‘কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে’
৩০ মে ২০১৪ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন আলব্রেশট কনসে৷ বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করা সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷
বিদায়ী জার্মানির রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম শাহেদুজ্জামান৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় আরো এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা না গেলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়বে৷’’ তিনি বলেন, দেশের কয়েকটি জায়গা নয়, অধিকাংশ এলাকাতেই সরকারের অনুমান নির্ভর নিয়ন্ত্রণ আছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে বর্তমান সরকার৷
জার্মানির বিদায়ী রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন ও ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘ঢাকার অদূরেই অত্যন্ত ভয়াবহ কিছু ঘটনা আমরা লক্ষ করেছি৷ তাই দেশের জনগণের স্বার্থে সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি এবং এ মুহূর্তে তা বাংলাদেশের জন্য একটা চ্যালেঞ্জই বটে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার রাতারাতি সমাধানের জন্য সারা দেশে সরকারের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন৷ কারণ, বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে৷’’
আলব্রেশট কনসে বলেন, লোকজন যদি বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়, এ জন্য কিছু করাটা রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে৷ সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে৷ কিন্তু আগামী মাসগুলোতে এবং বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, তার ধরন অতীতের চেয়ে আলাদা বলে মন্তব্য করেন বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূত৷
তিনি জানান, স্পিকার তাঁকে এটা বলে আশ্বস্ত করেছেন যে শেখ হাসিনার সরকার সব নাগরিকের জানমাল রক্ষায় আইনের আওতাতেই দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে৷ গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে ইউরোপের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি৷ তবে অতীতের চেয়ে ভবিষ্যৎ বেশি গুরুত্বপূর্ণ – এটাই আমার উত্তরসূরিকে বলে যাব৷ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকবে জার্মানি৷’’
অধ্যাপক এম শাহেদুজ্জামান বলেন, ‘‘জার্মানির রাষ্ট্রদূত কিন্তু হুট করেই কথাটা বলেননি৷ তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করে যে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা থেকেই কথাটা বলেছেন৷ তাঁর পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে৷’’
তিনি বলেন, গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছে – তা ঠিকই ছিল৷ কারণ ঐ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি৷ তাই ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের কোনো বৈধতা থাকতে পারে না৷ এছাড়া এ ধরনের সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে সামান্যই৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বল প্রয়োগের মাধ্যমে বেছে বেছে মানুষকে বিচার করছে ও শাস্তি দিচ্ছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই৷’’ তিনি বর্তমান সময়কে দেশ স্বাধীনের আগের (১৯৭১-এর পূর্ববর্তী) সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন৷ ঐ সময় যেমন কোনো নির্বাচিত সরকার ছিল না, জোর করেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় টিকে থাকতে যা যা করেছিল – বর্তমান সরকারও তাই তাই করছে৷ আসলে এই অবস্থা থেকে মানুষের মুক্তি দরকার৷ তাই দ্রুত সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিলেই সব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷