1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিদেশিরা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ৷ এরপরও শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের জন্য দক্ষকর্মী আনতে হয় বিদেশ থেকে৷

Bangladesh Dhaka Quota Protest auf einen Blick
ছবি: bdnews24.com

সংখ্যায় ঠিক কতজন বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ তবে বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জানান, ‘‘আমাদের দেশ থেকে প্রতি বছর ৫-৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স যায় বিদেশে৷ আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে ১৬ বিলিয়ন ডলার৷ এ থেকে যে ধারণা পাওয়া যায় তাহলো বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত বিদেশিদের সংখ্যা কম নয়৷''

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও নানা ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে টেকনিক্যাল পদগুলোতে অনেক বিদেশি কাজ করেন৷ এমনকি আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব রাখার জন্যেও বিদেশিদের চাকরি দেয়া হয়৷ পোশাক খাতে ডিজাইনারদের বড় একটি অংশ বিদেশি, বিশেষ করে ভারতের৷ ফলে বাংলাদেশে চাকরির যে বাজার আছে তার সবখানে কাজ পাচ্ছে না বাংলাদেশের তরুনরা৷

পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর উন নবী বলেন, ‘‘আমাদের পোশাক খাতের যে আয় তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আবার ভারতে চলে যায়৷ কারণ এখানে, টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনার থেকে শুরু করে নানা খাতে ভারতীয় দক্ষ লোকজন কাজ করে৷ আমাদের দক্ষতা না থাকায় আমাদেরই চাকরির বাজার এখন বিদেশিদের দখলে৷''

ড. এ কে এম নূর উন নবী

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশের চাকরির বাজারে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ চাকরিপ্রার্থী প্রবেশ করে৷ তাদের মধ্যে ১০-১১ লাখের চাকরির সংস্থান হয়৷ বাকিরা বেকার থাকেন৷ একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যান৷ সবচেয়ে বিপাকে শিক্ষিতরা৷ বেকারদের বড় অংশই তারা৷ কারণ তাদের চাহিদামত পর্যাপ্ত কাজ নেই চাকরির বাজারে৷

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও এর হিসাবে বর্তমানে কর্মসংস্থানের বাজারে সরকারি চাকরি যোগান মাত্র তিন দশমিক দুই শতাংশ যোগান দিচ্ছে৷ তবে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন সরকারের অনেক প্রকল্প আছে সেখানেও অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হয়৷ সব মিলিয়ে সরকারি খাতে চাকরি মোট কর্মসংস্থান ১০ শতাংশের কম হবে৷

তরুণদের মধ্যে সরকারি চাকরির আকর্ষণ বেশি৷ নতুন পে স্কেলের কারণে বেতন বেড়েছে, আছে আরো অনেক সুবিধা ও নিশ্চয়তা৷ তবে ড. নাজনীন মনে করেন সরকারি চাকরি দিয়ে বিশাল বেকারত্বের ভার কমানো যাবে না৷ এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উপরই নির্ভর করতে হবে৷ সেই সঙ্গে দেশের বাইরে চাকরির বাজার ধরতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে৷ তাঁর মতে, ‘‘বাজার বিবেচনা করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করলে আমাদের দেশের যেসব কাজ বিদেশিরা করছেন সেখানে বাংলাদেশের তরুণেরা কাজ পাবেন৷ বিদেশেও কাজের বাজার তৈরি হবে৷''

বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে এখন ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে৷ এইসব কেন্দ্রে ভাষাসহ দেশের বাইরে কাজ পাওয়ার জন্য চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে ২০১৮ সালে এই সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬৮ হাজার তরুন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ সংখ্যাটা বড় মনে হলেও এর মধ্যে ৫০ হাজারই স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন কোর্স করেছেন যা ঠিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বলা যায় না৷

সার্বিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও কর্মমুখী নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ বর্তমানে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫টি ৷ এরমধ্যে ১০ টি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়৷ এর বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে ১০৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এর কোনোটিই তেমন বিশেষায়িত নয়৷ তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যার মধ্যে একটি বিশেষায়িত৷ 

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

ড নূর উন নবী বলেন, ‘‘আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সময়ে আছি৷ মোট জনসংখ্যার ৫৮ ভাগেরও বেশি কর্মক্ষম, নির্ভরশীল জনসংখ্যা কম৷ জনসংখ্যার এই সুসময়কে আমাদের ব্যবহার করতে হবে৷ কারণ একটি জাতির জীবনে তা একবারই আসে, ৩০-৩৫ বছর স্থায়ী হয়৷ এই সময়ে দেশকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়৷ এরপর নির্ভরশীল জনসংখ্যা বাড়তে থাকে৷ এরমধ্যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলে তখন আর কোনো সমস্যা হয় না৷ তাই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজের উপযুক্ত করতে হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে৷ প্রচলিত ঘরানার এই শিক্ষা দিয়ে আমরা সুসময়কে ব্যবহার করতে পারব না৷''

বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরি বাজারে গত এক বছর ধরে মন্দা চলছে৷ সবচেয়ে বড় চাকরিদাতা ওয়েবসাইট বিডিজবস ডটকমে প্রতিবছর গড়ে বেসরকারি চাকরির কল আসে ৪০ হাজার৷ কিন্তু ২০১৮ সালে তা কমে ৩০ হাজারে নেমে এসেছে৷ তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকার ১০ লাখ কর্মসংস্থানের কথা বললেও এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি হয়নি৷ তৈরি পোশাক খাতই এখনো কর্মসংস্থানের শীর্ষে রয়েছে৷ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের শিল্প বিনিয়োগে মন্দা চলছে৷ কিন্তু শিল্প ছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব নয়৷ তাই বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷''

সেবাখাত এখন কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা পালন করছে৷ কিন্তু সেখানেও দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে৷ যার কারণে এই খাতেও বিদেশিরা কাজ করছেন বলে জানান ড. নাজনীন আহমেদ৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ