বাংলাদেশের চালে ক্ষতিকর ক্যাডমিয়াম
১১ জুন ২০১৩যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংগঠন অ্যামেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, গবেষণা দলে ১২টি দেশের বিজ্ঞানীরা অংশ নেন৷ বাংলাদেশের চাল নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব ছিল তাঁর৷ এই গবেষণা প্রতিবেদন গত মাসে প্রকাশ করা হয়েছে৷
তিনি জানান, গবেষণায় বাংলাদেশের চালে অধিক পরিমাণ ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে৷ এর পরিমাণ ০.০১ পিপিএম থেকে ০.৩ পিপিএম পর্যন্ত৷ বাংলাদেশের পরই শ্রীলঙ্কার চালে ক্যাডমিয়াম বেশি৷ এছাড়া কম্বোডিয়া, ঘানা, ভারত, নেপাল, ইটালি, জাপান, স্পেন, থাইল্যান্ড. যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের চালেও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে৷
ড. রফিকুল ইসলাম আরও জানান, জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগই ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ৷ এছাড়া বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ট্যানারিসহ নানা শিল্প কারখানার বর্জ্য নদী বা জলাশয়ে গিয়ে পানি দূষিত করছে৷ আর সেই পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করায় চালে ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, শুধু চাল নয় – শাকসবজিতেও নদীর পানির ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে৷ ভেজাল টিএসপি সার এবং শিল্প, বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্যে উচ্চমাত্রার ক্যাডমিয়াম রয়েছে৷ আর বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ টিএসপি সার ভেজাল৷
তিনি জানান, ক্যাডমিয়াম হল ক্ষতিকারক হেভি মেটাল৷ এটি শরীরে দীর্ঘদিন জমা হতে থাকলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় মানব দেহে ক্যানসার এবং কিডনি আক্রান্ত হতে পারে৷
সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইট লিটু ডয়চে ভেলেকে জানান, ক্যাডমিয়াম শরীরের ফুসফুস, কিডনি এবং হাড় ক্ষতিগ্রস্ত করে৷ এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, কিডনি অকার্যকর এবং হাড় ক্ষয় হয়ে যায়৷ এছাড়া ক্যানসার এবং পুরষত্বহীনতার কারণ হতে পারে ক্যাডমিয়াম৷
ড. এম রফিকুল ইসলাম জানান, এই ক্যাডমিয়াম শুধু চালে নয়, ভূগর্ভস্থ পানিতেও ছড়িয়ে পড়ছে৷ এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে৷ আর ক্যাডমিয়ামের কারণে বুড়িগঙ্গাসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু নদী এবং জলাশয় মাছ, জলজ প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদ শূন্য হয়ে পড়ছে৷
তিনি মনে করেন, চালকে ক্যাডমিয়াম মুক্ত রাখতে হলে জমিতে ভেজাল টিএসপি সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে৷ শিল্প কারখানায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে, যাতে দুষিত বর্জ্য নদী এবং জলাশয়ে পরতে না পারে৷