌড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন ডা. লেলিন চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ‘‘ছুটি দিতে হবে বাড়িতে থাকার জন্য৷ কিন্তু পরিকলপনা না থাকায় আগে গণপরিবহণ বন্ধ করা হলো না৷ ফলে সবাই আনন্দ করে বাড়ি চলে গেলেন৷’’ তার মতে, ‘‘ব্যবস্থা না নিয়ে, করোনা পরীক্ষা না করে আমরা এক ধংসাত্মক আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি৷’’
তারা দু'জন মনে করেন, হোম কোয়ারান্টিন প্রথম থেকেই কার্যকর করা হয়নি৷ কিন্তু এটা শুরু থেকেই দরকার ছিল৷ আর এখনো তার কোনো মনিটরিং নেই৷ ফলে ২১ জানুয়ারি থেকে বিদেশফেরতদের মাত্র শতকরা ৮ ভাগ হোম কোয়ারান্টিনে গেছেন৷
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷