বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলাচল উপযোগী বিশেষ এক অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কাজ করছেন গবেষকরা৷ তিন চাকার এবং সরু রাস্তায় চলাচলের উপযোগী এসব সৌরশক্তি চালিত ভ্যান অ্যাম্বুলেন্স এ বছরই রাস্তায় নামতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
তিন চাকার ভ্যানের উপরে তৈরি হলেও অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকবে৷ তবে সেটি পুরোটাই চলবে সৌরশক্তিতে৷ এমনকি রাতের বেলা চলার জন্যও প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেবে একটি ব্যাটারি, যা দিনের বেলা চার্জ হবে সৌরশক্তিতে৷ ফলে বিদ্যুৎ নেই এমন অঞ্চলেও ব্যবহার করা যাবে এসব অ্যাম্বুলেন্স৷ মোটের উপর এবড়েথেবড়ো মেঠো পথ কিংবা পিচঢালা রাস্তা - সব জায়গাতেই চলাচলের উপযোগী এসব অ্যাম্বুলেন্স৷
বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির সমন্বিত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে বিশেষ এই অ্যাম্বুলেন্স৷ ইতোমধ্যে একটি নমুনা পরীক্ষাও করা হয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাস্তায় নামানো যাবে সেগুলো৷ এই প্রকল্পের প্রধান, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম আব্দুল মালেক আজাদ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্লিনিকগুলোর জন্য কম খরচের এসব অ্যাম্বুলেন্স ভালো উপায় হতে পার বলে আমি মনে করি৷ তাছাড়া সৌরশক্তি ব্যবহারেরর মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রাত্যহিক খরচ কমাতে এবং পরিবেশ বাঁচাতে পারি৷''
দেশেই তৈরি হচ্ছে সোলার প্যানেল
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে বলে জানান বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি জনপ্রিয় করার অন্যতম ব্যক্তি দীপাল বড়ুয়া৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
দাম কমছে
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে বলে জানান ‘বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন’ বা বিএসআরইএ-র সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
দেশেই তৈরি হচ্ছে
বড়ুয়া বলেন, সোলার প্যানেল সাধারণত চীন থেকে আমদানি করা হয়৷ তবে এখন দেশেও এটা তৈরি হচ্ছে৷ এছাড়া এলইডি অ্যাসেম্বলিং, চার্জ কন্ট্রোলার তৈরির মতো কাজ করতে সমর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এখন কম খরচে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে পারছে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
মাসে ৮০ হাজার
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৮০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বড়ুয়া৷ ২০১২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ হাজার৷
ছবি: BGEF
সবার জন্য বিদ্যুৎ
বড়ুয়ার আশা আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাড়িতে সৌরশক্তি পৌঁছে যাবে৷ যারা এখনো বিদ্যুৎ বঞ্চিত তাদের ঘরেও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে৷ কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের আর্থিক সহায়তায় ছোট-বড় প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান এ খাতে কাজ করছে৷
ছবি: BGEF
সোলার হোম সিস্টেম
পাঁচজনের একটা পরিবারের জন্য ৪০-৫০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম হলেই চলে বলে জানান বড়ুয়া৷ এই সিস্টেম দিয়ে ঘরে লাইটের ব্যবস্থা করা, টিভি দেখা ও মোবাইল চার্জ করা যায়৷ তবে ফ্যান চালাতে হলে ৮৫ বা ১০০ ওয়াটে যেতে হবে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
খরচ কেমন?
দীপাল বড়ুয়া বলেন, বিশ বছরের জন্য ২০ ওয়াটের একটি প্যানেল নিলে, সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাটারি, তিন বছরের জন্য চার্জ কন্ট্রোলার আর এলইডি লাইট ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য, এমন হলে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে৷ তবে ক্রেতাকে টাকাটা একসঙ্গে দিতে হয় না৷ ১০ বা ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকি টাকাটা কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে তিন বছর পর আর কোনো টাকা লাগবে না৷
ছবি: BGEF
বুদ্ধি করে ব্যবহারে লাভ
ব্যাটারির ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি থাকলেও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করলে ৬-৭ বছরও চলে যায় বলে জানান বড়ুয়া৷ এরপর ব্যাটারিটা বদলে নতুন ব্যাটারি নেয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে আগের ব্যাটারির খরচের এক-তৃতীয়াংশ টাকা ফেরত দেয়া হয়৷ ছবিতে নারীদের সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: BGEF
গ্রিডে সরবরাহের সুযোগ
জার্মানিতে নিজের ছাদে বসানো সৌর প্যানেল থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ রয়েছে৷ এর ফলে বাড়ির মালিক নিজে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি বাড়িত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বেচে অর্থ উপার্জন করতে পারে৷ বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিএসআরইএ, জানান দীপাল বড়ুয়া৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
8 ছবি1 | 8
একেকটি সৌরশক্তি চালিত অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে খরচ পড়বে ১,৯০০ থেকে ২,৫০০ মার্কিন ডলার৷ যেখানে প্রচলিত অ্যাম্বুলেন্সের দাম কমপক্ষে ৩০,০০০ মার্কিন ডলার৷ আজাদ জানিয়েছেন, এ রকম অ্যাম্বুলেন্স বিশ্বের আরো কোনো দেশে তৈরি হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই৷ তবে অস্ট্রেলিয়ায় সৌরশক্তি চালিত গাড়ির রেস হয়, সেখান থেকেই তারা আইডিয়াটা পেয়েছেন৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ রিকশাভ্যানে করে রোগী পরিবহন করা হয়৷ অস্বাস্থ্যকর সেই পন্থায় অনেক সময় রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান৷ নতুন এই অ্যাম্বুলেন্স ভ্যান সেক্ষেত্রে জীবন রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ একেকটি অ্যাম্বুলেন্সে তিন জনকে বহন করা যাবে৷ আর সেগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫-২০ কিলোমিটার গতিতে চালানো যাবে৷