বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন্সের ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত হওয়ায় দেশটির আইনপ্রণেতারা ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইন্সের সেনেটের প্রেসিডেন্ট একুইলিনো পিমেন্টেল সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা যে বিলের খসড়া তৈরি করেছেন তাতে অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইনের ফাঁক-ফোকরগুলো বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে৷ আগামী মে মাসে বিলটি অনুমোদন পেতে পারে৷ এরপর এই বছরের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে দিয়ে বিলটি স্বাক্ষর করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
আইনে পরিবর্তন আসলে ক্যাসিনোগুলোকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কোনো বাজির দর ৬০ হাজার ডলার বা তার বেশি ধরা হলে সেই তথ্য দেশটির অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং সংস্থাকে জানাতে হবে৷ এছাড়া ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষকে ক্রেতাদের পরিচয় সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য জানতে হবে৷
পিমেন্টেল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ নিয়ে তদন্তের প্রেক্ষিতেই নতুন বিল আনা হচ্ছে৷ বর্তমানে বলবৎ থাকা অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইন ও কঠোর ব্যাংক সিক্রেসি আইনের কারণে চুরির অর্থ কোথায়, কীভাবে, কার সাহায্যে খরচ হয়েছে তা খুঁজে পাওয়ার কাজটি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷
নিউ ইয়র্কের ফেডারাল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মাত্র এক পঞ্চমাংশ অর্থ এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা গেছে৷
উল্লেখ্য, এশিয়ার মধ্যে ফিলিপাইন্সে ক্যাসিনোর বড় বাজার রয়েছে৷ গত বছর এই খাত থেকে প্রায় ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে৷
ক্যাসিনোর মালিকদের প্রভাবের কারণে এতদিন প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর অনুমোদন নেয়া যায়নি৷ তবে প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মাদক পাচারকারীদের অর্থের প্রবাহ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের কাজ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷ এই ব্যাপারটিও আইনে সংশোধনী আনার বিষয়টি সহজ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স)
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার পাঁচ কৌশল
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস গ্রুপ’-এর পরিচালক আওগুস্তো লোপেজ-কার্লোস এক ব্লগ পোস্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার কয়েকটি কৌশল আলোচনা করেছেন৷ ছবিঘরে থাকছে সে’সব কথা৷
ছবি: Getty Images
সরকারি চাকুরেদের জন্য ভালো বেতন
যাঁরা সরকারি চাকরি করেন তাঁদের বেতন যদি খুব কম হয়, তাহলে আয় বাড়াতে তাঁরা ‘অনানুষ্ঠানিক’ পথ অবলম্বন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকুরেদের কম বেতন ও দুর্নীতির মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷
ছবি: DW
অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা
যে সমস্ত দেশের নাগরিকদের সরকারি কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সুযোগ আছে সেসব দেশে দুর্নীতি কম হয়৷ অর্থাৎ যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষিতের হার বেশি এবং সক্রিয় সুশীল সমাজ রয়েছে সেখানে দুর্নীতির হার কম৷ কেননা এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, সরকারের নীতি নিয়ে আলোচনা করা যায়৷
ছবি: Colourbox/Hin255
লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো
বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদন বলছে, যে সব দেশে ব্যবসা শুরু করতে, সম্পত্তি নিবন্ধন করতে, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় জড়িত হতে নানা ধরনের সার্টিফিকেট, আইন, লাইসেন্স ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সে’সব দেশে দুর্নীতি বেশি হয়৷ তাই বিশ্বব্যাংকের এক গবেষক দুর্নীতির জন্ম দিতে পারে এমন আইনকানুন বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: DW
ভর্তুকি নয়
জ্বালানি খাতে ভর্তুকির নানা সমস্যা আছে৷ প্রায়ই এর সুবিধাভোগী হন ধনীরা৷ এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে কেনা জ্বালানি চোরাচালানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন অনেকে৷ তাই ভর্তুকির মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির চেয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষদের অর্থ সহায়তা দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: DW/W.Jantschits
স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ যত কমানো যাবে, দুর্নীতি কমানো ততই সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্নক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া যেতে পারে৷ সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে টেন্ডার আহ্বানের মতো বিষয়াদি চালু করলে দুর্নীতির সুযোগ কমবে৷